/ অপরাধ / লকারে চোখ দুদকের
লকারে চোখ দুদকের
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর নামে থাকা তিনটি লকার থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ উদ্ধার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা লকার খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার পর তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তার লকারে বিপুল অঙ্কের অর্থ ও স্বর্ণালংকার রয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল এ বিষয়ে কাজ করছেন। দুদক সূত্র জানায়, মাসুদ বিশ্বাসের লকার খোলার বিষয়ে ইতিমধ্যেই ওই দলটি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে অনুমতি চাইবে। তারপর কমিশনের অনুমোদনক্রমে বিশেষ জজ আদালতের কাছে আবেদন করা হবে। আদালতের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে দুদকের তদন্তকারী দলটি মাসুদ বিশ্বাসের সেইফ ডিপোজিট লকার খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাবে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২রা জানুয়ারি মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। এজাহারে বলা হয় মাসুদ বিশ্বাস তার নিজ নামে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া একই দিন বিএফআইইউর সাবেক এই প্রধানের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৭২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারায় পৃথক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়েছে। ১৮ই জানুয়ারি মাসুদ বিশ্বাসকে ঢাকার একটি এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় দুদক। দুদক সূত্রে জানা যায়, এসকে সুর ও মাসুদ বিশ্বাস ছাড়াও অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংস্থাটির অনুসন্ধান দলের হাতে রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারে জমা রাখা অর্থ-সম্পদের ওপর জোর দিচ্ছেন দুদক কর্মকর্তারা। সূত্র আরও জানায়, একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তবে লকার খোলার ব্যাপারে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে কাজগুলো সময়সাপেক্ষেরও হয়। শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর সেইফ ডিপোজিট এসকে সুর চৌধুরীরর তিনটি লকার খুলতে গিয়ে দুদকের তদন্তকারী দল আরও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর গোপন লকার দেখতে পেয়েছেন। এসব লকারে কার নামে কি আছে সেটি যাচাই করার পরিকল্পনা করছে দলটি। সংশ্লিষ্ট দলের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এসকে সুর ছাড়াও অনেক সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীর লকার খেয়াল করেছি। যেগুলো নিয়ে সন্দেহ করা যাচ্ছে এসব লকারে অপ্রদর্শিত আয় থেকে অর্জিত অর্থ সম্পদ রাখা হয়েছে। দুদকের অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এসব ব্যক্তিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। দুদক মনে করছে এসব ব্যক্তিদের লকারও তল্লাশি করলে বিপুল অঙ্কের অর্থসম্পদ বেরিয়ে আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- সাবেক গভর্নর ড. আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দিলিপ কুমার চৌধুরী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস আহমদ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এস এম রেজাউল করিম, ও যুগ্ম পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন। এর আগে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলার একেবারে পূর্বপ্রান্তে তিনটি নিরাপত্তা স্তর পার হয়ে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত বিশাল আকারের ‘কয়েন ভল্ট’ কক্ষে প্রবেশ করেন দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান, উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন, উপসহকারী পরিচালক সাবরিনা জামান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা সালেহা নূর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এই প্রথম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাইরে কেউ ওই ভল্ট কক্ষে প্রবেশ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই ভল্ট কক্ষের ভেতরে আরেকটি ভল্ট কক্ষ রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন স্বর্ণ এবং চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণ মজুত রাখা হয়েছে। এ ভল্ট কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডাবল লক-সংবলিত লকার রাখা হয়েছে। যার যার লকারে প্যাকেট ও কৌটায় কাপড় মুড়ে সেলাই করে সিলগালা করে অর্থ-সম্পদ রাখা হয়। রেজিস্ট্রারে প্যাকেট/কৌটার সংখ্যা উল্লেখ থাকে। সেগুলোর ভেতরে কী আছে, তা উল্লেখ করা হয় না। প্যাকেট/ কৌটার ভেতরে কী রাখা হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয় না। আদালতের অনুমতি নিয়ে এসকে সুরের লকারে তিনটি সেফ ডিপোজিট নম্বরে মোট ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে দুদক। লকারে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা ও ৮৬.২২ ভরি (১০০৫.৪ গ্রাম) স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ জানুয়ারি দুদক এসকে সুরের ঢাকার ধানমণ্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এসকে সুর বর্তমানে কারাগারে আছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজ কর্তা ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা করছি। এটা বড় একটা কাজ। এখনই বলার মতো কিছু হয়নি। তবে যখন যা ঘটবে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে জানানো হবে। |