![]() ২৭ বছরের শিক্ষকতা শেষে রাজকীয় বিদায় প্রধান শিক্ষক ওসমান গণির
কুয়েল ইসলাম সিহাত, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ
|
![]() বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসী। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বড়শশী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন ওসমান গণি সরকার। তিনি ২০০০ সালে নিয়োগ পান। এরপর ২৭ বছরে অবসরে গেলেন। তিনি টানা দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষকতাকালে ব্যক্তি জীবনে আলোকিত মানুষ হতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষকতা শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অবসরে ঘোষণা দেন এই প্রধান শিক্ষক। এর আগে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত করা হয় বিদায়ী ঐ শিক্ষককে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মালেক। পরে বিদায়ী প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বিদায় নেন। আলোচনা সভা শেষে বিদায়ী প্রিয় প্রধান শিক্ষক ওসমান গণিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে একটি ডিসকভার ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল উপহার দেন। মটর সাইকেলে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় চারপাশের পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে। শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা তিনি এলাকায় প্রজ্বলিত করে গেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যারের নিরলস কর্মজীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনের দিশারি হয়ে থাকবেন।’ প্রিয় শিক্ষকের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। তিনি সবসময় আমাদের মনে থাকবেন, স্যারকে আমরা মিস করবো। স্যারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। স্যার আমাদের আদর যত্ন করে পড়ালেখা করাতেন।’ মুনতাহা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমাদের স্যারকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, পিতার মতো স্নেহ করতেন আমাদের। স্যারের বিদায় আমাদের খুব মর্মাহত করছে। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নয়ন বলেন, ‘স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। স্যার অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারকে আমরা আমাদের চাকুরি জীবনের শুরু থেকেই দেখেছি তিনি কখনোই সময়ের অপব্যবহার করতেন না। যথা সময়ে আসতেন এবং যথা সময়ে চলে যেতেন। যার কারণে আমাদের সহকারী শিক্ষকদের কেউ ফাঁকিবাজি করার সুযোগ পেতো না। স্যার দক্ষতার সাথে স্কুল পরিচালনা করতেন। ক্লাস শেষে কখনোই কোনো শ্রেণিকক্ষ খালি থাকতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্যারের নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা থেকে আমরা সহকারী শিক্ষকরা অনেক কিছু শিখেছি। একজন শিক্ষক যখন তাঁর চাকরিজীবন শেষ করে বিদায় নেন, এটা তাঁর জন্য কষ্টের। তখন বিদায় মুহূর্তে এমন রাজকীয় বিদায় তাঁকে সম্মানিত ও আনন্দিত করে। |