/ সারাদেশ / ঝিনাইগাতীতে বিধবা বৃদ্ধার আর্তনাদ, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
ঝিনাইগাতীতে বিধবা বৃদ্ধার আর্তনাদ, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি:
|
বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম। বয়স তার আশি বছরেরও বেশি। দুই ছেলে তাদের সংসার থেকে আলাদা করে দিয়েছেন বৃদ্ধা মাকে। উপায়হীন তিনি। অভাবের তাড়নায় প্রায় সময়ই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তার। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনো রকম জীবনটাকে টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। এক সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ ও ধানের খলায় শ্রম দিয়ে সংসার চালাতেন। এখন বয়সের ভারে তা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু তাই জীবন তো আর থেমে থাকে না। নানা দুর্ভোগ সহ্য করে কোনো রকম এখন দিন কাটছে তার। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের খৈলকুড়া এলাকায় রাস্তার পাশে বসে কাঁদছিলেন তিনি।
এসময় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের করোনা টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করে ফিরছিলেন ইউএনও ফারুক আল মাসুদ। রাস্তার পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধাকে দেখে, চালককে গাড়ি থামাতে বলেন ইউএনও। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে বৃদ্ধার কাছে এগিয়ে দেখেন বৃদ্ধা কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে, বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম দুচোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ঘরে খাবার নাই। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। একটু সাহায্য পাওয়ার আশায় বসে আছি। বৃদ্ধার আর্তনাদ শুনে ইউএনও তার গাড়িতে তোলেন তাকে। পরে ইউএনও’র গাড়ির চালকের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী কিনে তুলে দেন বৃদ্ধার হাতে। খাদ্যসমাগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, ১ লিটার তেল, ১ কেজি লবণ ও ১টি সাবান। পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য ভাড়া দিয়ে রিকশায় তুলে দেয়া হয় বৃদ্ধাকে। এ সময় খাবার পেয়ে ইউএনওর জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাত করেন বৃদ্ধা। বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম উপজেলার খৈলকুড়া গ্রামের মৃত ছোবহানের স্ত্রী। তার এক ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রেতা ও অপরজন দিনমজুর এবং এক মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর সংসার করছেন। বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে মানুষের বাড়িতে আর ধানের খলায় কাজ করে সন্তানদের খুব কষ্টে বড় করেছি। কিন্তু এখন ওদেরও সংসারে অভাব অনটন। তাই তারা আমাকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন বয়সের ভারে আর কাজ করতে পারি না। কয়দিন ধরে ঘরে খাবারের কিছুই নাই। কী খাব। তাই সাহায্য পাওয়ার আশায় রাস্তায় বসে ছিলাম, ইউএনও স্যার দেখে আমারে খাবার কিনে দিছেন। দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন তার ভালো করেন। ইউএনও ফারুক আল মাসুদ বলেন, মানুষ হিসেবে একজন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সহযোগিতা করেছি- এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। তিনি আরও বলেন, কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার যদি খাদ্য সঙ্কটে থাকেন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন দিলে খাবার পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। |