/ জাতীয় / আজ থেকে বাড়তে পারে লোডশেডিং: বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে আদানি
আজ থেকে বাড়তে পারে লোডশেডিং: বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে আদানি
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
বকেয়া আদায়ে ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত ৭ নভেম্বর রাত ৮টার পর থেকে হঠাৎ করেই ৭১৮ মেগাওয়াট থেকে ১২৪ মেগাওয়াট কমিয়ে ৫৯৪ মেগাওয়াট সরবরাহ করা শুরু করে তারা। এরপর গত দুদিন ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমতে থাকে। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় আদানি ৫১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শীতের আবহ শুরু হয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন কমে আসছে। গত দুদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল কম। ফলে লোডশেডিং হয়নি। তবে আজ রোববার খোলার দিনে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে লোডশেডিং হবে। তারা বলছেন, বকেয়া বিল আদায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর একটা চাপ তৈরি করতে চাইছে আদানি। এরই মধ্যে আদানির বকেয়া পরিশোধ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরও পরিশোধ করা হবে। তখন বকেয়ার পরিমাণও কমে আসবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে আদানির সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান পিডিবি কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, অক্টোবর মাসে আদানি পাওয়ারকে প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা এর আগের মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ডলারের এলসি করা হয়েছে। তার পরও তাদের এমন আচরণ বিস্ময়কর এবং দুঃখজনক। তিনি বলেন, আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সেজন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ বিষয়ে কথা বলতে পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে একই বিষয়ে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আমরা এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ আগের চেয়ে বেশি পেয়েছি। যে কারণে এখন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে। তিনি বলেন, আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃহস্পতিবার রাত থেকে হুট করে কমিয়ে দিয়েছে। সরবরাহ কমালেও গত দুদিন দেশে কোনো লোডশেডিং হয়নি। তবে আগামীকাল (আজ) থেকে সব খোলা। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে, লোডশেডিং হবে। তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেশি হবে না বলে তিনি জানান। এদিকে, সম্প্রতি ভারতের গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে আদানি। গত ৩ নভেম্বর ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশের পর বাংলাদেশে আদানির প্রতিনিধিদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার খবরটি সঠিক নয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ না করলেও সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বকেয়া আদায়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করছে আদানি। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ভারতের ঝাড়খন্ডে স্থাপিত ১৬শ মেগাওয়াট ক্ষমতার আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ বন্ধ করার কথা জানিয়েছে আদানি কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকার বকেয়া বিল বাকি। আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের প্রতিনিধি ও যৌথ সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম আর কৃষ্ণ রাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিসি) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০ দশমিক শূন্য ৩ মিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি প্রদান করেনি এবং ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারের (১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা) বকেয়া পরিমাণও মেটায়নি। সময়মতো এলসি না দেওয়া এবং বকেয়া পরিমাণ পরিশোধ না করার ফলে পাওয়ার পচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় ‘মেটেরিয়াল ডিফল্ট’ ঘটেছে, যা আদানি পাওয়ারের সরবরাহ বজায় রাখতে বাধা দিচ্ছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বহু বকেয়া পরিশোধ ও এলসির অভাবে আমরা কয়লা সরবরাহকারী এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রাক্টরদের জন্য কাজের মূলধন নিরাপদে রাখতে পারছি না, আমাদের ঋণদাতারাও সহায়তা প্রত্যাহার করছে। বাংলাদেশের কাছে আদানির বকেয়া ছিল ৮৫ কোটি ডলার। ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডায় ১৬শ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার। গত আগস্টের শুরুতেও তারা ১৪০০-১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বকেয়ার অর্থ উদ্ধারে গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে নভেম্বরে তারা ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। পরে গত সপ্তাহ থেকে আদানির বকেয়া বিল খণ্ডিতভাবে পরিশোধ শুরু করেছে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, অক্টোবরে আদানিকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মাসগুলোতে যেখানে প্রতি মাসে বিল বাবদ ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে, সেখানে মাত্র ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হয়েছে। আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১০ থেকে ১২ টাকায়। ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার দামও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দর ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকের দরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি। আদানির টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা পিডিবির। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপারগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। আজ বকেয়া টাকার একটি অংশ পরিশোধ করা হবে। তবে কত টাকা পরিশোধ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। |