![]() গুজবের রাত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() রোববার দিবাগত রাতটি ছিল পুরো মাত্রাতেই গুজবের দখলে। একের পর এক গুজব আসতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কলকাতাকেন্দ্রিক ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশ এতে রাখে বড় ভূমিকা। এসব মিডিয়া থেকে একের পর এক গুজব ছড়ানো হয়। বিশেষত সেনা তৎপরতাকে কেন্দ্র করে। ঢাকার রাস্তার পরিস্থিতির বিভিন্ন বিবরণও আসতে থাকে। আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা দেশ-বিদেশ থেকে নানা পোস্ট দিতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘আপা (অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যেকোনো মুহূর্তে দেশে প্রবেশ করবেন।’ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন তারা। অনেকে বলেন, সকাল নাগাদই সুখবর আসছে। এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গ্রেপ্তার হয়েছেন এমন গুজব ছিল রাতভর। রাত চারটার কিছু পরে এ নিয়ে দলটির প্রধান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ধরনের খবর নাকচ করে দেন। বলে রাখা দরকার, সম্প্রতি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সেনাপ্রধানের কঠোর সমালোচনা করে একটি বক্তব্য রাখেন। রাতভর সবচেয়ে বড় গুজবটি ছিল জরুরি অবস্থা জারিকে ঘিরে। বলা হয়, সেনাপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সোমবারও বৈঠক রয়েছে। এরপর জরুরি অবস্থা জারি করা হবে। রাতের শেষদিকে আওয়ামী লীগের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক কনক সরওয়ার যখন ‘জরুরি অবস্থা জারির পাঁয়তারা’ শীর্ষক লাইভ ভিডিও আপ করেন তখন গুঞ্জনের মাত্রা আরও তীব্র হয়। তবে পরে এক ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার ভিডিওর কোথাও বলা হয়নি জরুরি অবস্থা জারি হবে, বলা হয়েছে পাঁয়তারা চলছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ করেই এ প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হয়েছে।’ সোমবার অবশ্য দিনের আলো যত তীব্র হয়েছে জরুরি অবস্থার গুজব ততই মিইয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনিও বিষয়টি নাকচ করেছেন। জরুরি অবস্থা জারি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন ‘এই সম্পর্কে আমার কোনো কমেন্ট নেই। এগুলো মেয়ার গসিপ।’ জরুরি অবস্থা ছাড়াও উপদেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়েও নানা গুজব ছিল। এবারের টেনশনের সূত্রপাত হয় অবশ্য জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্টকে ঘিরে। ২১শে মার্চ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। লিখেন, ‘কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমি সহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০-এ।’ তার এই পোস্ট ঘিরে রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। দেখা দেয় তীব্র বিতর্ক। জাতীয় নাগরিক পার্টির আরেক নেতা সারজিস আলম কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে আরেকটি পোস্ট দেন। আর ঘটনা নিয়ে সেনাসদরের বক্তব্য প্রকাশ করে নেত্র নিউজ। সংবাদমাধ্যমটির রিপোর্টে বলা হয়, শনিবার নেত্র নিউজকে দেয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ই মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে “ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী। বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নন ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসূ ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।” আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি গসিপ: স্বরাষ্ট্র সচিব দেশে জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তাই জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি গসিপ। এ সম্পর্কে আমার কোনো কমেন্টস নেই। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কার কোনো তথ্য নেই। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে-এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এসব গসিপ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সতর্ক আছি, পুলিশ সতর্ক আছে, সবাই চেষ্টা করছি- যে স্থিতিশীলতা আছে, সেটা যেন রক্ষা করতে পারি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রতি রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা পেট্রোলিং করছেন বলেও জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত। দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য, উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের রয়েছে বৈচিত্র্যময় কর্মীবাহিনী। যার মধ্যে আছে দক্ষ পেশাদার থেকে শুরু করে আধা-দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, যারা অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার মোকাবিলায় একটি সামগ্রিক ও সমন্বিত আঞ্চলিক পদ্ধতির প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই এসওপি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিনিময়, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে কার্যকর সহায়তা প্রদান করবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। এর আগে রোববার রাতে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নানা ধরনের তথ্য প্রচার করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে কেউ কেউ দাবি করেন যে, শিগগিরই বাংলাদেশে ফেরত আসছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |