আজ শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
 / ফিচার / আল জাজিরা’র রিপোর্ট: আওয়ামী লীগে বিভক্তি চ্যালেঞ্জের মুখে হাসিনা
আল জাজিরা’র রিপোর্ট: আওয়ামী লীগে বিভক্তি চ্যালেঞ্জের মুখে হাসিনা
নতুন বার্তা, ঢাকা:
Published : Tuesday, 28 January, 2025 at 12:44 AM
আল জাজিরা’র রিপোর্ট: আওয়ামী লীগে বিভক্তি চ্যালেঞ্জের মুখে হাসিনাজুলাই বিপ্লবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের নেতৃত্বের যবনিকাপাত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকে রাজনীতিতে একটি বড় শক্তি হিসেবে তার দল এখন টুকরো টুকরো জোড়া লাগানোর লড়াই করছে। ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা নেই দলের এমন হোমরাচোমরা, মধ্যম পর্যায়ের নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে তীব্র বিভক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। এসব নেতাকর্মী বিশ্বাস করেন,  কোথায় ভুল হয়েছে তা পেছন ফিরে দেখা দরকার আওয়ামী লীগের। তারা আরও মনে করেন- এটাই একমাত্র পথ। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক দলটি তাদের সমস্যার সমাধান করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে অনেক নেতাকর্মী কথা বলেছেন। অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘আফটার দ্য ব্লাডশেড: ক্যান বাংলাদেশ’জ আওয়ামী লীগ রিসারেক্ট ইটসেল্ফ?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যখন ২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রংপুরে নিহত হন আবু সাঈদ, তখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ঠাণ্ডা মেজাজে আরাম করছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে তার অফিসে কোনো স্থানীয় কবি কবিতা পাঠ করে শোনাচ্ছিলেন। আবৃত্তি শেষে তিনি বলে ওঠেন- ‘ওয়ান্ডারফুল’। এর কিছু সময় পরে আবু সাঈদ হত্যার তথ্য কোনো এক সহযোগী একজন নেতাকে জানান। কিন্তু তিনি তা উড়িয়ে দেন। বলেন- ওহ, কিছুই হবে না। নেতা (হাসিনা) সব কিছু ঠিক করে ফেলবেন। এর মধ্যদিয়েই প্রকাশ পেয়ে যায় ওই সময় আওয়ামী লীগের উপরিমহলের মনোভাব। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে কি হচ্ছে, তা তারা মোটেও আমলে নেননি। এর তিন সপ্তাহেরও কম সময় পরে কর্তৃত্ববাদ ও নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান। আইনপ্রয়োগকারীদের হামলায় বিক্ষোভকারী এবং পথচারীদের কমপক্ষে ৮৩৪ জন প্রাণ হারান। এই বিক্ষোভ শুরু হয় ১লা জুলাই। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তার ইতি ঘটে। তবে হামলায় আহত হন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। তার মধ্যে আছেন শিশু ও নারী। দলটির এই পরিণতির জন্য দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। অজ্ঞাত স্থান থেকে ১৬ই জানুয়ারি আল জাজিরাকে ফোনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এটা শিগগিরই প্রমাণ হবে। তবে তিনি কাকে বা কোন দেশকে দায়ী করছেন সুনির্দিষ্টভাবে তা বলেননি। তার এমন মন্তব্যের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের দলের নেতৃত্বের যে ব্যর্থতা এবং জনগণের অভিযোগগুলো সমাধানে তাদের যে অক্ষমতা- তা ফুটে ওঠে এমন প্রত্যাখ্যানের মধ্যদিয়ে। পক্ষান্তরে তাদের এমন মন্তব্যে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এসব নেতাকর্মীর অনেকেই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার ভয়ে হয়তো আত্মগোপনে আছেন না হয় আতঙ্কিত। তারা একটি সুসংগঠিত দল থেকে ‘টপ-ডাউন’ কাঠামোতে রূপান্তরের কারণে সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, এ কারণে দল জনগণের সেন্টিমেন্ট হারিয়েছে। ৫ই আগস্ট যখন জনতার বিশাল ঢেউ শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে গণভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে উড়াল দেন। খুলনায় আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্থানীয় সিনিয়র একজন নেতা বলেন- ‘যখন টেলিভিশনে নাটকীয় ওই পলায়নের দৃশ্য সম্প্রচার হচ্ছিল, তখনো কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে আমি খুলনার রাজপথে অবস্থান করছিলাম। আমি আমাদের একজন সিনিয়র নেতা, স্থানীয় এমপিকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার ফোন ছিল বন্ধ।’ তিনি বলেন- ‘ঠিক ওই মুহূর্তে আমার মনে হলো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে’। 

