![]() আনন্দবাজারের প্রতিবেদন: বিএনপিকে ঠেকাতে ছাত্রদের দল তৈরির পেছনে কি জামায়াত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() আন্দোলনকারী ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার বিষয়ে নীরবতা ভেঙেছে। উপদেষ্টা তথা কোটা-বিরোধী আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন দলটির প্রধান বা সমন্বয়ক হতে চলেছেন। তবে ওই দলের দু'নম্বর পদ সদস্যসচিব কে হবেন, তা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি। সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও প্রস্তুতি সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও আখতার হোসেনের নাম এই পদের জন্য উঠছে। সুতরাং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এখন ছাত্রদের পক্ষে সরকারে থাকছেন। এই মাসেই নতুন দলের নাম ঘোষণা হলে তথ্য ও সম্প্রচারসহ একাধিক উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন দলের হাল ধরবেন। সজীব ও মাহফুজ ইস্তফা দিয়ে দলের দায়িত্ব নেবেন কয়েক মাস পরে। তবে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই দল কীভাবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে পারবে, পারলেও কী তার ফলাফল হতে পারে-এসব প্রশ্ন রয়েছেই। তবে নতুন এই দল গঠনে জামায়াতে ইসলামীর সাহায্য-সহযোগিতা চোখে পড়ার মতো। হাসিনা-বিদায় এবং দেশজুড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ও স্মারক ভাঙা, ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডে তার বাড়ি চুরমার করার পরেও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে যে মানুষের মন থেকে মোছা যাচ্ছে না, দিব্য বুঝছেন জামায়াত নেতারা। এই ইসলামী দলটির নেতারা একাত্তরের যুদ্ধের সময়ে শুধু যে অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিল তা-ই নয়, পাক সেনাবাহিনীকে সাহায্যের জন্য রাজাকার, আল বদর, আল শামস-এর মতো সংগঠন গড়ে মুক্তিকামী মানুষের ওপরে ভয়াবহ নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়েছিল। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের রায়ে জামায়াতের একঝাঁক নেতার ফাঁসি হয়ে গিয়েছে! জামায়াত ভেবেছিল, নেতাদের মৃত্যুতে তারা একাত্তরের ‘পচা অতীত’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। হাসিনা বিদায়ের পরের ছয় মাসে সেই সময়ে তাদের অবস্থান নিয়ে নতুন একটি ভাষ্য প্রচার করতে শুরু করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। রোববারও একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সহযোগী হিসেবে ভারত এগিয়ে আসার কারণেই তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেননি।’ শফিকুর বলেন, ‘আমরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। কিন্তু একটা দেশের অধীন থেকে বেরিয়ে এসে আর একটা দেশের অধীন হতে চাইনি।’ জামায়াতের আমির দাবি করেছেন, ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা না পেলে তারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতেও তৈরি ছিলেন। শফিকুরের এই দাবি শুনে হেসে ওঠেন খুনের মামলায় নাম জড়িয়ে দেয়ায় আত্মগোপনে থাকা এক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা তথা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেন, ‘কাদের যেন ছলের অভাব হয় না। একাত্তরে শফিকুর জামায়াতে ছিলেন কি-না জানি না, তবে আমরা মুক্তিযুদ্ধেই ছিলাম। সে সময়ে জামায়াতের কী অবস্থান ছিল, শফিকুর না-জানতেও পারেন। কিন্তু আমরা সকলেই জানি। গাল-গল্প বলে দেশের মানুষকে তিনি বোকা বানাতে চাইছেন। তার এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, নিজেদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কালি উঠছে না দেখেই জামায়াত পেছন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করাচ্ছে। নতুন দলকে সমর্থনের আর্জি নিয়ে বাকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াত। জামায়াত মনে করছে, জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভাসা ছাত্রদের নতুন দলই পারে নির্বাচনে ধারে-ভারে বহু গুণ এগিয়ে থাকা বিএনপির অনায়াস জয়কে ঠেকাতে। একাত্তরে ‘পচা অতীত’-এর দায়ও এই তরুণ তুর্কিদের নেই। |