/ সারাদেশ / ডিবি হারুনের শতকোটি টাকার ক্যাশিয়ার
ডিবি হারুনের শতকোটি টাকার ক্যাশিয়ার
নতুন বার্তা, কিশোরগঞ্জ:
|
ডিএমপি’র সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ব্যাংক হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান মোকাররম সর্দার। গত ২১শে মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডিবি হারুন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাকে জিতিয়ে আনেন। নির্বাচনের সময় সেটি ছিল ওপেন সিক্রেট। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই তিনি ঢাকায় গিয়ে হারুনের সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোকাররম সর্দারের মাধ্যমেই হারুনের টাকায় কিশোরগঞ্জের নিকলীতে অত্যাধুনিক অটো রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের নানশ্রী গ্রামে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়ক সংলগ্ন এলাকায় অটো রাইস মিলটি তৈরি করা হয়েছে। ডিএমপি’র তেজগাঁও জোনের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ২০২১ সালের ২২শে জানুয়ারি নির্মাণাধীন মিলটি হেলিকপ্টারযোগে পরিদর্শনে যান হারুন। দুই একর জায়গার উপর তৈরি করা জেলার সর্ববৃহৎ এ অটো রাইস মিলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়নি। দৈনিক ১০০ টন ধান মিলটিতে প্রক্রিয়াজাত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে নিকলী অগ্রণী ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়ে তিনি নিজে অটো রাইস মিলটি করেছেন বলে দাবি করেছেন মোকাররম সর্দার। তবে ৫০ কোটি টাকার মিলটিতে ব্যাংক ঋণের বিষয়টি লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে কেবল অটো রাইস মিল নয় কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি হারুনের টাকায় ইটভাটা এবং বিপুল পরিমাণ জায়গাজমি রয়েছে। এসব ইটভাটা ও জায়গাজমির মালিকানাও মোকাররম সর্দারের। মোকাররম সর্দার জেলার নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের উত্তর দামপাড়া গ্রামের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে। তার নাম মোকারিম হোসেন হলেও লোড-আনলোডের শ্রমিকদের সর্দার হিসেবে কাজ করায় তিনি মোকাররম সর্দার নামেই সব জায়গায় পরিচিত। লোড-আনলোডের সামান্য শ্রমিক থেকে আজ তিনি অঢেল সম্পদের মালিক। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় রয়েছে মোকাররম সর্দারের বিশাল সাম্রাজ্য। এরপর ২০১৮ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর হারুন নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে যোগদান করার পর মোকাররম সর্দারের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুন নারায়ণগঞ্জের কয়লার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। এছাড়া জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিণ্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করেন। এসবের মাধ্যমে হারুন অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। হারুনের অন্তত হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ও সম্পদের জিম্মাদার হিসেবে রয়েছেন মোকাররম সর্দার। হারুনের টাকাতেই ভারতীয় কয়লা আমদানি থেকে শুরু করে, সার, কয়লা, ইট, পাথর ও বালুসহ শত শত কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছেন মোকাররম সর্দার। ডিবি হারুনের ছোট ভাই ডা. এবিএম শাহরিয়ার রাজধানীর মিরপুরে একটি হাসপাতাল পরিচালনা করেন। হাসপাতালটি হারুনের টাকায় প্রতিষ্ঠিত হলেও এর বড় অংশীদার মোকাররম সর্দার। নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে অন্তত ১০টি প্লট কিনেছেন মোকাররম সর্দার। এর মধ্যে ৪টি বিলাসবহুল অট্টালিকা করেছেন। এসব বাড়িকে অনেকেই এসপির বাড়ি নামে চিনেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বিন্নগাঁও এলাকায় হারুনের টাকায় ৮২.৪৩ শতাংশ জায়গার দুটি প্লট কিনেছেন। এর বাইরে জেলা শহরের উকিলপাড়া এলাকায় হারুনের একটি তিনতলা বাসা রয়েছে। মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রাম হোসেনপুরে গড়ে তুলেছে শতকোটি টাকার অভিজাত ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। এছাড়া রিসোর্ট সংলগ্ন এলাকার হাওরে অন্তত ১০০ একর জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে একটি এগ্রো প্রজেক্ট গড়ে তোলারও পরিকল্পনা করেছিলেন হারুন। সূত্র জানায়, মোকাররম সর্দারের বাবা নূরুল ইসলাম ভাগ্যান্বেষণে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় যান। সেখানে তিনি বড় ছেলে মোকাররমকে সাথে নিয়ে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। এক সময় মোকাররম লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে নাম লেখান। এরপর লোড-আনলোডের শ্রমিকদের সর্দার হন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কয়েকটি কোম্পানি জাহাজের মালামাল রেখে চলে যায়। ফতুল্লার এক শ্রমিক লীগ নেতার সহযোগিতায় সেসব জাহাজের মালামাল লুট করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হন মোকাররম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হারুন নারায়ণগঞ্জের এসপি হয়ে সেখানে গেলে মোকাররম সর্দার তার আশীর্বাদ লাভ করেন। সেখানে মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুন পাথর ও কয়লার ব্যবসার পাশাপাশি জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিণ্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন হারুন। এছাড়া অবৈধ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে হারুনের হয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন মোকাররম সর্দার। এসব অর্থের একটা বড় অংশ রাখা হতো মোকাররম সর্দারের কাছে। হারুনের এসব টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাতেন মোকাররম। নিজ জেলার কিশোরগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে নামে-বেনামে অন্তত ৭টি ইটভাটা রয়েছে হারুনের। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লা সরবরাহের অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুনের উপর একটি সিনেমা বানানোর প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছিলো। সিনেমাটির নাম দেয়া হয়েছিলো ‘হাওরের মানিক’। সেখানে পুলিশ অফিসার হারুনকে হাওরের মানিক হিসেবে চিত্রায়িত করার কথা ছিলো। এসব বিষয়ে মোকাররম সর্দার মানবজমিনকে বলেন, পাশাপাশি উপজেলার মানুষ হিসেবে হারুন সাহেবের সাথে আমার সুসম্পর্ক। এর বাইরে তার সাথে আমার কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। |