/ আন্তর্জাতিক / ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির জবাব কীভাবে দেবে চীন, কানাডা, মেক্সিকো?
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির জবাব কীভাবে দেবে চীন, কানাডা, মেক্সিকো?
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার— কানাডা, মেক্সিকো ও চীন। দেশগুলোর ওপর ৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হচ্ছে নতুন শুল্কহার। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরোপিত শুল্কের তুলনায় এবারের শুল্কের হার আরও কঠোর। এই নীতিকে অনেকেই নতুন বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের সূচনা হিসেবে দেখছেন। কানাডার প্রতিক্রিয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, আমরা এই পরিস্থিতি চাইনি। তবে কানাডিয়ানদের স্বার্থরক্ষায় আমরা পিছু হটবো না। ট্রাম্পের নতুন নীতির আওতায় কানাডার প্রায় সব রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে তেলের ক্ষেত্রে এর হার ১০ শতাংশ। পাল্টা জবাব হিসেবে কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে কানাডার পদক্ষেপ মূলত কৌশলগত। প্রথম ধাপে ৩০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সহজ সরবরাহ চেইনের পণ্য, যেমন- সাইট্রাস ফল, চিনাবাদাম মাখন, বোরবন ও মোটরবাইক। এতে কানাডার অর্থনীতির ওপর প্রভাব কমবে, কিন্তু মার্কিন অর্থনীতিতে টার্গেটেড চাপ সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১২৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বসাবে। তবে এই পদক্ষেপ ২১ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম ট্রাম্পের পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করছে, তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। নিজেদের সমস্যা আগে সামলানো উচিত। মেক্সিকো ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে মোটরবাইক, বোরবন, ক্র্যানবেরি ও কমলা, যা মূলত ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে মেক্সিকো এখনই শস্য পণ্যের ওপর শুল্ক বসাচ্ছে না। কারণ এতে দেশটির পশুপালন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি, তারা মার্কিন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়েও সতর্ক। কারণ এতে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। চীনের সংযত প্রতিক্রিয়া চীনের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আগের শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের জন্য ডি-মিনিমিস শুল্ক ছাড় বাতিল করেছে, যা চীনের ই-কমার্স খাতের জন্য বড় ধাক্কা। তবে চীন এখনো বড় প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। শুধু জানিয়েছে, তারা ‘প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নেবে’ এবং বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) উত্থাপন করবে। যদিও এটি তেমন কার্যকর প্রতিক্রিয়া নয়। তবে চীনের হাতে এখনো বড় অর্থনৈতিক অস্ত্র রয়েছে, যেমন- রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন। বাণিজ্যযুদ্ধের ভবিষ্যৎ কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের প্রতিক্রিয়ায় কিছু মিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা সবাই মৌখিক আপত্তি জানিয়েছে, সীমিত মাত্রায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, নিজেদের ক্ষতি এড়িয়েছে এবং পরবর্তী কঠোর পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার ওপরও নির্ভর করবে। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ও শিল্প খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা রিপাবলিকান রাজ্যগুলোর অর্থনীতিতে ধাক্কা দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেক্সিকো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তাদের জিডিপির ৪০ শতাংশই রপ্তানি নির্ভর, যার ৮০ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। কানাডার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে। কারণ তাদের মোট রপ্তানির ৭৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রমুখী, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানির মাত্র ১৮ শতাংশ কানাডায় যায়। অর্থনীতিবিদ ট্রেভর টুম্বের মতে, নতুন শুল্কের ফলে কানাডার জিডিপি ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং ২৪ লাখ চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অন্যদিকে, আগামী ৯ মার্চ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন জাস্টিন ট্রুডো। দেশটিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে, যা ট্রাম্পের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে। বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার এই প্রবণতা শেষ পর্যন্ত কতদূর যাবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। |