/ স্বাস্থ্য / যেসব খাবার মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে এড়ানো উচিত
যেসব খাবার মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে এড়ানো উচিত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
খাবারের প্রভাব দেহে পড়বে- সেটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো খাবার যে ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতায় বাধা তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে কোলন বা মলাশয়ে ক্যান্সার। ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডা হেল্থ’য়ের করা সাম্প্রতিক গবেষণায় ফলাফল থেকে দাবি করা হয়, অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস, প্রদাহ এবং টিউমারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আরেকটি অত্যাবশকীয় ফ্যাটি অ্যাসিডস ওমেগা থ্রি’র কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। ‘ব্রিটিশ সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি’র ‘গাট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার সহকারী জেষ্ঠ্য গবেষক ডা. টিমোথি ইয়েটম্যান সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমাদের হজমতন্ত্রে সবসময় ‘মিউটেশন’ বা পরিবর্তন ঘটছে। আর সাধারণত বিষাক্ত পদার্ধ বের করে দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করে যাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।” “তবে ‘ওমেগা-সিক্সস’য়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে দেহ যদি প্রায় এক বছর ধরে দীর্ঘকালিন প্রদাহের মধে থাকে, তবে আমি বিশ্বাস করি এই মিউটেশন বা পরিবর্তন দেহের যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে রোধ করে দেয়”- বলেন ’ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডা অ্যান্ড দ্য টাম্পা জেনারেল হসপিটাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের অধ্যাপক। সাধারণত অতিপ্রক্রিয়াজত খাবার ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের উৎস। এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ডাকোটা’র ‘স্যানফোর্ড স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘ইন্টার্নাল মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক ডা. বিল হ্যারিস মন্তব্য করেন, “তবে ওমেগা সিক্সস’কে দোষ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, দোষ হল ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের ঘাটতি।” অত্যাবশকীয় ফ্যাটি অ্যাসিডস বলতে যা বোঝায় ওমেগা-থ্রি এবং ওমেগা-সিক্স, দুই ধরনের পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডস মানব শরীরের জন্য প্রয়োজন। যেহেতু দেহ এই উপাদান দুটি তৈরি করতে পারে না, সেজন্য খাবার থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। ওমেগা-থ্রিস বেশি পাওয়া যায় চর্বিযুক্ত মাছ থেকে, যেমন- স্যামন। উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে রয়েছে তিসির বীজ, চিয়া, আখরোট, পাইন নাট ইত্যাদিতে। এটা দেহের কোষ অক্ষুণ্ন রাখে, শক্তি যোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কামায়। আবার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ওমেগা-সিক্সস’য়ের প্রয়োজন রয়েছে। এটা চুল ও ত্বকের বৃদ্ধি, বিপাকক্রিয়া কার্যকর রাখা, হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। তবে ওমেগা-সিক্সস পরিবর্তিত হয়ে ‘প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স’ অণুতে পরিণত হতে পারে। যা প্রদাহের সংকেত দেয়। যদিও দেহে টিউমারের বিরুদ্ধে বা কোনো আক্রমণ দ্রুত প্রতিহত করতে এটা উপকারী। তবে কোনো কার্যকারিতা ছাড়া ধুকে ধুকে পড়ে থাকলে অবস্থা খারাপ করতে পারে। বিপজ্জনক অবস্থা সাধারণত মলাশয়েল ক্যান্সারকে বৃদ্ধ বয়সের রোগ হিসেবে দেখা হত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মলাশয় ও বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার শুধু বৃদ্ধদের নয়, তরুণদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। যারা মিলেনিয়ালস অর্থাৎ যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬’য়ের মধ্যে তাদের মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়াদের তুলনায় বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের তথ্যানুসারে অল্প বয়সি পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক। আর অল্প বয়সি নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের পরেই মারাত্মক হল মলাশয়ের ক্যান্সার। খাদ্যাভ্যাসে ওমেগা-ত্রিস বাড়ানোর পন্থা ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের তথ্যানুসারে- নানান রকম চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের উৎস। এরমধ্যে রয়েছে স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, সি-বাস, টুনা ইত্যাদি। শামুক ও ঝিনুক উৎকৃষ্ট উৎস। চাহিদা পূরণ করতে সপ্তাহে অন্তত দুদিন মাছ খেতে হবে। এছাড়া বাদাম ও বীজ ধরনের খাবার, চিয়া বীজ, তিসির বীজের গুঁড়া থেকেও মিলবে এই অত্যাবশকীয় অ্যাসিডস। দেহে ওমেগা-ত্রিস’য়ের ঘাটতি আছে কিনা সেটা বোঝা যাবে, পরীক্ষার মাধ্যমে। এজন্য চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে। আর ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। |