![]() ট্রাইব্যুনালে যে আইনে বিচার চলছে, তার শুরুর শাস্তিই মৃত্যুদণ্ড: চিফ প্রসিকিউটর
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, ছয় মাস হয়ে গেলো, বিচার হচ্ছে না কেন? আমরা নিখুঁত বিচার করব। অপরাধীদের অপরাধ এমনভাবে প্রমাণ করা হবে, যাতে তাদের চরম শাস্তি হবে। মাথায় রাখতে হবে, যে আইনে ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার চলছে, তার শুরুটা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে। আইনে বিভিন্ন সাজা তো থাকে। ১০ বছরের কারাদণ্ড, ২০ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা ইত্যাদি। আমাদের এ আইনে সবার প্রথম সাজার নামই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখানে বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত দল ও প্রসিকিউটরদের উপস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অংশগ্রহণে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিচার নিখুঁত এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। এটা আমরা নিশ্চিত করব। নিরপেক্ষ বিচারের মধ্য দিয়ে যে শাস্তি হবে, সেই শাস্তি দেখে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। জাতি বুঝতে পারবে তাদের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা তাদের অপরাধ অনুযায়ী যথার্থ হয়েছে। সেই দিনটা আমরা দেখতে চাই, দেখাতে চাই। আসামিদের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি না পরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে আফসোস করছেন যে, ওরা (আসামিরা) হাসতে হাসতে ট্রাইব্যুনালে যায়, হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে। এগুলোকে কাঁদার ব্যবস্থা করেন না কেন? কোরআন শরিফে একটা কথা আছে, তারা আজ সামান্য হেসে নিক, পরবর্তীতে কৃতকর্মের জন্য তাদের অনেক বেশি কাঁদতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেই বিচার করছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ ট্রাইব্যুনালে অতীতেও কাউকে হাতকড়া পরিয়ে, ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে উপস্থিত করার নজির নেই। আমরা সেই জায়গাটা মেইনটেইন করছি। তার মানে এটা নয় যে, আজকে তাকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে না বলে অপরাধের বিচার শেষে যে দণ্ডটা দেওয়া হবে, সেটা চরম দণ্ড দেওয়া হবে না। বিচারের নিশ্চয়তা দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন, আমরা যদি বেঁচে থাকি, আর আপনাদের মতো সাহসী সন্তানরা যদি জেগে থাকেন, তাহলে বিচার হবেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে, তারা হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করছে, করবে। এটাকে বিতর্কিত করার জন্য অপচেষ্টা চলতে থাকবে। এজন্য বিচার প্রক্রিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। এর আগে গণশুনানিতে অংশ নেওয়া আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা কীভাবে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কাওলা, আশকোনা, দক্ষিণখানসহ নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে তারা দ্রুত বিচার দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকে আপনারা দাবি জানিয়েছেন যে, বিচার হতে হবে। আপনাদের সহকর্মী, বন্ধু, ভাইয়ের লাশ আপনারা বহন করেছেন। এ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য বিচার হতে হবে। বিচার হতে হবে আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও ভয়হীন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, আগামীতে বাংলাদেশে যেন আর কোনো স্বৈরশাসক আমার আপনার সন্তানের ওপর গুলি চালানোর সাহস না দেখায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য বিচার হতে হবে। সেই কাজটি নিখুঁতভাবে করতে হলে বিপ্লবের জন্য আপনারা যেমন লড়াই করেছেন রণাঙ্গনে, সেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বিচারের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয়। মাথায় রাখতে হবে এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্রাইমস এগেইনিস্ট হিউম্যানিটি অর্থাৎ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম অপরাধ। এটার তদন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল তদন্তের একটি। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে দুই হাজারের অধিক শহীদ হয়েছেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, ২৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হাজার হাজার অপরাধী। অপরাধে পার্টিসিপেশনও (অংশগ্রহণ) অনেক। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী; তারা শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। প্রত্যেককে আইডেন্টিফাই করতে হবে, এটা করা হবে। এ আইডেন্টিফিকেশনের জন্য যে শিক্ষার্থীরা সম্মুখ সমরে ছিলেন, তাদের বক্তব্য, অভিজ্ঞতা জানা দরকার। আপনাদের প্রত্যেকের মোবাইলে যত ছবি ও ফুটেজ ধারণ করা আছে, তা আমাদের দিতে হবে। এটা দিতে পারলে যে বিচার করা হবে, দেখবেন আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশে কোনো স্বৈরশাসকের তরুণদের গায়ে একটাও গুলি চালানোর সাহস হবে না। |