
ভারতীয় সংবাদপত্র নিবন্ধ, আরএনআই-এর প্রেস এ বুকস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট এর চূড়ান্ত লঙ্ঘন, মালিকানা সত্ত্ব আইনের জালিয়াতি, অসত্য তথ্য সজ্ঞানে পরিবেশনের দায়ে বন্ধ হয়ে গেল ডেইলি দেশের কথা। সােমবার পশ্চিম জেলা শাসকের অফিসে শেষ শােনানিতে পত্রিকাটির আইনজীবীরা শেষ বারের মতাে রেজিস্ট্রেশন বাতিল না করার আর্জি জানায়। কিন্তু এই আর্জি পেশের সাথে পত্রিকার আইনজীবীরা কোনধরনের কার্যকরী নথি পেশ করতে ব্যর্থ হয়। এর আগে দিল্লি থেকে আর এনআই-এর এডিশনাল প্রেস রেজিস্ট্রান্ড মি. কে সতীশ নাম্বুদ্রি পাদ জানিয়ে দেন, ডেইলি দেশের কথার নামেই ফর্ম নং -১-এ জনৈক সমীর পাল, পিতা-মৃত, সুধীর পাল অক্টোবরের ১ তারিখ যে আবেদনপত্র করেছেন তা বাতিল করা হল। সিপিআইএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি এই পত্রিকাটির আরএনআই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল ৩৪২৩৮/১৯৭৯ ওই আদেশমুলে ১লা অক্টোবর ২০১৮ইং তারিখ থেকে দেশে এই নামে আর কোন কাগজ প্রকাশ করা যাবে না। পশ্চিম জেলা শাসকের অফিসে শুনানির উপর প্রাপ্ত নথির পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসকের আদালত যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তার মুদ্রণের কাজ চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ ফাইন্ডিংস নিয়ে জেলাশাসক তার পর্যবেক্ষণমূলক রিপাের্ট তৈরি করেছেন। ১৯৭৯ সালের ১৫ আগস্ট আগরতলা সেন্ট্রাল রােডের ৬৭নং বাড়িতে যাত্রা শুরু হয়েছিল সিপিআইএম -এর এই মুখপত্রটির। ১৯৭৮ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পর সম্পূর্ণ অনুকূল পরিস্থিতিতে রাতারাতি পার্টি পরিচালিত এই পত্রিকার শ্রী বৃদ্ধি ঘটে। ১৯৮৮ সালে পত্রিকাটি মেলারমাঠের বর্তমান পার্টি অফিসের দু'তলা পাকা বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। তার কিছুদিন পরপরই তৈরি হয় এ রাজ্যের সব চাইতে উঁচু পাথরের বাড়ি। যেখানে সর্বাধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেইলি দেশের কথার শ্রী বৃদ্ধি ঘটতেই থাকে। ডেইলি দেশের কথা সবাইকে ছাপিয়ে রাজ্যের এ-ওয়ান প্লাস ক্যাটাগরির কাগজ হিসেবে সরকারি সুবিধের সবটুকুই ভােগ করে আসছিল। সবই চলছিল দলের নামে। তাল কেটে যায়। ২০১৮ সালে রাজ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতির বাম বিশ্লেষণে। হঠাৎই পত্রিকার মালিকানায় সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পরিবর্তে চলে আসে সােসাইটি'র নাম। সেই সােসাইটির নামে দলের এক রাজ্য কমিটির সদস্যকে সম্পাদক হিসেবে প্রিন্টিং লাইনের ঘােষণায় উল্লেখ করা হতে থাকে। কিন্তু পার্টির মালিকানা থেকে সােসাইটির মালিকানার সত্ত্বে হস্তান্তরের এই প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম সম্পত্তি হস্তান্তরের আইনগত বিধান অনুসরণ করা হয়নি। সেই সােসাইটির তরফে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সমীর পাল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এর মাঝখানে হঠাৎই আবার সােসাইটির পক্ষে সমীর পাল কোনও একটি ট্রাস্টের নামে পত্রিকার মালিকানা হস্তান্তর করেন। শ্যামল দেবনাথ নামে জনৈক নাগরিক জেলাশাসকের কাছে জাল জালিয়াতির পরপর কাণ্ডকারখানার অভিযােগ তুলে ধরে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন। শ্রী দেবনাথের আইনজীবীর বক্তব্য, ভারতবর্ষের সংবিধানের ব্যবস্থার উলচ্ছন, সেই লঙ্ঘিত কর্মের বেপরােয়া