/ সারাদেশ / খাল খননে সেতুতে ফাটল, ভেঙে গেছে সড়ক
খাল খননে সেতুতে ফাটল, ভেঙে গেছে সড়ক
নতুন বার্তা, রাজবাড়ী:
|
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে একটি সেতুতে ফাটল ধরেছে। একই সঙ্গে ওই সেতুর পাশের সড়ক ভেঙে খালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষজন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১৭.৭ কিলোমিটার খাল খননের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দেবগ্রামের পদ্মা নদী থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর আরিফ বাজার পর্যন্ত খালটি খনন করা হয়। এদিকে, দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা আশ্রয়ণ ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) সড়কের তেনাপচা খালের ওপর ২০০২-২০০৩ সালে সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। খাল খননের কারণে ওই সেতুতে ফাটল ধরেছে। এ অবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ ও ছোট যানবাহন। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী শহর, গোয়ালন্দ ও দৌলতদিয়ার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। সহজে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয় ওই অঞ্চলের কৃষি ফসল। বর্তমানে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী ও যানবাহন চালকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর মাঝ বরাবর এবং দুই পাশ ভেঙে অনেকখানি দেবে গেছে। সেতুর নিচে একাধিক স্থানে বড় বড় ফাটল ধরেছে। সেতুর এক পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার এবং পথচারীরা যাতায়াত করছে। এছাড়া সেতু সংলগ্ন তেনাপচা কবরস্থানমুখী খাল পাড়ের সড়ক ভেঙে খালে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে অসংখ্য বসতবাড়ি। সড়ক ও বসতবাড়ি রক্ষায় পাইলিং করে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর আগে খালটি ভেকু মেশিন দিয়ে খনন করা হয়। ওই সময় পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে মাটি কাটায় সেতুতে ফাটল ধরেছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে সবাই সেতু দিয়ে চলাচল করছেন। অটোরিকশার যাত্রীরা হেঁটে সেতু পার হয়ে আবার অটোতে ওঠেন। এছাড়া বর্ষাকালে খাল দিয়ে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবেশ করায় এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খনন করা খালের দুই পাড় ধসে পড়েছে। সড়ক বিলীনের পাশাপাশি শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে তেনাপচা এলাকার কয়েক কিলোমিটার খালের পাড় ধসে পড়েছে। সেই সঙ্গে পিয়ার আলী মোড় এলাকার খালের ওপর নির্মিত সেতুর নিচের মাটি সরে সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুর দুই পাশের সড়ক এলজিইডির। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের চেষ্টা করছে তারা। গোয়ালন্দ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের কারণে তেনাপচা গ্রামের সেতুটি ধসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেতুটির মেয়াদ ছিল আরও কয়েক বছর। কিন্তু অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকার রাস্তা ও বসতবাড়ি হুমকিতে রয়েছে। কবরস্থান, রাস্তা, বসতবাড়ি রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করে নতুন করে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পরিদর্শন করে ওই স্থানে নতুন সেতু করার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর এলাকায় ডিজাইন লেভেলে না গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে খননকাজ করেছি আমরা। কিন্তু ওই জায়গাটি সংকীর্ণ এবং মাটি দুর্বল হওয়ায় খালে নেমে আসার অবস্থা হয়েছিল। তবে রাস্তা ও বসতবাড়ি রক্ষার্থে গত বর্ষায় অস্থায়ী প্যালাসাইডিং ও প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছেন আমাদের লোকজন। সেতুটির স্থান দুর্বল ছিল, বিষয়টি ওই সময় উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছিল। তবে খননের কারণে সেতু ও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি না। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান বলেন, এটা শতভাগ নিশ্চিত যে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী যেটা বলেছেন, তা ঠিক নয়। তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুটি। |