/ মিডিয়া / চার সহকর্মীর চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ করায় ১১ সংবাদকর্মীকে শোকজ
ডিবিসি নিউজে চরম অস্থিরতা
চার সহকর্মীর চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ করায় ১১ সংবাদকর্মীকে শোকজ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
অন্যায়ভাবে চার সহকর্মীকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানানোয় বার্তা ও প্রযোজনা বিভাগের ১১ সংবাদকর্মীকে কারণ দর্শানো চিঠি দিয়েছে ডিবিসি নিউজ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে এ নোটিশ দিয়ে তাদের সবাইকে আগামী দুই দিন বাধ্যতামুলক ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছে। ডিবিসি নিউজের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান ইয়াসমিন জাহানারা স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো চিঠিতে লেখা হয়, "কর্তৃপেক্ষর অনুমতি না নিয়ে গত ৩রা নভেম্বর অফিসে অন ডিউটি অবস্থায় অফিসের সামনে কিছু বহিরাগতদের সাথে মিলিত হয়ে প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেআইনি উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করেন এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উদ্ধত বক্তব্য প্রদান করেন যা শুধু প্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল সাংবাদিক-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং স্বার্থবিরাধী। এ ধরনের আচরণ অফিসের ভিতরে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত করে যা চাকুরি শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।" কারণ দর্শানো চিঠিতে আরও বলা হয়, "উক্ত কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, কারণ দর্শানো চিঠি পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করা হলো। উক্ত দুই দিন বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকার নির্দেশ দেয়া হলো।" ১১ জনকে দেয়া কারণ দর্শানো চিঠির অনুলিপি এমডি শহীদুল আহসান ও সম্পাদক লোটন একরামের কাছে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবিসি নিউজের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এই ১১ জনকেই চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে-অনুযায়ী প্রক্রিয়া চলছে। কারণ দর্শানো চিঠি পাওয়া ১১ জন হলেন- সিনিয়র রিপোর্টার ঝুমি রহমান ও জুয়েল থিওটোনিয়াস, স্টাফ রিপোর্টার মুহাম্মেদ হোসাইন, নাবিল জাহাঙ্গীর, ফরহাদ ইবনে মালেক, মোহন ইসলাম ও মোহাইমিনুল অপু, নিউজরুম এডিটর চৈতী সারোয়ার, প্রোডিউসার আব্দুল্লাহ আল মামুন (মাসুম), অ্যাসোসিয়েট প্রোডিউসার শামস উজ জামান (নিপু) ও কাজী আলিমুল শফিক (অঞ্জন)। শোকজ চিঠি পাওয়া এক সংবাদকর্মী জানান, সেদিন আমার অফিস বেলা ৩টায় শেষ হয়। চার সহকর্মীকে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নেই বিকাল চারটায়। সুতরাং আমি তখন অন ডিউটিতে ছিলাম না। এছাড়া আমি কোনো বক্তব্য দেয়নি। উচ্ছৃঙ্খলতা করার অভিযোগও ভিত্তিহীন। চিঠিতে এরকম অনেক মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে।" আরেক সংবাদকর্মী জানান, "প্রকৃত ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করছে ম্যানেজমেন্ট। তাদের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার কারণেই আজ আমাদের ১১ জনকে টার্গেট করা হয়েছে।" প্রযোজনা বিভাগের একজন জানান, "মানববন্ধন যখন হয় তখন আমি নিচে টং দোকানে চা পান করছিলাম। তারপরও আমাকে শোকজ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।" সম্প্রতি নোটিশ ছাড়াই ডিবিসি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক নঈম তারিক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক নাদিম মাহমুদ, সিনিয়র রিপোর্টার কাওসারা চৌধুরী কুমু ও মাছুদুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করে ডিবিসি নিউজ কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অন্যায় অভিহিত করে গত ৩রা নভেম্বর রাজধানীর মহাখালীতে ডিবিসি নিউজ কার্যালেয়র সামনে মানবন্ধন করেন বর্তমান ও সাবেক সহকর্মী এবং বিভন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। এই ঘটনায় বর্তমানে কর্মরত ১১ জনকে কারণ দর্শানো হলো। অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হওয়ার একদিন পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কাওসারা চৌধুরী কুমু। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নির্দেশে হাসপাতালে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা। ডিবিসি নিউজের সংবাদকর্মীরা জানান, ব্যাপক দুর্নীতি ও বিতর্কিত ভূমিকার জন্য গত ১৩ই আগস্ট সিইও ও প্রধান সম্পাদক এম মঞ্জুরুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এর জেরেই পদত্যাগ দাবিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন সিইও এম মঞ্জুরুল ইসলাম। এ কাজে তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছেন চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও এমডি শহীদুল আহসান। উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান ও সিইওর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এছাড়াও তারা একাধিক হত্যা মামলার আসামি। দুজনই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। এমডি ও সিইওর বিরুদ্ধে মার্কেন্টাইল ও এনআরবিসি ব্যাংক লুটপাট করা ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, প্রায় অর্ধশত চেক ডিজঅনারের মামলার আসামি এমডি। ডিবিসি নিউজের এক বার্তা সম্পাদক জানান, বিএনপির নোয়াখালী অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে যা খুশি তাই করছেন চেয়ারম্যান, এমডি ও সিইও। এভাবে খেয়াল-খুশি মতো কোনো গণমাধ্যম চলতে পারে না। এই পাগলামি থামাতে অবিলম্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। |