/ মতামত / বিশ্ব অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রভাব ও বৈশ্বিক অস্থিরতা
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রভাব ও বৈশ্বিক অস্থিরতা
রায়হান আহমেদ তপাদার:
|
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে করোনার পর যুদ্ধবিগ্রহ সামগ্রিক ভাবে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আরো অনগ্রসর এবং জীবনযাত্রার মানকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহর মৃত্যু যেন অনেকটাই যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে। এদিকে এক শ্রেণির মুনাফাখোর ও প্রপঞ্চক আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নানাবিধ সংকটের মোকাবিলার পাশাপাশি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধবিগ্রহের কারণে আতঙ্কিত হয়ে ওঠছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়ার ফলে মানুষের মধ্যে যে অসুহিষ্ণুতা তৈরি হচ্ছে এবং ঘুনেধরা সামগ্রিক বৈশ্বিক পটভূমিতে অনগ্রসরমানতায় মানবীয় মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ঘটছে তা থেকে বিশ্ব বেরিয়ে আসতে পারছে না। অন্যদিকে বিশ্বের কিছু শক্তিশালী দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিকলাঙ্গ হওয়াতে অন্য দেশের উপর মোড়লিপনা করতে ছাড়ছে না। তারা ভাবছে তাদের দেশে যে পুঁজির ঘাটতি রয়েছে তা উন্নয়নশীল দেশ থেকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে অনৈতিকভাবে পূরণ করার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা যুদ্ধবিগ্রহের কারণে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার প্রবৃত্তি ২০২৪-এ ১.৯% হ্রাস পাবে-যা ২০২২ সালে ৬% ছিল-যখন গালফ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহ তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে লাভবান হয়েছিল। আসলে যুদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশু সবার জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে কর্মবাজার সংকুচিত হয়ে পড়ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে দুর্নীতি ও কালোবাজারি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের জীবনধারণ ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। উন্নয়নহীনতা এবং বণ্টনব্যবস্থায় অসাম্য সাধারণ মানুষকে একেবারে অন্ধকারের গহ্বরে ঠেলে দেয়। এর মধ্যে যুদ্ধ হলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মানুষের জন্য। যুদ্ধে নিহত-আহত সবাইকেই মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হয়। আসলে যুদ্ধে একটি দানব সৃষ্টি হয় যাতে সবাইকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলো বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে বৈশ্বিক জিডিপির বড় ধরনের সংকোচন হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থনীতির এই সংকোচনের পরিমাণ ইউরোপের দুই বড় দেশ ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত জিডিপির সমান হতে পারে। নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। এই কারণে এমন উদ্বেগ বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যত পণ্য আমদানি করে, তার ওপর সর্বজনীন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আছে। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে এই শুল্ক আরোপ হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, শুল্ক হলো অভিধানের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ। তাঁর এই মন্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এর আগেও তিনি এমন কাজ করেছেন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তিনিই শুরু করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসনও তা অব্যাহত রেখেছে। আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য পরিকল্পনার প্রভাব কী হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলে বা বড় পরিসরে শুল্ক আরোপ করা হলে বিশ্ব জিডিপি প্রায় ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।