/ সারাদেশ / দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি: আট বছরেও শুরু হয়নি ১৩৫১ কোটি টাকার কাজ
দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি: আট বছরেও শুরু হয়নি ১৩৫১ কোটি টাকার কাজ
নতুন বার্তা, রাজবাড়ী:
|
নদী ভাঙন এবং সংস্কার কাজের ধীরগতিতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপারে ভোগান্তি বেড়েছে। ঘাটের সংস্কার ও আধুনিকায়নে ২০১৪ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। এছাড়া অ্যাপ্রোচ সড়কের বেশকিছু অংশ নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ায় ৫ নম্বর ফেরিঘাটটি এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। সাতটি ঘাটের মধ্যে মাত্র চারটি ঘাট ব্যবহার করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে যানবাহন পারাপার। সব মিলিয়ে ফেরি পারাপারে কেবল ভোগান্তিই বেড়েছে। এ অবস্থায় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা দ্রুততম সময়ে ফেরিঘাটের সংস্কার কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। এরপর থেকে ঘাটটি দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে ২০১৪ সাল থেকে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। সাতটি ঘাটের মধ্যে উল্লেখিত তিনটি ঘাট বন্ধ থাকায় বাকি চারটি ফেরিঘাট নদী ভাঙনের কবলে পড়লেও জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে ৫ নম্বর ঘাটটি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। এর পর থেকে ঘাটটি দিয়ে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে তীব্র ভাঙনে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ঘাট ভেঙে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ রয়েছে। তবে ২ নম্বর ঘাটটি বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট, পাথর, বালুর কার্গো জাহাজ তাদের পণ্য রফতানির কাজে ব্যবহার করছে। এদিকে ফেরিঘাটের গুরুত্ব বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিসি’র চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। নানা জটিলতার কারণে ৮ বছরেও ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এই ৮ বছরে এক দফতর হতে অন্য দফতরে শুধু ফাইল চালাচালি হয়েছে। মূলত নদী ভাঙন এলাকায় দৃশ্যমান কোনও কাজই হয়নি। প্রতি বছরই পদ্মার পানি বাড়ার সময় ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হয়। তবে ভাঙনরোধে তা তেমন একটা কাজে আসে না। দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে পাউবো বিআইডব্লিটিএ'কে প্রস্তাব দিলে বিআইডব্লিটিএ দৌলতদিয়া প্রান্তে লঞ্চঘাট থেকে সাত নম্বর ঘাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ও পাটুরিয়ার চারটি ঘাট এলাকায় আড়াই কিলোমিটারে স্থায়ী কাজসহ সাত কিলোমিটার এলাকার জন্য ৬৩৪ কোটি টাকার একটি বিল উত্থাপন করে। একনেকে জমা হওয়ার পর ২০১৬ সালে বিলটি পাস হয়। কিন্ত দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে কাজটি শুরু করা হয়নি। ২০১৭ সালে বিআইডব্লিটিসি কর্তৃপক্ষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় সাতটি ফেরিঘাট ও পাটুরিয়ায় চারটি ফেরিঘাট দিয়ে মোট ১১টি ঘাটের তিনটি করে স্তর হাই ওয়াটার, মিড ওয়াটার ও লো ওয়াটার অর্থাৎ ৩৩টি ঘাট করার জন্য নকশার পরিবর্তন আনতে বলে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৩৫১ কোটি টাকার একটি বিল পুনরায় জমা দেয়। এ কারণে ওই নকশার যাচাই বাছাই করতে ফাইলটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটে) পাঠায় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। নকশা অনুমোদন অপেক্ষায় এখনও পড়ে আছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প। বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি ও স্রোত কমে যাওয়ার পর ঘাটটি পুনরায় সচল করা হবে। ভাঙনরোধ ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের আধুনিকায়নের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর পানি কমার পরও নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। ভাঙনরোধে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে যাচ্ছি। এছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নের ১৩৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। তবে নকশার কাজে সেটি আটকে আছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বরে মাসেই ঘাট আধুনিকায়নের কাজ শুরু হবে। সেখানে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে জানান তিনি। |