/ অর্থনীতি / বাণিজ্য / বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্সে বাড়বে জনদুর্ভোগ
বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্সে বাড়বে জনদুর্ভোগ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
রাজস্ব আদায়ে অর্থবছরের শুরু থেকে ঘাটতির মুখে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার এখন ঘাটতি মেটাতে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আবার ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হলে জনদুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও কমেপ্রসার তৈরির প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তানুযায়ী তৈরি পোশাক, রেস্তরাঁ, মিষ্টিসহ অর্ধশতাধিক পণ্যের ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে জিরো (শূন্য) করে দেয়া হয়েছে। ওদিকে যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে সেসবের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই বলে জানিয়েছে এনবিআর। গত ৪ঠা জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর এ তথ্য জানায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো আলোচনা না করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি অবিবেচনাপ্রসূত। এতে নতুন করে সংকটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় মাধ্যম হচ্ছে ভ্যাট। বর্তমানে ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ লাখ ২৫ হাজার। এরমধ্যে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট দিয়ে থাকে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসার তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কেবল এই শিল্পের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে কিছু পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে এসব ভারী শিল্প দেশে স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্প স্থাপনে সরকার বিপুল পরিমাণ কর, ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। করছাড় দেয়ার ফলে এসব শিল্প এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণত এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ২০-২২ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে এতদিন তাদের কর কমানো ছিল। ওটাই বাড়ানো হয়েছে। মানে কর ছাড় প্রত্যাহার করে নিলো এনবিআর। এনবিআরের ওই আদেশ ২০২৫-২০২৬ করবর্ষ থেকে কার্যকর হবে, যা ২০৩২ সালে ৩০শে জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রজ্ঞাপনে বেশকিছু শর্তের কথা বলা হয়েছে। হঠাৎ পণ্যসেবায় ভ্যাট বৃদ্ধি: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎ ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ-এর অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক, এসি রেস্তরাঁ, মিষ্টি, নন-এসি হোটেলসহ ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশ হতে পারে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে গত সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। পণ্যসেবায় ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে এনবিআর’র ব্যাখ্যা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তানুযায়ী যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে সেসবের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ৪ঠা জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে তার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই। তাই সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না এবং মূল্যস্ফীতিতেও এর প্রভাব পড়বে না। জনস্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক করহারে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভ্যাট, আয়কর ও শুল্কবিষয়ক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সংবাদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: ব্যবসায়ীদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্যে হওয়া লোকসান এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভ্যাট হার বাড়ানোর মতো সহজ পথে হেঁটেছে সরকার। আবার ঘাটতি মেটাতে রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে বিকল্প কোনো পথ নেই। বাংলাদেশ রেস্তরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রেস্তরাঁ মালিকেরা উদ্বিগ্ন। এক ধাক্কায় ভ্যাট তিনগুণ বাড়ানো হলে ব্যবসায় ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। ভ্যাটের সঙ্গে আয়করও বেড়ে যাবে। ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায় উৎপাদন ও পরিচালনার ব্যয় বাড়াবে, যা শেষপর্যন্ত পণ্যের মূল্যে প্রতিফলিত হয়ে মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করবে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। |