   
২০২৪ সালের ২৩শে অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষিদ্ধ করে ছাত্রলীগকে। এরপর খুলনার এক সময়ের ছাত্রলীগের প্রভাবশালী একজন নেতা নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার ভয়ার্ত সফরের বর্ণনা করেন। ভুয়া একটি পরিচয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। তার আগে তিনি পালিয়ে চলে আসেন গোপালগঞ্জে। তিনি বলেন- ‘আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ফোন নম্বর সহ সবকিছু পাল্টে ফেলেছি। বেঁচে থাকার জন্য একটি ছোট্ট ব্যবসা শুরু করেছি। দল আমাদেরকে পরিত্যগ করেছে। আর কখনো রাজনীতিতে ফিরবো না’। 
সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তাদেরকে পরিত্যাগ করার একই রকম অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। বহু নেতাকর্মী রয়েছেন নীরব। তবে আওয়ামী লীগপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহকারী সম্পাদক সামিউল বশির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রয়েছেন সরব। তিনি আল জাজিরাকে বলেন- প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (কমিটেড) নেতাকর্মীকে বছরের পর বছর একপেশে করে রাখা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে সুযোগ সন্ধানীরা এবং স্থানীয় এমপিদের পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাঠামোতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এর ফলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। একই রকম হতাশার কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের এক নেতা। তিনি নাম প্রকাশ করতে চান না। তিনি বলেন, যারা দলীয় মুখপত্র হয়ে উঠেছেন তাদের কর্মকাণ্ড এবং ব্যবহৃত শব্দগুলো বিপর্যয়কর ছিল দলের জন্য, বিশেষ করে গত কয়েক বছর। দলের ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ছিল নির্মম বাস্তবতা। সেটা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের দল প্রচণ্ডভাবে নির্ভর করেছে গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর। কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে অথবা কারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সে বিষয়ে শীর্ষ নেতাদেরকে দেখেছি তারা অবহিত নন। 

ওদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, দলে গণতান্ত্রিক রীতির চর্চার অভাব দলকে বিশৃঙ্খল অবস্থায় ফেলেছে। গত এক দশক ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আওয়ামী লীগের সব তৃণমূল পর্যায়ের ইউনিট ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন না করে একই পুরনো সদস্যদের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি অথবা আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হস্তে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা স্বীকার করে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এর পরিবর্তে দলটি বার বার এই আন্দোলনকে অস্বীকার করছে। তারা বিবৃতিতে এসব আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসীদের অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করছে। ১০ই জানুয়ারি যুবলীগের এক বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, এই আন্দোলনে এমন সব শক্তি আছে, যারা দেশকে পাকিস্তানি আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে চায়। প্রায় এক ঘণ্টা আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। বার বার তিনি অভিযোগ করেন কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে ছাত্রদেরকে ‘বিভ্রান্ত’ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। 

বাংলাদেশে সরকারি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলকভাবে কোটা ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্ররা শুরু করেন কোটা বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু তাদের ওপর সরকারের ক্রমবর্ধমান নিষ্পেষণ এবং ব্যাপক রক্তপাতের পর শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতকে নিয়ে বিতর্ক আছে। তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন এবং বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি দিয়েছে। হাসিনা সরকারের সময়ে বিএনপি এবং জামায়াত- উভয়েই ভয়াবহ দমনপীড়নের শিকারে পরিণত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। নাসিম স্বীকার করেন, তার দল কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তিনি ব্যর্থতার জন্য প্রথমেই দায়ী করেন গোয়েন্দাদের ব্যর্থতাকে। ওদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ১১ বছর ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী এবং সেনাবাহিনী’র ‘যৌথ অভ্যুত্থানে’র শিকারে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ। 

তবে দলের ভেতর জবাবদিহিতার অভাব থাকাকে কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তিনি বলেন, অবিচার, নিষ্পেষণ, দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা লুট ও পাচারের কারণে বাংলাদেশের জনগণের কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে আওয়ামী লীগকে। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এখনো আমি তাদেরকে দেখিনি আত্মোপলব্ধি, আত্মসমালোচনা অথবা দোষ স্বীকার করতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ও বিশ্লেষক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান যুক্তি দেন যে, দলটির কঠোর অবস্থান এবং সিদ্ধান্ত জনগণকে ক্ষুব্ধ হতে উৎসাহিত করেছে। এর মধ্যদিয়ে গণ-অভ্যুত্থানকে সফল হওয়ার পথ করে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় আঘাত করেছে, যার ফলে একক দাবিতে পরিণত হয় তার পদত্যাগ। 

