![]() বর্ধিত সভা দিয়ে শুরু হচ্ছে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্ধিত সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা উঠে আসবে। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারা দেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্যে সারা দেশে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেমন কঠোর নির্দেশনা থাকবে, তেমনি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের করণীয় সম্পর্কে জানাবেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর তিনদিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান। ওই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে অংশ নেয় বিএনপি। কিন্তু দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে বলে অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। যদিও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথমে সুলতান মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর বিএনপিরও দুজন সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ করলে পরে বাধ্য হয়ে সবাইকে শপথ নেওয়ার অনুমতি দেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের পরও শপথ গ্রহণ করেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্ধিত সভায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।’ বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির জানান, ‘জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল এবং মাঠ প্রাঙ্গণে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। বর্ধিত সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সব সম্পাদক ও সদস্য, মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবরা উপস্থিত থাকবেন।’ একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ৬ দিনব্যাপী বিশেষ সভা হয়েছিল। যেহেতু তখনকার পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে ছিল না, তাই সেই সময় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে ভাগ-ভাগ করে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তখন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিল নেতাকর্মীরা এবং নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। এখন আবার দেশের পরিবর্তিত নতুন পরিস্থিতিতে সব নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে তৃণমূলের নেতারা কী ভাবছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা কী, তাদের ভাবনার সঙ্গে কেন্দ্রের ভাবনার কতটুকু মিল রয়েছে— তা ওঠে আসবে সভায়। প্রাধান্য পাবে মিত্র দলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বৈষম্যবিরোধীদের দল গঠন ইস্যু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলছেন, ‘এবারের বর্ধিত সভায় ভিন্ন মাত্রা থাকবে। দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে এক সময়ের মিত্র দল বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অন্যদিকে সরকারি সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে নতুন দল ঘোষণার বিষয়টিও সভায় গুরুত্ব পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমাদের বর্ধিত সভায় এই বিষয়গুলো আগে উঠে আসবে। এ ছাড়া নেতাকর্মীরা গত ১৭ বছরে তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরবেন। তখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনও বিষয় উঠে এলে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের কথা বলবেন।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘বর্ধিত সভা ডেকেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তবে, এখন আমরা সভার আলোচ্য (এজেন্ডা) বিষয় জানতে পারিনি। হয়ত কিছুদিনের মধ্যে এজেন্ডা জানতে পারব।’ এক প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, ‘সভায় অবশ্যই আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দলের নেতাকর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনা এখনও আছে, সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নতুন করে দিকনির্দেশনা অবশ্যই দেবেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, ‘এটা যেহেতু অনেক বড় ও ওপেন মিটিং হবে, তাই হয়ত নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও এজেন্ডা না-ও থাকতে পারে। তাই নির্বাচন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ্য আলোচনায় আসবে না। তবে, দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে একটি ধারণা নেতাকর্মীদের দেওয়া হবে। কোন প্রক্রিয়ায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে সে বিষয়গুলো উঠে আসবে কি না, তা এখনো বলতে পারছি না।’ সভা হবে অভ্যন্তরীণ, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুযোগ পাবে মিডিয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ বর্ধিত সভার একটি নির্দিষ্ট সময় সংবাদমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিবের বক্তব্যের সময়টুকু মিডিয়া কভারেজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকিটা সময় শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নেতাকর্মী ছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং যারা মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পেয়েছিলেন তারাও সভায় উপস্থিত থাকবেন। সেই নির্বাচনে যারা প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন, এবার তাদেরকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হবে। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলছেন, বর্ধিত সভায় আমাদের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে— যারা বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিল, যারা সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত ছিল, একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পরে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি, যারা এর থেকে বিরত ছিলেন, আইনপ্রণেতা হিসেবে যোগ্য এসব নেতাদের যেন আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যারা গত ১৭ বছর নেতাকর্মীদের বিপদে পাশে ছিলেন না, স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন তাদেরকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয় সেই দাবিও তোলা হবে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়া দুলাল। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। দেলোয়র হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলাম, পরবর্তী সময়ে আরেকজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। এবার আমাদের নেতার কাছে দাবি জানাব, যারা প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছিলাম তাদেরকে এবার চূড়ান্তভাবে দেখা হোক। আমরা চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দলের জন্য কাজ করছি, আগামীতেও করব। হামলা-মামলা খেয়েও জনগণের মধ্যে আছি। ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাব। নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও এজেন্ডা থাকবে না হয়ত। কিন্তু নেতাকর্মীরা তো অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেতারা কী ভাবছেন, সেটা সভায় উঠে আসবে।’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, দুর্নীতিমুক্ত, শিক্ষিত, আইনপ্রণেতা হিসেবে যারা সঠিক ভূমিকা রাখতে পারবেন, সাংগঠনিকভাবে নিজ-নিজ আসনে যাদের অবস্থান শক্তিশালী তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। তবে, দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে এর সঙ্গে আমি থাকব।’ তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলাম। এবারও আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আমরা বর্ধিত সভার ভেন্যু পরিদর্শন করে এসেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অনুষ্ঠানকে কীভাবে সুন্দর ও সফল করা যায় তার কার্যক্রম চলমান আছে।’ বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পরে সারা দেশে নেতাকর্মীদের একটি অংশ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্ধিত সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা দিতে পারেন। বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর বিএনপি বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছে। এই বর্ধিত সভা সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়াবে।’ |