/ শিক্ষা / ‘আওয়ামী লীগপন্থি’ রিয়াজুলই থাকছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান!
‘আওয়ামী লীগপন্থি’ রিয়াজুলই থাকছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান!
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন আগামীকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি)। নতুন বছরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই দিতে না পারায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ফের চেয়ারম্যান পদে বহাল রাখতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, অধ্যাপক রিয়াজুল হাসানের চাকরির বয়স শেষ। তাকে চেয়ারম্যান পদে রাখতে এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে আগামী তিন মাসের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ। রোববার (২৬ জানুয়ারি) ফাইলে সই হলে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুবিধাভোগী শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও কর্মকর্তারা। এবার তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তোড়জোড়ের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, তদবির করে তিন মাসের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন অধ্যাপক রিয়াজুল। নিজেকে ‘বৈষম্যের শিকার’ এবং ‘আওয়ামী লীগবিরোধী’ হিসেবে নানান জায়গায় উপস্থাপন করে মেয়াদ বাড়াতে তৎপর তিনি। তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসানের দাবি- তিনি কোনো তদবির করেননি। সরকার যদি তাকে এ পদে রাখে তাহলে তিনি থাকবেন। না রাখলে নিয়ম মেনে অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ এনসিটিবিতে সদস্য (প্রাথমিক) পদ পান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান। ডা. দীপু মনির সময়েও তিনি সাড়ে চার বছর এ পদে চাকরি করেন। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম ও সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে তাকে ওএসডি করা হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তদবির করে তিনি নিজেকে ‘বৈষম্যের শিকার’ দাবি করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় তাকে ওএসডি করা হয়। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তদবির করে তিনি নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে কর্মজীবনে তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের পরিচয়ে লোভনীয় ও লাভজনক পদ বাগিয়েছেন। তিনি শেরপুর সরকারি কলেজ ও ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ পদেও ছিলেন। তাছাড়া তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর আপন মামাতো ভাই। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার কারণে একাধিকবার বিদেশ সফরের সুযোগও বাগিয়ে নেন। জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য কোনো তদবির করিনি। সরকার রাখলে থাকবো, না রাখলে চলে যাবো। অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে কোনো কথা বলবো না।’ বই পায়নি শিক্ষার্থীরা, পদে বহাল ব্যর্থ চেয়ারম্যান! বছরের শুরুতে এবার শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবই হাতে পায়নি। জানুয়ারি মাস শেষ হতে চললেও মাধ্যমিকের মাত্র ১১ কোটির মতো বই ছাপা হয়েছে। এখনো ছাপা বাকি ২০ কোটি বই। প্রাথমিকেরও তিন কোটি বই ছাপা বাকি। তাছাড়া ডিসেম্বরেই আরেকটি কারিকুলাম কমিটি করার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। কবে শতভাগ শিক্ষার্থী বই পাবে, তা জানেন না খোদ পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তারাই। অভিভাবকরা বলছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান। তারপরও ব্যর্থ এ চেয়ারম্যানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বলেছিল, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দুর্নীতি বেশি হয়। তারা সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করবেন। এনসিটিবি থেকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ সরানোর দাবি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরও চলতি শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এখনো আওয়ামী বয়ান ও ইতিহাস বিকৃতি বহাল রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) যে বা যারা পাঠ্যবই পরিমার্জনের নামে আওয়ামী বয়ান প্রচারে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। ইউট্যাব সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খানের সই করা বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে সই করেছেন দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৩ জন শিক্ষক। বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, ‘পাঠ্যপুস্তকে আওয়ামী বয়ান সন্নিবেশন করে ইতিহাস বিকৃত করার সঙ্গে জড়িত ও বিগত দেড় দশক ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ভূমিকা পালনকারী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) কর্মরত দোসরদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে ব্যর্থতার সঙ্গে ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এনসিটিবি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ওখানে (এনসিটিবি) তো কাউকে এখনো নিয়োগ বা মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। হ্যাঁ, তার (অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান) চাকরির সময় শেষ। বই নিয়ে তো এবার অনেক ঝামেলা। কীভাবে বইয়ের কাজগুলো শেষ করা যায়, কাকে দিলে ভালো হবে- সেটা হিসাব-নিকাশ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ |