![]() টিসিবি’র লাইনে চাকরিজীবীরাও
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে ফের শুরু হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ পণ্য বিক্রি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য হলেও এখন নানা পেশার মানুষও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন ন্যায্য দামে পণ্য কিনতে। নিম্নবিত্তের মানুষের পাশাপাশি এখন চাকরিজীবী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদেরও লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির এসব স্পটে দেখা যায়- নারী, পুরুষ, কিশোর লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। সিরিয়াল নম্বর হাতে টিসিবি’র পণ্য নেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরিদ হোসেন। ফরিদ মানুষের মুখে শুনে এখানে এসে টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চাকরির বেতনে আগে সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু এখন পণ্যের বাড়তি দামে সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে টিসিবি’র কম দামের পণ্য কিনতে এসেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাকিল হোসেন দুপুরের খাবার খেতে বের হয়েছিলেন। পথে টিসিবি’র ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। সাকিল বলেন, যে বেতন পাই তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি, বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা করে বিক্রি করে। এখানে ১০০ টাকা করে পাচ্ছি। নার্গিস আক্তার নামে একজন বলেন, একই পরিবারের চারজন এসেছে পণ্য নিতে, অথচ আমরা পাই না। তিনি আরও বলেন, এক পরিবার থেকে একজন নিলেই তো যথেষ্ট। এদের কারণে প্রকৃত অভাবী মানুষরা টিসিবি’র পণ্য পায় না। এই যে দেখেন পুরুষের লাইনে অধিকাংশই হচ্ছে এইখানের দোকানদার তারা এখান থেকে নিয়ে আবার দোকানে বিক্রি করে। একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন কুমিল্লার হাবিব। যে বেতন পান তা পুরোটাই বাজারের পেছনে চলে যায়। সামনে রমজান মাস, তাই বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি উল্টো সিন্ডিকেটের সদস্য আরও বেড়ে গেছে। আগে দুই-তিনটা গ্রুপ বাজার সিন্ডিকেটে জড়িত ছিল। এখন প্রতিটি মহল্লায় সিন্ডিকেট, এইটা কি বিপ্লবী সরকারের নমুনা। বাজার সিন্ডিকেটে যারা জড়িত, সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। টিসিবি’র ডিলার মোস্তফা বলেন, এ ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারছেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের কাছ থেকে সবগুলো পণ্য কিনতে একজন ভোক্তার ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৫৮৮ টাকা। এদিকে, রাজধানীতে সোমবার ৫০টি জায়গায় ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে টিসিবি। আগে প্রতি ট্রাকে ৩৫০ জনের প্যাকেজ থাকলেও এবার থাকছে ২৫০ জনের। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় মেলেনি টিসিবি’র পণ্য। সরজমিন মহাখালী এলাকার আশপাশে, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ী সহ বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, এ সকল এলাকায় চালু হয়নি ট্রাকসেল কার্যক্রম। সাধারণত কার্ড নেই, এমন সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ট্রাকের ট্রাকসেল কার্যক্রমের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়। গত বছরের ২৪শে অক্টোবর ট্রাকসেল কার্যক্রম হাতে নেয় টিসিবি। পরিবার কার্ড না থাকলেও প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। শুরুতে এ কার্যক্রম ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকার কথা থাকলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে দুই মাস সাত দিন চলার পর ৩১শে ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্বিতীয় দফায় নেয়া হলো টিসিবি’র ট্রাকসেল উদ্যোগ। রাজধানীর ৫০ ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই চলবে এ কার্যক্রম। |