/ জাতীয় / তীব্র গ্যাস সংকট, দিনের রান্না রাতে
তীব্র গ্যাস সংকট, দিনের রান্না রাতে
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। অনেক এলাকায় দিনভর গ্যাস থাকছে না। বিকালে বা সন্ধ্যায় চুলা জ্বলে। তাই বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা দিনের খাবার রাতে রান্না করে রাখছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। লাইনের গ্যাসে রান্না করতে না পেরে কেউ সিলিন্ডার কিনে এনেছেন, কেউ মাটির চুলায় রান্না করছেন। গ্যাস সংকটের কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও করছেন অনেকে। ঢাকার বেশির ভাগ বাসায় ভাড়ার সঙ্গে গ্যাসের বিলও দিতে হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, লাইনের গ্যাসের সংযোগ থাকার পরও অনেক বাসায় বাড়তি এলপিজি’র সিলিন্ডার রাখতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শনিবার সরজমিন ঘুরে মগবাজার, মীরবাগ, মধুবাগ, নয়াটোলা, নতুন রাস্তা, হাজীপাড়া, রামপুরা, মিরপুর-১০, কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেট, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে অনেকেই রান্না করছেন মাটির চুলায়। লাইনের গ্যাস না থাকায় হোটেলগুলোতে ভিড় বেড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস থাকলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় চাপ কম। পশ্চিম তেজতুরী বাজার গিয়ে দেখা মিলে আয়েশা বেগমের সঙ্গে। টিনের পাত্র দিয়ে চুলা বানিয়ে শুকনো কাঠ দিয়ে রান্না করছেন। তিনি বলেন, দু’দিন হলো গ্যাসের অবস্থা বলার মতো না। রান্না করতে পারছি না। যে চাপ তাতে রান্না করা যায় না। এই আসে গ্যাস আবার চলে যায়। উপায় না পেয়ে টিনের পাত্র দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করছি। আমি মেসে রান্না করি। রান্না না করলে সবাই না খেয়ে থাকবে নয়তো হোটেলে খেতে হবে। গার্ডেন গলিতে খাদিজা হোটেলের মালিক বাদশা মিয়া বলেন, দুই- তিনদিন হলো গ্যাসের যে অবস্থা তাতে দোকান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকায় গ্যাসের এমন সমস্যা মাঝে-মধ্যেই হয় এজন্য আমি বড় বড় সিলিন্ডার গ্যাস আগে থেকে কিনে বিকল্প রাখি। আমরা বিকল্প করে রান্না না করলে মানুষ খাবে কী? ফার্মগেটে চাকরিজীবী সাগর বলেন, আমি নিজে রান্না করে খাই। গ্যাসের দু’দিন হলো সমস্যা। এজন্য হোটেলে খাচ্ছি। যেটুকু গ্যাস আসে তাতে পানিও গরম করা যায় না ঠিকমতো। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সূত্রে জানা যায়, এলএনজি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। লাইনের কাজও চলমান অনেক এলাকায়। যার কারণে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত এই ভোগান্তি থাকার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মিরপর-১০ এর বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, শীত এলেই আমাদের এখানে গ্যাসের সমস্যা শুরু হয়। ৪ বছর হলো ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করছি। নিজেরা রান্না করে খাই। গ্যাসের চাপ ঠিকমতো না থাকায় রান্না করতে পারছি না। এখন হোটেলে খেতে হচ্ছে। বাসামালিক ঠিকই গ্যাসের টাকাও নিচ্ছেন। রনি আহমেদ বলেন, চাকরির প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় থাকা। গ্যাসের সংকটের কারণে রান্না করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। টাকারও সংকট থাকে ছাত্র জীবনে। এখন তো বেকার, এজন্য সবসময় বাইরে হোটেলে খেতে পারি না। গ্যাসের সংকট থাকায় রান্না করতে পারছি না দু’দিন হলো। কুড়িল বিশ্বরোডের বাসিন্দা দিপু হালদার বলেন, আমাদের এখানে গ্যাস আছে। তবে চাপ কম। রান্না করতে বেশি সময় লাগছে। তীব্র গ্যাস সংকট দেখা গেছে রাজধানীর শনির আখড়া, কোনাপাড়া, রায়ের বাগে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায় গ্যাস থাকে না বেশির ভাগ সময়। রাত ১২ টার পর গ্যাস আসে ভোর ৪টা পর্যন্ত থাকে এরপর চলে যায়। