/ সারাদেশ / নড়াইলের পল্লীতে জমে উঠেছে শ্যামা মায়ের ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরোনো মেলা
নড়াইলের পল্লীতে জমে উঠেছে শ্যামা মায়ের ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরোনো মেলা
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে:
|
নড়াইলে জমে উঠেছে শ্যামা মায়ের ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের শ্রী শ্রী শ্যামা মায়ের মন্দিরটি
৪০০ বছরের পুরোনো। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান,
মহানামযজ্ঞ উপলক্ষে প্রতিবছর এ মন্দিরে মেলা বসার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। তবে
করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর এ ঐতিহ্যে ছেদ পড়ে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি
স্বাভাবিক থাকায় প্রাচীণ এ মন্দির প্রাঙ্গণে আবারও বসেছে মেলা। উৎসবে
মেতেছে হিন্দু স্প্রদায়ের মানুষ। শ্যামা মায়ের পূজা-অর্চনায় বিশ্ববাসীর
মঙ্গল কামনা করছে তারা। একইসঙ্গে দেশ মাতৃকার কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি কামনায়
মন্দির প্রাঙ্গণে তিনদিন ব্যাপী মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান চলছে। বৃহস্পতিবার
(২৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এ মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান রবিবার ভোরে শেষ হবে। স্থানীয়
লোকজন জানান, উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামে প্রায় ৪০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়
শ্রী শ্রী শ্যামা মায়ের মন্দির। ওই মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবছর শ্যামা
মায়ের পূজা-অর্চনার পাশাপাশি মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র জাকজমকপূর্ণ
মেলা বসে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু পূজা-অর্চনা করেছে পুণ্যার্থীরা। এ বছর
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার কারণে মন্দির কমিটি আবার মেলার আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার
(২৭ অক্টোবর) মন্দির প্রাঙ্গণে মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান ও মেলার উদ্বোধন করেন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নিশ্চিন্ত কুমার
পোদ্দার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ,
সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়া সার্কেল) প্রণব কুমার সরকার প্রমূখ। মেলায়
শিশুদের বিনোদন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন রাখা হয়েছে। মাটির খেলনা,
শোপিচ, তৈজসপত্র, গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছেন প্রায়
শতাধিক দোকানিরা। মেলায় আসা তন্দ্রা রানী বিশ্বাস
বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে তিনি প্রতিবছর এ মন্দিরে এসে পূজা-অর্চনা দিয়ে
পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন। মেলা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে বাড়িতে
ফেরেন। দুই বছর ধরে প্রাণের এ উৎসবে মিলিত হতে পারেননি তিনি। আবার এ উৎসবে
মিলিত হতে পেরে আনন্দ লাগছে তার।’ মেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দোকান নিয়ে
বসা শংকর কুমার পাল বলেন, ‘প্রতিবছর মেলায় এ অঞ্চলের মানুষের ঢল নামে।
মানুষের সংসারের নানা প্রয়োজনীয় জিনিস মেলা থেকে ক্রয় করেন তারা। করোনার
কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর আবার মেলা বসায় তারা খুব খুশি। শ্রী
শ্রী শ্যামা মায়ের মন্দিরের সেবায়েত নন্দ দুলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘মন্দিরটি
অনেক পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। অনেক রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে
৪০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনাকালীন দুই বছর পর এলাকার
মানুষ মন্দিরে উৎসবে মিলিত হয়েছে। এ বছর মানুষ প্রাণ খুলে পূজা-অর্চনায় ও
মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে। শামিল হয়েছে উৎসবে। জমে উঠেছে বাঙালির
সংস্কৃতির মেলা। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে। |