/ বিশেষ / বাংলাদেশ সরকার ও জাইকা’র মধ্যে রেকর্ড অব ডিসকাশন স্বাক্ষর
উপকূলীয় সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনার জন্য
বাংলাদেশ সরকার ও জাইকা’র মধ্যে রেকর্ড অব ডিসকাশন স্বাক্ষর
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
‘প্রজেক্ট ফর এনহান্সিং কোস্টাল রেসিলিয়েন্স থ্রু টেকনোলজি-বেইজড ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (এমওইএফসিসি) ও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের (বিএফডি) সাথে রেকর্ড অব ডিসকাশন (আর/ডি) স্বাক্ষর করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। কারিগরি সহযোগিতামূলক এ চুক্তির অধীনে, জাইকা বিএফডি -কে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামগ্রিকভাবে বন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। প্রকল্পটি চার বছরব্যাপী (মে ২০২৫ - এপ্রিল ২০২৯) চলবে এবং প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জাপানি বিশেষজ্ঞরা প্রধান কার্যালয় ও মাঠ পর্যায় হতে বিএফডি’র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কাজ করবেন। গতকাল (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত ইআরডি’র সম্মেলন কক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জাইকা বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ মিউরা মারি, ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ড. এ. কে. এম. শাহাবুদ্দিন; বিএফডি’র প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী; এবং এমওইএফসিসি’র যুগ্মসচিব ফাতিমা তুজ জোহরা। কারিগরি সহযোগিতামূলক এ প্রকল্পের লক্ষ্য বন ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিভিত্তিক পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে বিএফডি’র বনভূমির ভূপ্রকৃতিক বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহের একটি এবং এসব এলাকা ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে, উপকূলীয় অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উপকূলীয় বনভূমি, বিশেষত ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ ঝুঁকি প্রতিরোধে, বিএফডি উপকূলীয় বনায়ন সম্প্রসারণে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি এসব উদ্যোগের ভিত্তিতে অত্যাধুনিক বন পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি শনাক্তকরণ ও গ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর পদ্ধতিতে উপকূলীয় অঞ্চলে বন সম্প্রসারণ নিশ্চিত করবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ মিউরা মারি প্রকল্প প্রণয়নে প্রচেষ্টার জন্য ইআরডি, এমওইএফসিসি ও বিএফডি’র উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এ কারিগরি সহযোগিতা প্রকল্প বনাঞ্চল খাতে বাংলাদেশের সাথে জাইকার সহযোগিতামূলক প্রকল্প হিসেবে প্রথম উদ্যোগ, যা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, স্থানীয় কমিউনিটির জীবিকার উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাপানে বন সংরক্ষণ প্রচেষ্টার উদাহরণ দিয়ে তিনি এ প্রকল্প সফল করে তোলার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. এ. কে. এম. শাহাবুদ্দিন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য জাইকা, এমওইএফসিসি ও বিএফডি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এমওইএফসিসি ও বিএফডি-কে অনুরোধ করেন। বিএফডি’র প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ এলাকা বন দ্বারা আচ্ছাদিত। বন সম্পদের পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির অভাব; তাই, বিএফডি এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং বাংলাদেশে বনাঞ্চল খাতে জাইকার প্রথম সহযোগিতামূলক প্রকল্পের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত।” এমওইএফসিসি’র যুগ্মসচিব ফাতিমা তুজ জোহরা বলেন, “বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা অত্যন্ত তীব্র। দুর্যোগ প্রতিরোধে বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা, উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে, প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন সম্পদ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে, যার মধ্যে বিএফডি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মন্ত্রণালয় থেকে আমরা জাইকা’র সাথে আরও সহযোগিতামূলক প্রকল্প করার ব্যাপারে প্রত্যাশী।” |