/ রাজনীতি / ১৩ জেলায় বিএনপিতে নতুন কমিটি, আরও পরিবর্তন আসছে
১৩ জেলায় বিএনপিতে নতুন কমিটি, আরও পরিবর্তন আসছে
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
তৃণমূলকে শক্তিশালী ও সংগঠিত করতে বিএনপি’র জেলা কমিটির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। নেতৃত্ব দেয়া হচ্ছে তরুণ নেতাদের হাতে। সামনে আরও পরিবর্তন আনা হবে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে কর্মিসভা ও বর্ধিত সভা করছে দলটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে ৩১ দফাকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সংগঠন। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় ২রা ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ ১৩টি জেলার নতুন আহ্বায়ক কমিটি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন করেছে দলটি। এর আগে গত ৪ঠা নভেম্বর ১০টি জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। ওদিকে কেন্দ্রের কঠোর বার্তা ও অবস্থানের পরও তৃণমূল বিএনপি’র দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানো যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব- সংঘাত দূর করতে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সূত্র মতে, গত রোববার যে ১৩টি জেলায় নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে, এরমধ্যে কয়েকটি মেয়াদোত্তীর্ণ, নিষ্ক্রিয় ও দুর্বল কমিটি ছিল। অভিযোগ ছিল, সম্মেলন করার নির্দেশনা দেয়ার পরেও তারা সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে তাদের পারফরম্যান্স ভালো না থাকার অভিযোগেও নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। অন্য জেলা কমিটিগুলোও বিএনপি’র হাইকমান্ড পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা অনুযায়ী সামনে আরও নতুন কমিটি আসবে এবং এসব কমিটিতেও পরিবর্তন আসবে। বিএনপি’র সদস্য নবায়ন কর্মসূচিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দলকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে মেধাবী ও ভালো মানুষদের সামনে আনতে হবে। ভালো মানুষ দরকার। এই রাষ্ট্রকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার ধ্বংস করে দিয়েছে, অনেক পেছনে নিয়ে গেছে। কাজেই দলকে যদি পুনর্গঠিত করতে হয়, সে রকম মানুষ দরকার। সে রকম মানুষকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। দল পুনর্গঠনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা এবং যুগ্ম মহাসচিবদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে যেসব জেলায় আংশিক কমিটি হয়েছিল, সেসব পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হচ্ছে এবং যেসব জেলা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেসব জেলায় নতুন কমিটি করা হচ্ছে। এছাড়া যেসব কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সেসব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হচ্ছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ, দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় ছিল। সেজন্য জোরালোভাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনে করলে সামনে আরও পরিবর্তন আসবে। সারা দেশে বিএনপি’র সাংগঠনিক জেলা কমিটি ৮২টি। এরমধ্যে বেশির ভাগ শাখায় আংশিক এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তবে বর্তমানে অধিকাংশ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ বিএনপি’র ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলে কোন্দল থামাতে গলদঘর্ম বিএনপি: পদ-পদবি, কমিটি গঠন, দখল, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। গ্রুপিং ও আন্তঃকোন্দলে মারামারি এবং সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে দলীয় নেতাকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। তবুও থামছে না অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং। ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। সভা, সেমিনার, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকারও বার্তা দেয়া হচ্ছে। দখল এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে দলটি। নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করা হচ্ছে। ভেঙে দেয়া হচ্ছে কমিটিও। এরপর থেমে নেই দখল, চাঁদাবাজি ও মারামারি। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সর্বশেষ শনিবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় দলীয় কোন্দল ও বিরোধে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম ভূঁইয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। স্থানীয় বিএনপি’র একটি পক্ষের হামলায় অপরপক্ষের ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত হয়েছেন। সেলিম ভূঁইয়া উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি’র নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে অতিষ্ঠ ছিল, ঘর-বাড়িতে তারা থাকতে পারেনি। ৫ই আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তারা ভালো থাকতে চান। এজন্য নিজেদের দখল হয়ে যাওয়া স্থাপনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া ৫ই আগস্টের পরে কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তিও বিএনপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এজন্য বিএনপি’র কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দল থেকে মামলা করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, বিএনপি’র মতো একটি বড় দলে গ্রুপিং ছিল এবং থাকবেও। প্রতিযোগিতাও থাকবে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন। তাদের ন্যায় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তো থাকবেই। আর দল থেকে বলা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে। ওদিকে গত ২৮শে ডিসেম্বর ও ১৮ই জানুয়ারি দুই দফায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু একপক্ষের বিরোধিতার জেরে দু’টি তারিখই পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ১লা ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সম্মেলন স্থগিতের প্রতিবাদে শনিবার হরতাল ডেকেছিল স্থানীয় বিএনপি। পরে কেন্দ্রের আশ্বাসে দুপুর ১২টায় হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ ছাড়া গত ২৪শে ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় দলীয় কোন্দলের জেরে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের নেতা পাভেল মিয়া কাঞ্চনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কাঞ্চন পৌরসভার পৌর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন। ঢাকা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর কোন্দল সেভাবে দেখছি না। বড় দলে প্রতিযোগিতা থাকবেই। এদিকে দলীয় কোন্দলের জের ধরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম ইকবাল হোসাইনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯শে জানুয়ারি ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র এক নেতা ও তার সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে দলের আরেক পক্ষের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এর আগে ৯ই জানুয়ারি বরিশাল মহানগরে মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে ২ নেতার বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক যুবকের মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি নেতাদের। ৫ই আগস্টের পর থেকে পদ-পদবি, কমিটি গঠন, দখল, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর বড় দলে পদ-পদবির জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু নেতাকর্মীদের দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। |