সম্প্রতি অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদপত্র দ্য মার্কার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েলি সরকার কয়েক মাস আগে গঠিত নাগাল কমিশনকে প্রধান প্রধান অস্ত্র চুক্তির অনুমোদনে দ্রুত সিদ্ধান্তের সুবিধার্থে প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে পরামর্শ দিতে অনুরোধ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক গবেষণাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ইয়োসি কুপারওয়াসার দেশের সেনাবাহিনীর সামনে চ্যালেঞ্জের মাত্রা বোঝাতে গিয়ে বিষয়টি সামনে এসেছে। ইসরায়েল হায়োম পত্রিকার একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেল আবিবের কৌশলটি ইরান অক্ষকে দুর্বল করা। এই কৌশলের মধ্যে রয়েছে উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরে যেতে জিম্মিদের মুক্ত করতে উত্তরাঞ্চলের হুমকি বন্ধ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের হুমকি অপসারণ করতে নিজেদের সক্ষম করার জন্য উত্তর থেকে হুমকি দূর করা। এ সবই একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ইঙ্গিতবহ, যেখানে ক্রমবর্ধমানভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবগুলো ইঙ্গিত দেয়, লেবাননও হয়তো ইরানের সঙ্গেও যুদ্ধ বাড়ানোর খরচ হবে ব্যাপক, যা ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য ইসরায়েলের বর্ধিত সামরিক ব্যয়ে খানিকটা হলেও বোঝা যাচ্ছে। যদিও ইসরায়েলি যুদ্ধের বাজেট বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন পূর্বাভাসগুলো একটি ইঙ্গিত দেয়। এ বছর বর্তমান ব্যয় ৩০ বিলিয়ন শেকেল বাড়বে। এটি এমন একটি সংখ্যা, যেখানে প্রাথমিকভাবে সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ এবং সেনাদের কাজের জন্য ক্ষতিপূরণ সংরক্ষিত থাকবে। একদিকে কমিশনের সুপারিশের বিশদ বিবরণ গোপনীয় থাকবে; আর এদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার কমিশন থেকে উন্নত অস্ত্রের ব্যবহারের শিগগির বরাদ্দ চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাদ্দগুলো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে এবং কমপক্ষে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাস পর্যন্ত চলবে–এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি। এমনকি লেবানন ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আগেও ব্যাংক বুঝতে পেরেছিল, সব ধরনের আশা ছাড়িয়ে দেশটির সামরিক ব্যয় বেড়েছে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ইসরায়েলের ২০২৪ সালের বাজেটে রাজস্ব ঘাটতির কারণে আগে থেকেই ০.৬ শতাংশ বাড়াতে উৎসাহিত করেছিল, যা মোট দেশীয় পণ্যের ৭.২ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে। এই বছর ইসরায়েলের হালনাগাদকৃত সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন শেকেল অর্থাৎ ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে সীমান্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের স্থায়ী বাস্তুচ্যুতির খরচ ৩ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৫ বিলিয়ন শেকেল হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ১.৫ বিলিয়ন শেকেলে অর্থাৎ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয়,স্থানীয় কর থেকে রাজস্বের একটি উল্লেখ যোগ্য বৃদ্ধি সামগ্রিক বাজেটে সামরিক ব্যয়ের চাপ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। এখানে আসন্ন মার্কিন আর্থিক সহায়তার কোনোটাই হিসাবে করা হয়নি। এদিকে ঘাটতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় তার বহু বার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য মোট ৮৩ বিলিয়ন শেকেলে অর্থাৎ ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত মার্কিন সামরিক সহায়তা সংগ্রহের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬ বিলিয়ন শেকেল এ পর্যন্ত খরচ করা হয়েছে। ইসরায়েল আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ভিত্তিতে সামরিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। দীর্ঘপাল্লার আঞ্চলিক যুদ্ধ অগ্রাধিকার দিয়ে স্থল ও নৌবাহিনী উভয়ের ওপরই তারা মনোযোগ দেবে। ইসরায়েলের উত্তর ফ্রন্টে মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধটি তার আঞ্চলিক পরিকল্পনার একটি মাত্র অংশ। উদ্দেশ্য ইরানের তৈরি প্রতিরোধের অক্ষকে ভেঙে ফেলা এবং সম্মুখযুদ্ধের ঐক্য কৌশল দুর্বল করা। গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘ সময়ের জন্য চলতে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হয়তো ভূখণ্ডের উত্তর অংশে জাতিগত নির্মূল অভিযানের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে দখলের প্রচেষ্টা থাকবে। ইসরায়েলি অর্থনীতির শক্তি ও রিজার্ভ সম্পদ সত্ত্বেও তেল আবিব ক্রমবর্ধমানভাবে সামরিক, আর্থিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে মার্কিন সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। এভাবে ইসরায়েলের যে কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধ মূলত মার্কিন যুদ্ধ বলেই বিবেচিত হবে। কারণ,তেল আবিব ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করে তাদের শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ও বাণিজ্যের গ্লোবাল মেল্টডাউনে সারা বিশ্বব্যাপী খরা চলছে। সুযোগ বুঝে যারা উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী তারা সমগ্র বিশ্বে তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রাত্যহিক পর্যায়ে ব্যবহারযোগ্য পণ্য থেকে আরম্ভ করে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ-এমনকি উড়োজাহাজে পণ্যের পরিবহণের ক্ষেত্রেও উচ্চমূল্যে কয়েকগুণ হারে বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে দ্রব্যের দামের পদ্ধতি বিলুপ্ত করে বরং একচেটিয়া মূলক কালোবাজারি ও চোরাকারবারির মতো দ্রব্যের দাম ক্রেতাদের উদ্দেশে হাঁকানো হচ্ছে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল বনাম প্যালেস্টাইনের যুদ্ধের কারণে এ অঞ্চল থেকে বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়ে বিশ্বজুড়েই তেল সরবরাহজনিত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণে যারা পূর্বের তেলের দাম দিয়েছে এবং বর্তমানে যে তেলের দাম পরিশোধযোগ্য তার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স হ্রাস পাচ্ছে।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একের পর এক বৈশ্বিক শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহ জড়িয়ে পড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন ইসরায়েল-প্যালেস্টাইনের কারণে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে সংঘাত আরো বাড়বে এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহ তাদের আধিপত্য ছোটো রাষ্ট্রসমূহের ওপর প্রভাব বিস্তার ঘটাতে থাকবে। ইরানও যদি যুদ্ধের মধ্যে লিপ্ত থাকে তবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সংঘাতময় পরিবেশের কারণে তেলের দাম আরো বেড়ে যাবে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ উন্নত উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশেও তা অনুভূত হবে। যদি যুদ্ধ দীর্ঘদিন চলে এবং আন্তর্জাতিক নেতারা যদি ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঋণ গ্রহণের খরচ আন্তর্জাতিকভাবে আরো বেড়ে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের অর্থায়ন করার ক্ষমতা কমে যাবে। এমনকি দ্রব্যের দাম উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে হাইপার মূল্যস্ফীতি হয়ে ওঠবে। সামনে সম্ভাব্য আরো ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কায় আন্তর্জাতিকভাবে শ্রম বাজারে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে তার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকেরা কর্মচ্যুত হয়ে দেশে ফেরত চলে আসবে। আবার বিভিন্ন রাষ্ট্রের রপ্তানির সক্ষমতাও হ্রাস পাবে। বিশ্বে এই মুহূর্তে সাধারণ জনমানুষ ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের যুদ্ধের বিপক্ষে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কতিপয় পশ্চিমি রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে নতুন করে ভূ-রাজনীতিক এবং আর্থরাজনীতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে; যা বিশ্বকে একটি দ্বিধাবিভক্ত আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, আবাসন, পয়ঃনিস্কাশন, ভ্রমণ, দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর ঘটে চলেছে। বৈশ্বিক এই যুদ্ধসমূহ পরিবার, সমাজব্যবস্থা, মানুষের মতাদর্শ,জীবন বোধ, সমাজবোধ আন্তর্জাতিকরণ ব্যবস্থাকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে। এর ফলে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে, মনোবিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গণতন্ত্রায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মনুষত্ব একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের জন্য শ্রমের মজুরির দাম এখন ক্রমাগতই কমে যাচ্ছে।জীবন বোধ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে গিয়ে বিশ্ব ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিকরণ যে কত ঠুনকো-তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। যুদ্ধের ফলে শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে হয় অসহিষ্ণুতা দেখা দেয় অথবা মনোবিকারের সৃষ্টি হয়। যাইহোক, সমগ্র বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ চলছে এবং চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং প্যালেস্টাইনের উপর ইসরায়েলিদের যে বর্বর আঘাত চলছে বর্তমানে; তা এখনই বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনীতিতে কোন সুবাতাস আসবে বলে মনে হচ্ছে না। লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক |