![]() কবিতা
অপার্থিব অলৌকিক
আইভি রহমান
|
![]() সেই দেয়ালটা - যাতে তিনি খুব একা থাকার সময়ে হয়ত আলতো হাত বুলিয়েছিলেন সেই বাড়ীটা – যাতে এক আশ্চর্য সুন্দর স্বপ্নকিংশুক বুনেছিলেন জাতির বাতিঘর সেই দরাজ মায়াময় অলৌকিক হিরণ্ময় কণ্ঠস্বর- যা দিয়ে তিনি আমাকে তোমাকে আমাদেরকে ডেকেছিলেন- বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম - এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ আমাদের স্বাধীনতা যখন জগতের বিস্ময়সীমা অতিক্রান্ত করেছে আমাদের অর্জন যখন আমাদের আমিত্বকে আলিঙ্গন করেছে সেই স্বপ্ন সভ্যতায় যখন চমৎকার সুন্দর এক রঙ ধরেছে – ঠিক তখনই আমাদের স্তম্ভিত সত্ত্বা মুখ থুবড়ে পড়ে, চোখের বারান্দায় শুয়ে থাকে এক দীর্ঘদেহী ভোর, অবাক পৃথিবী দেখে জানে এবং বুঝে- তিনি কিছু জানতে বা বুঝতে পারার আগেই- আমাদের চোখের সামনে – সেই সিঁড়িটা অবর্ণনীয় কুৎসিত কলংক দাগে কালো হয়েছে সেই দেয়ালটা অসহায় মুহূর্তে কি নির্মম রক্ত বন্যায় গুমোট কান্নায় ভেসে গেছে আচানক সেই বাড়িটা ঝুপ করে নিভিয়েছে স্বপ্নের সমস্ত ঝাড়বাতি- গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে গেছিল সেই সিঁড়ি দেয়াল আর বাড়ির সমস্ত আনাচ-কানাচ – তারপর অনেক অনেক দিন পেরিয়েছে – আমরা স্থির হয়েছি- ধাতস্থ হয়েছি আমরা সবল হয়েছি এবং মাথা উঁচু করে যখন দাঁড়াতে শিখে গেছি – সেইখনে কোন এক দিন- আমি সেই সিঁড়িটার কাছে গিয়ে মাথা নত করে দাঁড়ালাম- আমার গালে্র উপর তখন তপ্ত লাল আবীর- আমার চোখের কোণে তখন তীরের তীব্র ফলা জমিয়েছে অজস্র হিরের দানা – সেই মুহূর্তে- আমাকে চমকে দিয়ে কেউ বলে উঠলো - উঠে এসো সিঁড়ি বেয়ে দেখে যাও আর নিয়ে যাও তাঁর রক্তমাখা ভালবাসা স্পর্শ আমি সেদিন এক ঘোরের ভেতর দিয়ে হেঁটে এসেছিলাম –সেই সিঁড়ির প্রতিটা ধাপ, দেয়ালে হাত বুলিয়েছিলাম নিজের অজান্তেই হাতের তালু ভিজেছিল তাঁর রক্তজবা লালে মগজের পরতে পরতে তুলে এনেছিলাম সবটুকু দেখা-অদেখা। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত - সেই সিঁড়ি – সেই দেয়াল- সেই বাড়ি- সেই কণ্ঠস্বর –আরো দৃঢ়তায় শুধু আমার একান্তই আমার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি মাঝে মাঝেই তাঁর কন্ঠে কন্ঠ মিলাই – আমি অবাক হয়ে দেখি, রাতের আকাশের সবগুলো তারা – চাঁদের রুপোলী আলো আর দিনের সূর্যরশ্নির তেজদীপ্ত শিখাটাও কেমন কেঁপে ওঠে আমার সাথে- আমাকে কাঁদিয়ে দিয়ে তারাও বলে ওঠে- ‘জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধু’ । কবি : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আইনজীবী |