নির্বাসনে থাকা বা সেখান থেকে ফিরে আসার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে অপরিচিত নন হাসিনা। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হত্যা করা হয়। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি ভারতে অবস্থান করেন। তারপর ১৯৮১ সালে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। দলকে পুনর্গঠন করে ক্ষমতায় আসতে তার সময় লেগেছে ২১ বছর। হাসানুজ্জামান বলেন, এবার ছিল ভিন্ন পরিস্থিতি। ছাত্রদের নেতৃত্বে রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। এতে নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি যুক্তি দেন- মারাত্মক ইমেজ ও নেতৃত্ব সংকটের মুখে আওয়ামী লীগ। তার ভাষায়- শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে দলটি পুনর্গঠিত করা হবে চ্যালেঞ্জিং। দলের ভেতরে বিভক্তি দেখা দিতে পারে। 

বাংলাদেশে বড় দু’টি রাজনৈতিক শক্তি হলো বিএনপি ও জামায়াত। তারা উভয়েই বলেছে- জুলাই ও আগস্টে নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা বিচারের মুখোমুখি হোন- এটা তারা চায়। তার ওপর তারা আরও যুক্তি দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগের ভাগ্য কি হবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন দেশবাসী। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন যেসব ছাত্ররা তারা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপসহীন অবস্থান নিয়েছেন। ২৫শে জানুয়ারি এক র‌্যালিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা এবং ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাহফুজ আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না আওয়ামী লীগকে। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হলো হত্যাকাণ্ড, গুম ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে আমরা সংস্কার বাস্তবায়ন করবো; নিশ্চিত করবো বাংলাদেশপন্থি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। 

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচন হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাহলে দলটির পা রাখার জন্য একটি জায়গা সৃষ্টি হবে। তবু নেতৃত্ব, সংগঠন ও তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগের মাধ্যমে জনআস্থা পুনর্গঠন ছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবন লাভ করা হবে অত্যন্ত জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রফেসর আলী রীয়াজ আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের কোনো সুযোগের জন্য চারটি শর্ত উদ্‌ঘাটন করেছেন। তা হলো- ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে যেসব অপরাধ করেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়, তার জন্য দ্ব্যর্থহীনভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদেরকে বর্তমান আদর্শ পরিত্যাগ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো সদস্য এই দলে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ যেসব জঘন্য অপরাধ করেছে তারা- তার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, শেখ হাসিনা সহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নৃশংসতার জন্য সরাসরি দায়ীদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যখন এসব শর্ত পূরণ হবে, শুধু তখনই তাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে।  

শেখ হাসিনার পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে গোপনে মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীরা সমালোচনা করলেও এখনো শেখ হাসিনার ওপর আস্থা আছে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর। বিদেশে অবস্থানরত সিনিয়র নেতারা ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টকশো। তার মধ্যদিয়ে তারা নেতাকর্মীদের পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে বলছেন, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীদেরকে তা খাওয়ানো কঠিন বিষয়। তারা কমেন্ট সেকশনে এসব দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেতারা এবং দলের জুনিয়র নেতারা এ বক্তব্যকে  পেছনে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বিদেশে অভয়ারণ্যে থেকে নির্বাসিত নেতাদের পক্ষে এসব কথা বলা সহজ।  নেতারা এসব কথা বলছেন, যখন সারা বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ের নেতারা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন অথবা আত্মগোপনে আছেন। খুলনার ওই সাবেক ছাত্রনেতার মতো বহু নেতাকর্মী প্রকাশ্যে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে খুব বেশি ভয় পায়। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন অনেক দূরের পথ।


