/ রাজনীতি / দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির পাশে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির পাশে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
বিলম্ব না করে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। তাই এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ঐকমত্যের আহ্বানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিএনপির মতো নির্দিষ্ট মাসের কথা না বললেও আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সালের পরে যাওয়া ঠিক হবে না। সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ে আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা। তবে কোনো-কোনো রাজনৈতিক দল মনে করে, নির্বাচন নিয়ে বেশি তাড়াহুড়া না করে সংস্কারকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া করলে একটা ভুল ও অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। আবার কেউ-কেউ মনে করেন জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশে বর্ষাকাল। তাই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর শুষ্ক মৌসুমে নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবসময় এই সময়ে জাতীয় নির্বাচন হয়ে আসছে। কয়েকজন নেতা মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সফল হতে পারছে না। তাই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই হবে তাদের জন্য সম্মানজনক। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, আমরা মনে করি, আগামী ৫ থেকে ৭ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। বাকিটা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সেটা করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সেইভাবে প্রস্তুতি নিতে বলতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়ে গেছে, এখন তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সেটা যাচাই-বাচাই করে চূড়ান্ত করবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের কমিশন গঠন ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব। আমাদের সবার মধ্যে একটা ঐকমত্য তো আছেই। সবমিলিয়ে ৭ থেকে ৮ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তা ছাড়া একটা অনির্বাচিত সরকার দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর এই সরকারের স্কোর তো ভালো না। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবে ততই এই সরকারের জন্য সম্মানজনক হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচন চাইতে পারে। তা ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের মূল দাবি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ, গত ৩ নির্বাচনই হয়নি। তাই মানুষের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। কিন্তু যেহেতু গত ১৬ বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা-প্রশাসন সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এগুলো সংস্কার দরকার। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে একটা কমিটমেন্ট দিতে পারে যে, পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এই সংস্কারগুলো করবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টার ভিন্নমত জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তারা যদি নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেয়, তাহলে এটা আর হতো না। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে পারলে এই সরকার কেন পারবে না। এই সরকারের ৫ মাস শেষ হয়ে গেছে, আগামী ৫ মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারার কিছুই নেই বলে মনে করেন এই বামপন্থী নেতা। বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, বৈষম্যবিরোধী নেতাদের এমন শর্তের কারণে গণঅভ্যুত্থানের আগে জনগণের মধ্যে যে ঐক্য ছিল সেটিতে এখন ফাটল ধরেছে বলে মনে করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আমরা সবসময় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে আসছি। তবে, তাড়াহুড়া করা যাবে না। কারণ তাড়াহুড়া করলে ভুল হবে, একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। সংস্কারকে প্রাধান্য দিতে হবে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমরা মনে করি ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এরপরে যাওয়া একদম ঠিক হবে না। তবে, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বর্ষাকাল। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস অনুযায়ী নভেম্বর-ডিসেম্বরে শুষ্ক মৌসুমে নির্বাচন হওয়া উচিত হবে। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করার কথা বলে আসছি। গত ৩ জানুয়ারি আমাদের সমাবেশ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলাম। সেটি তো পার হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, ২৫ সালের পরে কোনোভাবেই নির্বাচন যাওয়া উচিত না। শুধু তাই নয়, এই বছরের ডিসেম্বরের অনেক আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত। আশা করি সরকার খুব দ্রুতই আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে। বাংলাদেশ এলডিপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, গত ২৭ জুন প্রতিনিধি সভায় আমরা জুনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম। এখনো সেই দাবিতে আছি। কারণ অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করেছে। কিন্তু গত ১৫ বছর যেহেতু স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা নির্বাচন কমিশন-প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে, সেটা ২ থেকে ৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না। তাই আমরা মনে করি জুলাই-আগস্টে নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এটা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে প্রশ্ন তুলছে, সেটির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ভালো হবে বলে মনে করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ কাদের। জাতীয় সরকারের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, যুগে-যুগে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে আসছে। তাই আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। তারপর নির্বাচিত সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করবে। |