/ জাতীয় / ইস্যু স্থানীয় নির্বাচন, নানা আলোচনা
ইস্যু স্থানীয় নির্বাচন, নানা আলোচনা
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার। সরকারের কাছে তারা নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। দলগুলো মনে করে, নির্বাচিত সরকারই দেশকে সবদিক থেকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৬ই ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রাথমিক রোডম্যাপ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার এমন টানাপড়েনের মধ্যে নতুন করে সামনে এসেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যু। বুধবার প্রধান উপদেষ্টা জানান, সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বির্তক তৈরি হয়েছে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ না। অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করেন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন একটি রিহার্সেল হতে পারে। এই নির্বাচন আয়োজন করলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মানুষ ধারণা নিতে পারবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দল ও ভোটারদের প্রস্তুতিও ভালো হবে। সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে এটা নিয়ে তারা অগ্রসর হতে পারবেন। বুধবার প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারকে বলেন, সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেন স্থানীয় সরকার সত্যিই স্থানিক থাকে এবং একটি কার্যকর সরকার নিশ্চিত করা যায়। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, প্রশাসক দিয়ে আমরা জনগণের কাছে সেবা পৌঁছাতে পারবো কিনা- এই বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, অনেক সরকারি সেবা জনগণ নিয়মিত পাচ্ছে না। এটা একটা প্রস্তাবনা আকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি হয় তাহলে সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে এটা নিয়ে আমরা অগ্রসর হতে পারবো। এর আগে গত ৬ই জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করলে খরচ অনেক কম হবে। তাই এ দুই নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। তবে বিতর্ক উঠলে বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় সংস্কার কমিশন জানায়, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন কখন করা উচিত এ বিষয়ে সুপারিশ করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়। বিষয়টি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। তারা হয়তো রাজনৈতিক সমাজ ও সুশীল সমাজের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত নিতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা গত ১৬ই ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। সরকারপ্রধানের এমন বক্তব্যে আশাহত হয় বিএনপি। দলটির মহাসচিব ১৯শে ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২৫ সালের শেষ অথবা ২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আগে জাতীয় নির্বাচন দেয়া। এ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার চেইন ভেঙে পড়বে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে দলগুলোর। অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও সরকার মনে করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জরুরি। প্রশাসক দিয়ে জনগণ প্রকৃত সেবা পাচ্ছে না। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা অযাচিত হস্তক্ষেপ করে থাকেন। যার কারণে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা যায় না। তাই তারা চান স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা উচিত জনগণের স্বার্থে। এ ব্যাপারে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এ ধরনের সরকার স্থানীয় নির্বাচন করে না। যদি তারা এ রকম উদ্যোগ নিয়ে থাকেন তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। অতীতেও এ ধরনের সরকার এমন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেনি। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তিনি কোনটা আগে কোনটা পরে সেটি স্পষ্ট করেননি। আমি মনে করি এখানে জাতীয় নির্বাচন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত জনগণের প্রতিনিধির হাতে দেশ শাসনের ভার আসবে ততই ভালো হবে। জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ শাসনের রুট তৈরি হবে কেবল জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই আগে জাতীয় নির্বাচন পরে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। আর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা ঠিক হবে না। |