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে শনির আখড়া এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, আজকে তিন দিন ধরে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুরের পর হালকা হালকা করে আসে কিন্তু রান্না করা যায় না। খুব বিপদের মধ্যে আছি, বাধ্য হয়ে আজকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছি। গ্যাসের পেছনে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের বিল তো দিতে হচ্ছে সঙ্গে আবার গ্যাস সিলিন্ডার ও নিজের কেনা লাগছে। কোনাপাড়ার মুদিদোকানদার তারেক হোসেন বলেন, সকালে গ্যাস চলে যায় সারাদিন কোনো খবর থাকে না। রাতে আসে খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঠিকমতো রান্না করা যাচ্ছে না বাসায়। রায়ের বাজার এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা আছে। তার জন্য সবসময় গরম পানি এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে হয়। কিন্তু দিনের বেলায় গ্যাস না থাকায় রান্না করতে পারছি না। গভীর রাতে গ্যাস এলে রান্না করতে হয় তাছাড়া রান্না করা যায় না। গ্যাসের সমস্যা নিয়ে রাবেয়া ইসলাম নামে খিলগাঁও এলাকার এক গৃহিণী বলেন, গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ধরে চুলা জ্বালানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। কিছুদিন আগে সন্ধ্যার দিকে গ্যাস পাওয়া গেলেও গত দু’দিন ধরে সেটাও থাকছে না। এছাড়া আগে বেশি রাতে গ্যাস যখন থাকতো, তখন রাত জেগে রান্না করা যেতো। কিন্তু এখন তো গ্যাস একেবারেই নেই। রাতে অনেক সময় নিয়ে রান্না করে রাখলেও এই শীতের সময় সেই খাবার সকালে গরম করার মতো কোনো গ্যাস নেই। এছাড়া সাথী আক্তার নামে একজন কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমার প্রতিদিন সকালে ৯টায় ক্লাস থাকে। আগে মা আমাকে যাওয়ার আগে খাবার গরম করে দিতেন। কিন্তু এখন গ্যাস না থাকায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর প্রতিদিন বাহিরের খাবার খাওয়াও সম্ভব না। এমনকি কলেজ থেকে যখন বাসায় আসি, তখনও গ্যাস থাকে না। আমরা বড়রা না হয় বাহিরের খাবার খেয়ে বা রাতের ঠাণ্ডা খাবার খেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু আমার বোন ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ওকে তো গরম খাবার খাইয়ে স্কুলে পাঠানো লাগে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। রেজাউল করিম নামে একজন চাকরিজীবী বলেন, আগে স্ত্রী নাস্তা রেডি করে দিতেন। এখন গ্যাসের সমস্যা চলায় সেটাও পারছেন না। বাধ্য হয়ে বাইরে হোটেলে খেতে হচ্ছে। তিতাস গ্যাস সরবরাহ কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানী ঢাকায় গ্যাসের সমস্যা নতুন কিছু নয়, এটা বহুদিনের। কিছু এলাকায় চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবার কিছু এলাকায় লাইনে সমস্যা থাকায় বেশি চাপে গ্যাস দেয়া যায় না। এছাড়া পেট্রোবাংলা থেকেও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। এজন্যই একদিকে লাইনের সমস্যা আরেকদিকে সরবরাহ কম থাকায় সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। এছাড়া একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে। ৩১শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বুধবার (১লা জানুয়ারি) থেকে তিনদিন এক্সিরালেট এনার্জি পরিচালিত টার্মিনাল থেকে ৭২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ সময় অন্য টার্মিনাল থেকে দিনে ৫৭ থেকে ৫৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ সময় দিনে ১৫ থেকে ১৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যাবে। এতে দেশের কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এর জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা। |