/ জাতীয় / অটোচালকদের অবরোধ নগর জুড়ে দুর্ভোগ
অটোচালকদের অবরোধ নগর জুড়ে দুর্ভোগ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে রাখেন তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক ও রেলপথ। দীর্ঘ সময় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। নগর জুড়ে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সকাল ১০টা থেকে মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, গাবতলী, টেকনিক্যাল, পল্লবী, খিলগাঁও, রামপুরা, বৌদ্ধমন্দির ও ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করেন তারা। এ সময় টায়ার, কাগজসহ সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তা আটকে দিতে দেখা যায় তাদের। এছাড়া মহাখালী ও খিলগাঁওয়ে বাস, ট্রাক এবং ভবনে ভাঙচুরও করেন তারা। কয়েকটি জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চালকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে বিকাল ৪টার পর থেকে সড়ক ও রেলপথ থেকে চালকরা সরে গেলে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি। সকালে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ব্যাটারি রিকশাচালকরা মহাখালীতে জড়ো হয়ে সড়ক ও রেলপথ আটকে দিলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুপুরের দিকে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের তুলনায় রিকশাচালকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা উল্টো তাদের ধাওয়া দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রিকশাচালকদের ধাওয়া খেয়ে এসকেএস শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এই সুযোগে আন্দোলনরত রিকশাচালকরা এসকেএস শপিং মল ও রাওয়া ক্লাবে ভাঙচুর করে। শপিংমলটির নিরাপত্তাকর্মী ইমাম বলেন, রিকশাচালকরা রেললাইনের পাথর দিয়ে শপিং মলের গ্লাস ভাঙচুর করেন। এ সময় শপিং মলের আমানা বিগ বাজার সুপার শপে ও একটি ক্যাফের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। এরপর এসকেএস শপিং মলের সামনে সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনরত অটোরিকশাচালকরা। মিরপুরে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে ফায়ার সার্ভিসের সামনে লাঠিচার্জ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর মিরপুর-২ নম্বর সুইমিং কমপ্লেক্সের সামনে কিছুসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের অবস্থান করতে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মিরপুর মডেল থানার তদন্ত অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ করতে দেয়া হচ্ছে না। তারা দাঁড়াতে চাইলেই সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগারগাঁওয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। এতে সেখানকার আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রিকশাচালকরা সেখান থেকে সরে যান। আগারগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় চালকরা শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বছিলাতেও সড়ক অবরোধ করেন চালকরা। মাজার রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর এলাকায়ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, শিয়া মসজিদ, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় সকাল ১০টা থেকেই তারা অবস্থান নেন। বিকাল থেকে বন্ধ থাকে এসব সড়ক। এরমধ্যে গাবতলীগামী সড়ক, কেরানীগঞ্জ সড়ক, সদরঘাট থেকে আসা সড়কটিও বন্ধ ছিল। মালিবাগ, খিলগাঁও, বৌদ্ধমন্দির এলাকায়ও অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় এসব এলাকার যানচলাচল। এ সময় বেশ কয়েকটি বাস ও টিসিবি’র একটি ট্রাকসেলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারী ব্যাটারি রিকশাচালক আশরাফুল বলেন, হঠাৎ করে সব ব্যাটারি রিকশা বন্ধ না করে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো বন্ধ করা হোক। কিছু মডেল আনা হোক যেগুলোর ব্রেকিং, ফিটনেস ভালো। ড্রাইভারদের প্রয়োজনে ট্রেনিং দিয়ে লাইসেন্স দেয়া হোক। রিকশাগুলো একটা নিয়মের মধ্যে আনা হোক। কিন্তু সব রিকশা বন্ধ করলে আমরা কীভাবে আয় করবো। মিরাজুল নামের আরেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বলেন, সব গাড়িতেই তো দুর্ঘটনা হয়। বাসে দুর্ঘটনা হলে আরও বেশি মানুষ মারা যায়। বাস তো বন্ধ করা হয় না। তাহলে আমাদের রিকশা কেন। আমাদের রিকশা বন্ধ করা যাবে না। খিলগাঁওয়ে আন্দোলনরত আরেক রিকশাচালক বলেন, যেখান থেকে রিকশা তৈরি হয় সেখানে বন্ধ করেন। তাহলে তো আমরা কিনতে পারতাম না। ঋণ করে রিকশা কেনার পর এখন বন্ধ করে দিলে এই টাকা পরিশোধ করবো কীভাবে। সংসার চালাবো কীভাবে। এদিকে এসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ করায় রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আবার কিছু এলাকায় তৈরি হয় যানবাহন সংকট। টানা ৬ ঘণ্টা এই ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরের মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে আটকে থাকতে হয় দূরের যাত্রীদের। অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দেন তাদের গন্তব্যে। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ ও মোটরযান চালকরা। তারা বলছেন, রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিক রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। ঢাকাজুড়ে এসব রিকশার ছড়াছড়ি। এতে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। এছাড়া ব্যাটারিরিকশা চালকদের এই আন্দোলনও অযৌক্তিক। তারা সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান নেটিজেনরা। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা সরে যাওয়ায় স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি। শুরু হয় সড়কের যান চলাচল। ওদিকে রাজধানীর মহাখালী ও খিলগাঁও এলাকায় রেলপথ অবরোধের কারণে গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। এতে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ব্যাটারিরিকশা চালকদের রেললাইন থেকে সরিয়ে দেয়ার পর এদিন বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনের প্লাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের। কমলাপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, যাত্রী ও ট্রেনের নিরাপত্তার কারণে প্রায় সোয়া ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়েছে ট্রেন। বিকালে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ঢাকামুখী ট্রেনগুলো আসতে শুরু করেছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিলম্বে থাকা জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথম ছেড়ে যায়। এছাড়া বিলম্ব হয়েছে একতা, কিশোরগঞ্জ, জয়ন্তিকা ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের। এর আগে সকালে তিনি জানান, অটোরিকশা চালকরা রেললাইনের ওপর অবরোধ করে আন্দোলন করছে। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ১০টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। সকাল ১০টার পরে কোনো ট্রেন ঢাকা স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়নি এবং আসেওনি। গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকায় তিনদিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এই আদেশের পর বুধবারও রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ, মিরপুর, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। |