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ


এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
 
‘ডিসেম্বরই শেষ সময়’, আজ যুগপৎ সঙ্গীদের সঙ্গে বসছে বিএনপি
‘ডিসেম্বরই শেষ সময়’, আজ যুগপৎ সঙ্গীদের সঙ্গে বসছে বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে এবার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক ...
মগবাজার রেললাইনে বাস, অল্পে রক্ষা পেলেন অর্ধশতাধিক যাত্রী
মগবাজার রেললাইনে বাস, অল্পে রক্ষা পেলেন অর্ধশতাধিক যাত্রী
রাজধানীর মগবাজার রেলগেটে রেললাইনের ওপর ট্রেন আসার আগে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের একটি বাস আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রাণভয়ে যাত্রীদের ...
সাকিবের আওয়ামী লীগে যোগদান ঠিক হয়নি: প্রেস সচিব
সাকিবের আওয়ামী লীগে যোগদান ঠিক হয়নি: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকন হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের মতো একটি স্বৈরাচারী গুম-খুনের দলে যাওয়া ...
পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতা নিয়ে মন্তব্য: বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতা নিয়ে মন্তব্য: বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সহিংসতা নিয়ে মন্তব্য করার জন্য বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের বক্তব্যকে ‘অযৌক্তিক মন্তব্য’ এবং ...
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: টানাপড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত কারা?
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: টানাপড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত কারা?
বাংলাদেশে বিদেশিদের নিয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে গত ৮ই এপ্রিল হুট করে দুই দেশের মধ্যকার ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ভারত। ...
দেশে-বিদেশে কমে গেছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার
দেশে-বিদেশে কমে গেছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দেশে ও বিদেশে কমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয়েছে ২৯৭ কোটি ...
থানায় বসে ওসির টাকা নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
থানায় বসে ওসির টাকা নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেনের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ...
ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান মানেই আমেরিকার চোখে হুমকি
ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান মানেই আমেরিকার চোখে হুমকি
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থের জন্য হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন।এই অবস্থানকে কেন্দ্র ...
বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় : খলিলুর রহমান
বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় : খলিলুর রহমান
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদভাবে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা ...
১০
সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব
সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব
অপার সম্ভাবনা ঘিরে আছে বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ। যাকে আমরা বলি নীল অর্থনীতি। বেলজিয়ামের অর্থনীতিবিদ গুন্টার পাওলি ১৯৯৪ সালে এই নীল ...
 
কালিহাতীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ মাদকসহ ব্যবসায়ী আটক
কালিহাতীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ মাদকসহ ব্যবসায়ী আটক
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অভিযান চালিয়ে গাঁজা ও দেশীয় অস্ত্রসহ মো. বাছেদ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে  আটক করেছে যৌথ বাহিনী। আটককৃত বাছেদ ...
সিলেট এখন জলাবদ্ধতা ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে উচু ও টেকসই স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে
সিলেট এখন জলাবদ্ধতা ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে উচু ও টেকসই স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেছেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস আমাদের ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’র ধারণা ...
বর্ণ্যাঢ্য আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ায় যুবদলের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত
বর্ণ্যাঢ্য আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ায় যুবদলের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে সিডনির ওয়ালী পার্কে গতকাল ১৩ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার এক মনোজ্ঞ ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ...
বোয়ালখালীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্বমন্বয়ক-এনসিপি মারামারি
বোয়ালখালীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্বমন্বয়ক-এনসিপি মারামারি
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে ...
ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর
ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় হামলা বন্ধের ...
রামুতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব উদযাপন
রামুতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব উদযাপন
রামুতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ সোমবার (১৪ এপ্রিল)  সকালে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ ...
কালিহাতীতে সেফটি ট্যাংক থেকে কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
কালিহাতীতে সেফটি ট্যাংক থেকে কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সেফটি ট্যাংকের ভিতর থেকে আব্দুল আলীম নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ( ১৫ এপ্রিল ...
সংহতি জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা
সংহতি জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) ...
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি : কাকে ঠেকাতে, কাকে রক্ষায়?
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি : কাকে ঠেকাতে, কাকে রক্ষায়?
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দিন দিন আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রশ্ন জাগে- এই সামরিক জোর প্রদর্শনের উদ্দেশ্য কী? ...
১০
বর্ণাঢ্য আয়োজনে কালিহাতীতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন
বর্ণাঢ্য আয়োজনে কালিহাতীতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে  দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক ...
সম্পাদক ও প্রকাশক: ইউসুফ আহমেদ (তুহিন)
প্রকাশক কর্তৃক ৭৯/বি, ব্লক বি, এভিনিউ ১, সেকশান ১২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ থেকে প্রকাশিত ও ৫২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা ১১০০ থেকে মুদ্রিত
বার্তাকক্ষ : +৮৮০১৯১৫৭৮৪২৬৪, ই-মেইল editor@natun-barta.com, Web : www.Natun-Barta.com.com