প্রচারের মাধ্যমে দেশের কথা কর্তৃপক্ষ আইনকে অস্বীকার করেছে। কেউই আইনের উর্দ্ধে নয়। সুতরাং আইনের রক্ষক হিসেবে আরএনআই-এর প্রতিনিধি পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক বিষয়টির ন্যায় বিচার করুন। এর সাথে জড়িয়ে আছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হিসেব নিকেষ। নাগরিককে কেউই এভাবে জেনেবুঝে প্রতারিত করতে পারে না। গত ২ মে শ্যামল দেবনাথের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ১২/০১/২০১৮ইং তারিখে ডেইলি দেশের স্থাপনের উদ্দেশ্যে নােটিশ ইস্যু করেন। ১২ সেটেম্বর, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২৮ সেপ্টেম্বর চার বার জেলাশাসকের আদালতে বিষয়টি শুনানি হয়। শেষপর্যন্ত ডেইলি দেশের কথার পক্ষের আইনজীবীরা আরাে সময় চান। জেলাশাসক পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে শেষ বারের মতাে আরএনআই-এর সার্টিফিকেট নিয়ে চুড়ান্ত শুনানির দিন আসতে বলেন। সেই তারিখটিই ছিল ১লা অক্টোবর ২০১৮। শেষবারের মতাে ডেইলি দেশের কথাকে দেওয়া হয় সুযােগ। এর আগে পত্রিকার এক সাংবাদিক জেলাশাসকের সাথে দেখা করে আরও পাঁচ মাস সময় চেয়েছিলেন। তার আর্জি ছিল এই পত্রিকার সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় দেড়শাে পরিবার। কিন্তু জেলাশাসক তখনই বলেন, এটা আদালতের প্রক্রিয়া। আইন সবার জন্য সমান। আইনের কাছে কেবলমাত্র বৈধ নথিই বিবেচ্য সুতরাং নথির ভিত্তিতেই জেলাশাসককে কাজ করতে হবে। এদিন রাতে আমাদের কাছে আরএনআই-এর মুল আদেশের কপি এসে পৌছায়। নম্বর আর সি ২৩/০১/২০১৮-আর ৩ এই সেহা নম্বর লে এডিশনাল প্রেস রেজিস্ট্রার ডেইলি দেশের কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, আজ থেকে ওই পত্রিকার আরএনআই রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হল। উল্লেখ্য, সিপিএম দলের মুখপত্রের সাধিকারী, মুত্রক, সম্পাদক হিসেবে আরএনআই-এর ওয়েবসাইটে শেষমুহুর্ত পর্যন্ত ছিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাসের নাম। পত্রিকার ৪০ বছর পূর্তি হয়েছে গত ১৫ আগস্ট। কিন্তু জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থার লঙ্ঘনের দায়ে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল দেশের কথা।১লা অক্টোবর পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ড.সন্দীপ মহাত্মে আইএএস, শ্যামল। দেবনাথ পিতা প্রয়াত আনন্দ চরণ দেবনাথ, গ্রাম ও ডাকঘর - তারাপুর,পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা বনাম সমীর পাল, সম্পাদক, প্রকাশক এবং মুদ্রক - ডেইলি দেশের কথা মামলার রায় দেন, অভিযােগকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এডভােকেট অরবিন্দ দেব। অন্যদিকে সমীর পালের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভােকেট এস চক্রবর্তী, তাপস দত্তমজুমদার সহ আরও ৩জন। মামলার নথি অনুযায়ী ৫ আগস্ট ২০১৮ইং তারিখে মামলাটি শুরু হয়। জেলাশাসক তার আদেশে বলেছেন, ১৮৬৭ সালের প্রেস এণ্ড রেজিস্ট্রেশন অব বুকস্ এর ধারা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ। সমীর পাল ওই ধারা অনুযায়ী যে ঘােষণা দিয়েছিলেন তা বাতিল বলে ঘােষণা করা হল। রায়ের সাথে সাথেআরএনআই-এর সাথে জেলাশাসক এই পত্রিকার নামে সমস্ত ধরনের নিবন্ধিকরনের আর্জিও জানিয়েছিলেন। রায়ের মূল কপির সাথে জেলাশাসক তার তরফে নিবন্ধিকরনের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়ার নথিও যুক্ত করে।