/ সারাদেশ / প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া ৫৪টি বেদে পরিবারকে আর নৌকা করে নদীতে ভাসতে হবেনা
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া ৫৪টি বেদে পরিবারকে আর নৌকা করে নদীতে ভাসতে হবেনা
ফকির মতিয়ার রহমান মতি,গোপালগঞ্জ থেকে:
|
এখন থেকে আমাদের আর নৌকায় করে নদীতে ভেসে বেড়াতে হবেনা। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে
যেখানে সেখানে রাত্রীযাপনও করতে হবেনা। আমরা যখন নৌকায় করে নদীতে ভেসে
বেড়াতাম তখন আমাদের অনেক কষ্ট হতো। তাবু টাঙ্গিয়ে যেখানে সেখানে রাত্রীযাপন
করতাম তখন ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে যেতাম, ঠিকমতো ঘুমাতে পারতামনা, খেতেও
পারতামনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই তাবুর ভেতরে পানি ঢুকে পড়তো। আর বড় ধরনের
বৃষ্টি হলেতো তা্বুর ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। আষাঢ –শ্রাবন মাসে যখন
বড় ধরনের বৃষ্টি হতো তখন চারপাশে পানি থৈ থৈ করতো। কোন কোন সময় তাবুর
ভেতরেও পানি ঢুকে পড়তো। রান্না করতে পারতামনা। না খেয়ে রাত কাটিয়েছি কতো
তার হিসাব নাই। তাবু ছেড়ে রাস্তা বা সরকারী কোন ফ্লাট সেল্টার অথবা উচু কোন
স্কুলেও থাকতে হয়েছে। তাও আবার গাদাগাদি করে শুতে হয়েছে। শুতে পারি নাই।
ঘুমাতে পারি নাই। রাত কাটিয়েছি অনেক কষ্ট করে। আমরা বেদে বলে মানুষ আমাদের
মেনে নিতে পারতো না। মানুষের কতো মুখচোখা দেখতে হয়েছে তা আর ভাষায় ব্যক্ত
করে বুঝাতে পারবোনা। সকালে না খেয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে পড়তাম জীবিকার
সন্ধানে। বাড়ী বাড়ী ঘুরে বেড়িয়ে ডাক পাড়তাম এই সিংগা লাগাবেন সিংগা।
ডিজিটাল পদ্দতি চালু হওয়ায় এখন আর কেউ আগেরমতো কেউ সিংগা লাগাতে চায়না। কোন
কোন দিন সারাদিন ঘরে বেড়িয়েও এক টাকাও রোজগার হয়নি। খালি হাতে বাড়ী ফিরতে
হয়েছে আমাদের। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দারে দারে ঘুরে খালি হাতে তাবুতে
ফিরে সারারাত না খেয়েও কাটিয়েছি। রাতের বেলা ফাকা ডাঙ্গায় শীতের ভিতর
কতোইনা কষ্টে কাটিয়েছি। এখন আর ঝড় বৃষ্টিতে ভিজতে হবেনা, শীতের ভিতর
রাত্রীযাপন করতে হবেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ২ শতক করে জমি
দিছে, দুই রুম বিশিষ্ট একটি করে ওয়াল সেড সেমিপাকা ঘর দিছে, ঘরের ভেতরেই
রান্না ঘর আছে, বাথরুম আছে ও টিউবয়েলসহ একটি সংসারের যাবতীয় সবকিছু দিছে।
এতে বদলে গেছে আমাদের জীবনযাত্রা। কথাগুলো বলছিলেন আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর
পাওয়া উপকার ভোগী ৫৪টি বেদে পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯আগষ্ট বুধবার গোপালগঞ্জে আশ্রয়হীন ৫৪টি বেদে পরিবারের প্রত্যকে একটি করে সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন। দুই রুম বিশিষ্ট ঘরে রয়েছে বাথরুম, রান্নাঘর, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এতে, একদিকে যেমন তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন অন্যদিকে, নৌকায় করে ভেসে বেড়ানোসহ ঝড় বৃষ্টির মধ্যে যেখানে সেখানে রাত কাটানো থেকে মুক্তি পেয়েছেন এই ৫৪টি বেদে পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে খুশি ৫৪টি বেদে পরিবারের সবাই। তারা বলছেন, এক সময় আমাদের নৌকায় করে নদীতে ভেসে বেড়াতে হয়েছে, এখন আর আমাদের নৌকায় ভেসে বেড়াতে হবেনা। এক সময় আমরা নদীর পাড়ে অথবা বিভিন্ন ডাঙ্গা ডরে তাবু টাঙ্গিয়ে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে রাত্রী যাপন করেছি। কিন্ত এখন থেকে আমাদের আর ডাঙ্গা ডরে তাবু টাঙ্গিঁয়ে রাত কাটাতে হবেনা। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম বলেছেন, গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের দুইশ সাতচল্লিশটি ঘরের মধ্যে চুয়ান্নটি ঘর পেয়েছে বেদে সম্প্রদয়ের চুয়ান্নটি পরিবার । দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত নৌকায় ভেসে বেড়াতো এই সব পরিবার, আর কখনো কখনো খোলা আকাশের নিচে অথবা কোনো গাছের নিচে ঘর বেধেঁ থাকতো তারা । ভেসে বেড়ানো আর খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো থেকে মুক্তি মিলেছে চুয়ান্নটি বেদে পরিবারের কারন গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের দুইশ সাতচল্লিশটি ঘরের মধ্যে সদর উপজেলার সাতপাড় এলাকায় পঞ্চাশটি ও কোটালিপাড়ায় ৪টি ঘর দেওয়া হয়েছে তাদের । প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর পাওয়ায় এখন আর তাদের খোলা আকাশের নিচে অথবা নৌকায় রাত্রি যাপন করতে হবেনা । দীর্ঘ বছর নৌকায় ভেসে বেড়ানো ও খোলা আকাশের নিচে ঘর বেধেঁ থাকা থেকে মুক্তি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তারা । গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, মহসিন উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর জীবন যাপন করা বেদে সম্প্রদয়ের কোথাও ঠাই ছিলোনা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গোপালগঞ্জের সাতপাড় এলাকার কালিভিটায় তাদের পঞ্চাশ টি ঘর দেওয়া হয়েছে, এই ঘর তাদের দিতে পেরে খুশি প্রশাসন । গোপালগঞ্জ এসিল্যান্ড মো, মামুন খান বলেছেন, গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় হতদরিদ্রদের মধ্যে ঘর দেওয়া হয়েছে ২৪৭ টি, এর মধ্যে চুয়ান্নটি ঘরই পেলেন বেদে পরিবার। |