/ সারাদেশ / হোটেলে রুম নেই, সাজেকের রাস্তায় শত শত পর্যটক
হোটেলে রুম নেই, সাজেকের রাস্তায় শত শত পর্যটক
নতুন বার্তা, রাঙামাটি:
|
দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র মেঘের রাজ্যখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ না পেয়ে রাস্তা, কটেজের বারান্দা ও গাড়িতে রাত কাটিয়েছেন শত শত পর্যটক। কেউ কেউ স্থানীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে ফিরে গেছেন।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রিসোর্ট-কটেজের মালিকপক্ষ, পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে সাজেকের রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন শত শত পর্যটক। রিসোর্ট-কটেজের মালিকরা বলছেন, তিন দিনের ছুটিতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সাজেক ভ্যালিতে আসতে শুরু করেন পর্যটকরা। শুক্রবার অতিরিক্ত পর্যটক আসায় রিসোর্ট-কটেজের কোনও কক্ষ খালি ছিল না। রিসোর্ট-কটেজের ধারণক্ষমতার চেয়ে পর্যটক অনেক বেশি আসায় রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে কক্ষ সংকট দেখা দেয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাজেক ভ্যালিতে ১১২টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। এগুলোতে পর্যটক ধারণক্ষমতা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো। অথচ শুধুমাত্র রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে শুক্রবার পাঁচ হাজারের মতো পর্যটক এসেছেন। সাজেকের জিপগাড়ি সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘শুক্রবার প্রায় ৩৫০টির মতো জিপগাড়ি, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ আরও ৭০০ শতাধিক গাড়িতে পর্যটকরা সাজেকে ঘুরতে এসেছেন। অনেকে রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ না পেয়ে রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন। কেউ কেউ গাড়িতে ছিলেন।’ শত শত পর্যটক কক্ষ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি জয় মারমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ১১২টি রিসোর্ট-কটেজের সবগুলো কক্ষ রবিবার-সোমবার পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে। যারা আগাম বুকিং না দিয়ে এসেছেন তারাই বিপদে পড়েছেন। শুক্রবার রাতে যেসব পর্যটকের জন্য কক্ষের ব্যবস্থা করা যায়নি তাদের স্থানীয়দের বাড়িতে, স্কুলে ও কমিউনিটি সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা।’ জয় মারমা আরও বলেন, ‘রিসোর্ট-কটেজ মালিকদের বলেছি, বেশি পর্যটক আসার সুযোগে যেসব রিসোর্ট-কটেজ বাড়তি ভাড়া নেবে, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের সব রিসোর্ট-কটেজের কক্ষগুলো এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। কক্ষ না পেয়ে অনেকে শুক্রবার বিকালে ফেরত গেছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ খুঁজতে থাকেন। এতে রাত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কোথাও কক্ষ না পেয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তারা। এ অবস্থায় রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করে পর্যটকদের লুসাই ক্লাবঘরে যেতে বলা হয়। সেখান কিছু পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এরপরও যাদের থাকার ব্যবস্থা হয়নি তারা পাশের ত্রিপুরাদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নেন। আবার অনেকে রাস্তায় ও গাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। অবকাশ রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাজমুল হাসান বলেন, ‘শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্ষের জন্য অনেকে এসেছিলেন। শনিবারও অনেকে এসেছেন। কিন্তু রিসোর্টের কক্ষগুলো এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে কাউকে কক্ষ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যারা আগাম কক্ষ বুকিং করেননি তারা শুক্রবার রাতে বিপাকে পড়েন। অনেকে রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন।’ সাজেকের হিলভিউ রিসোর্টের মালিক ইন্দ্রজিৎ চাকমা বলেন, ‘আমাদের রিসোর্টের ১০টি কক্ষ এক সপ্তাহ আগে বুকিং হয়ে গেছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনও কক্ষ খালি নেই। শুধু আমাদের রিসোর্ট নয়, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে কোথাও কক্ষ খালি নেই। সব বুকিং হয়ে আছে।’ আগাম কক্ষ বুকিং দিয়ে সাজেকে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার যারা কক্ষ পাননি রিসোর্ট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কিছু পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করা হলেও অনেকে গাড়িতে এবং কটেজগুলোর বারান্দায় রাত কাটিয়েছেন। কেউ কেউ রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন। বন্ধের দিনগুলোতে আগাম কক্ষ বুকিং দেওয়ার অনুরোধ জানাই পর্যটকদের।’ সাজেকে শত শত পর্যটককে রাস্তায় ও বারান্দায় রাত্রিযাপন করতে দেখেছি জানিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ‘কয়েকজন অতিথি আসায় আমিও শুক্রবার সাজেকে ছিলাম। অনেক পর্যটককে দেখেছি, কক্ষ না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন। আমি কয়েকজনকে স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। অনেক রিসোর্টের মালিক এ সুযোগে বাড়তি ভাড়া নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পেয়েছি। তবে এখানে আসার ক্ষেত্রে পর্যটকদের আরও সচেতন হতে হবে। আগেই কক্ষ বুকিং দিতে হবে, না হয় ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’ আগাম কক্ষ বুকিং না দিয়ে এখানে ভ্রমণে না আসার পরামর্শ দিয়ে রুমানা আক্তার বলেন, ‘এ ধরনের ছুটিতে প্রতিবার একই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হবে।’ |