/ সারাদেশ / ধামাচাপা পড়ছে পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা: ৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি
ধামাচাপা পড়ছে পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা: ৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
|
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের একটি লেক থেকে ২০১৭ সালে ২ জুন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এর মধ্যে রকেট লঞ্চার যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিস্ফোরক জেল ও আন্তযোগাযোগের বিভিন্ন সরঞ্জাম। ৭ বছর অতিবাহিত হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস খুঁজে বের করতে পারেনি। ঘটনার পরদিন ৩ জুন পুলিশ রূপগঞ্জের গুতিয়াব এলাকার একটি কবরস্থান ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে কয়েক দফায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল। পূর্বাচল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী। বড় কোনো উদ্দেশ্যে কোনো গোষ্ঠী এসব অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। এরপর যখন অস্ত্রগুলো তাদের কাছে বোঝা মনে হয়েছে, লেকের পানিতে ফেলে দেয়। তবে এত অস্ত্র কীভাবে পূর্বাচলে ঢুকল, তা তদন্ত করে বের করতে হবে। রূপগঞ্জের পূর্বাচলে অস্ত্রের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ব্রাহ্মণখালী এলাকার মো. শরীফ খান, মো. শাহীন হোসেন, মো. রাসেল, শান্ত ও মো. মুরাদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সাব্বির নামে আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর হৃদয় নামে আরেক আসামি কাতারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শরীফ খান একজন মাদক ব্যবসায়ী। তিনি একসময় র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালের ২ জুন রূপগঞ্জের গুতিয়াব এলাকার বøু-সিটি হাউজিং প্রকল্প থেকে দুটি এসএমজি এবং একই দিন রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ৫ নম্বর সেক্টরের পশ্চিম-উত্তর সীমানাসংলগ্ন ৩০৪ নম্বর রোডের উত্তর পাশে লেকের দক্ষিণ পাড়ে পানির নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এর পরদিন রূপগঞ্জের বাসুন্দা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এসএমজি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে গুতিয়াব এলাকার একটি কবরস্থান থেকে পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। রূপগঞ্জে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৩ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক মো. মাহমুদুল ইসলাম রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন। মাহমুদুল ইসলাম ওই সময় বলেছিলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা কারাগারে রয়েছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে একটি কবরস্থান থেকে আরও ৩১৫টি গুলি উদ্ধার এবং আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রূপগঞ্জের পূর্বাচলের লেকে ফেলে রাখা অস্ত্রগুলো স্থাণীয় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ বলেছিলেন, পূর্বাচল উপশহরের অস্ত্রগুলোর প্রথমে জানতে পারেন হৃদয়। ওই বছরের জানুয়ারিতে কাতারে যাওয়ার আগে তিনি পাঁচটি অস্ত্র তার চাচাতো ভাই মুরাদের কাছে এবং তিনটি অস্ত্র তিনজনকে দিয়ে যান। এর মধ্যে একটি অস্ত্র ইয়াবার বিনিময়ে কেনেন মাদক ব্যবসায়ী শরীফ। যার সূত্র ধরে পুরো ঘটনাটি উদ্ঘাটিত হয়েছিল। লেকের পাড়ে হৃদয় যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরে তার নানা আমির উদ্দিন জানান, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর থেকে হৃদয়ের মা-বাবা এখান থেকে চলে যান। সিআইডি থেকে মামলাটি তদন্ত করছেন ঢাকা মেট্রোর সিনিয়র এএসপি মো. এহসান উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, পলাতক আসামি হৃদয়কে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তারা। সিআইডির সাবেক এএসপি ফজলুল কবীর বলেন, ব্যালেস্টিক বা মাইক্রোঅ্যানালাইসিস দিয়ে অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে অস্ত্রের ধরন ও ক্ষমতা বের করা সম্ভব। তিনি বলেন, ছিঁচকে চোর-ডাকাত বা মাদক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অস্ত্রের উৎস, গন্তব্য বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। এগুলো উচ্চপর্যায়ের তদন্ত। তার বিশ্বাস, একজন তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারলে এর রহস্য বের করতে পারবেন। পূর্বাচলের বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, রূপগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ছালাহউদ্দিন ভুঁইয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা লেক (মৎস্য খামার) থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র পরিবহনে তার ইজারা নেয়া ঘাট ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। এখনো বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারের লেকে ছালাহউদ্দিন ভুঁইয়া, তার ভাই আব্দুল হামিদ ভুঁইয়া ও রাকিব ভুঁইয়া মাছ চাষ করছেন। ওই অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস খুজঁতে পুনতদন্তের দাবি জানান এলাকাবাসী। রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ওই সময়ে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রই ঘুরে ফিরে হাত বদল হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া জানতে পেরেছি মামলাটি সিআইডিতে রয়েছে। |