/ অপরাধ / নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতি: কাজ না করা ঠিকাদারকে দেন আড়াই কোটির টাকার বিল
নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতি: কাজ না করা ঠিকাদারকে দেন আড়াই কোটির টাকার বিল
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
কাজ না করেই এন কে করপোরেশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আড়াই কোটি টাকার বিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে। দেশের নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম স্থাপন কাজে এই অনিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া নেত্রকোনা জেলার দায়িত্বে থাকাকালীন তার তৃতীয় স্ত্রীর নামে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান খুলে নামমাত্র কাজ করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। এসব অনিয়ম দুর্নীতির কারণে নোয়াখালীর-১ আসনের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম চলতি বছর ১৩ মে নিজের প্যাডে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন মন্ত্রণালয়ে। নোয়াখালী জেলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম স্থাপন কাজ না করে বিল উত্তোলন ছাড়াও পাবনা, নেত্রকোনা জেলায় দায়িত্বে থাকাকালীন ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি কাজের কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজের স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাসুকা করপোরেশনে কাজ দেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে মন্ত্রণালয়। পরে এসব অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি সরবরাহ-১ শাখা থেকে ডিপিএইচইএর প্রধান প্রকৌশলীকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সখ্য করে টাকার বিনিময়ে তদন্ত কমিটির কাজ বন্ধ করতে তৎপরতা চালান তিনি। পরে মন্ত্রণালয় এসব অনিয়মের কারণে গত ২১ মে ঠাকুরগাঁও জেলায় বদলি করে; কিন্তু গত আট মাসেও সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে সরকারের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে ভ্রমণ এবং তথ্য গোপন করে একাধিক বিয়ে করে স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ পায় মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটি করে মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করা, একাধিক বিয়ে এবং ডা. সুমনা ইসলাম (সন্তানসম্ভবা) আহসান হাবীবের বিবাহিত স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীর প্রতি স্পর্শকাতর সময়ে যথাযথ দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে ২০২২ সালের ৯ মে বিভিন্ন অনিয়মসহ একাধিক বিয়ের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এসব বলা হয়েছে। আহসান হাবীব নেত্রকোনা জেলার দায়িত্বে থাকাকালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাসুকা করপোরেশনের কাছ থেকে কাজ দেওয়ার কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে আছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য যুগ্ম সচিব মো. তমিজুল ইসলাম খানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটি তার প্রমাণও পায়। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি কাজের টাকা ভাগাভাগি করে ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। শুধু তৃতীয় স্ত্রীর নামেই লাইসেন্স নিয়ে কাজ করছেন, তা নয়। আগের স্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনের নামেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে তিনি কাজ করেছেন। ডা. সুমনা ইসলাম বলেন, একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে তৃতীয় বিয়ে করে আমার সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছেন আহসান হাবীব। তৃতীয় বিয়ে করার পর জানাজানি হলে অস্বীকার করে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন ও হয়রানি করেছেন। এমনকি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। আমার নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে কাজের নামে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন। সেই টাকাও ফেরত দেননি। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব বলেন, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। আমার একাধিক স্ত্রী আছে। আমি তার বাসায় কাউকে পাঠাইনি। হুমকি-ধমকি দিইনি। ফ্ল্যাট দখল করার চেষ্টা, এটা মিথ্যা। এর আগে সে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করিয়েছে। সরকারি কোনো কাজে আমি অনিয়ম করিনি। কাজ না করে কোনো বিল উত্তোলন করিনি। |