![]() ঘরে-বাইরে অস্বস্তি, সামলানোর চেষ্টায় এনসিপি
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও নেতাদের কেউ কেউ এমন বক্তব্য দিচ্ছেন- যাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। যেটিকে দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে মনে করছেন অনেকে। আবার এসব বক্তব্যের কারণে দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছে এনসিপি’র। দলটির অনেক নেতা মনে করেন- রাজনীতির টেবিলে এমন অনেক বিষয়ে আলোচনা হয় যার সবই জনসম্মুখে আসা উচিত নয়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ এসব বক্তব্যে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হবে নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপি’র ওপর। এ বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কড়াভাবে সচেতন করা হয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব মানবজমিনকে বলেন, এনসিপি’র নতুন নেতৃত্ব এক্টিভিজমের (কার্যক্রম) মাধ্যমে উঠে আসা। তারা গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, এক্টিভিজম করেছে। এখন তারা রাজনীতি করছেন। রাজনীতি আর এক্টিভিজম এক না। কারণ তখন ব্যক্তিগত বক্তব্যটাও দলীয় বক্তব্যে রূপ পায়। আমাদের কারও কারও বক্তব্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের বক্তব্য প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। আশা করি ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য দেয়া থেকে সবাই সতর্ক থাকবেন। এ পরিবর্তনটা দ্রুত হয়ে যাবে বলে মনে করি। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ মিটিংয়েও সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি এক্টিভিজমের আর পলিলিটিক্সের পার্থক্য তারা দ্রুত বুঝতে পারবেন। তবে আওয়ামী লীগ, নৌকা এবং ভারতের বিষয়ে আমাদের সবার বক্তব্য এক। এতে কোনো মতানৈক্য নেই। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এক বক্তব্য ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি হয়। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষেদ্ধের কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের বিষয়টি সামনে আনেন এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখপাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহ। যেখানে তিনি দাবি করেন, ১১ই মার্চ ক্যান্টনমেন্টে তাদের ডেকে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে প্রস্তাব করা হয়। হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে বলেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’- নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ১১ই মার্চ সেনানিবাসে হাসনাত আবদুল্লাহসহ দু’জনের কাছে এমন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, আমাদের প্রস্তাব দেয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না কি ভালো। হাসনাতের এমন দাবির পর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এনসিপি ও জনসাধারণের মধ্যে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভও করেছেন শিক্ষার্থীরা। বক্তব্য দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। দলটির অনেক নেতাকর্মী সেনাবাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়ে এনসিপি। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, তার (হাসনাত আবদুল্লাহ) এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে এবং রাষ্ট্রের ফাংশনাল জায়গায় আমরা দেখি যে, ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক জায়গায় হস্তক্ষেপ করছেন। আমাদের কাছে এই ধরনের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এই সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নেবে এবং সরকারি যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর এতে জড়িত না হওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যদিকে সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’। এছাড়া তার বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর গত রোববার এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম হাসনাতের বক্তব্যের বিরোধিতা করে পৃথক স্ট্যাটাস দেন। ১১ই মার্চ ক্যান্টনমেন্টের ওই বৈঠকে হাসনাতের সঙ্গে সারজিসও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে, এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি। বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে। তিনি বলেন, যে টোনে হাসনাতের ফেসবুকের লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো একদিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। হাসনাত-সারজিসের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে এনসিপি। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও দলটির প্রকাশ্য বিরোধে জড়ানো স্পষ্ট হয়। এমনকি এমন গোপন বৈঠকের বিষয় প্রকাশ্যে আনায় দলটির প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও। বিষয়টি নিয়ে খোদ এনসিপি’র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও সমলোচনা করা হয়। বিষয়টির সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও পরামর্শ নেয়া হয়। সূত্রের দাবি, সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেন নেতারা। আনঅফিসিয়ালি নিজেদের ভুল স্বীকার করে বার্তাও দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সেনা জনতার অভ্যুত্থানের ফসল লুটকারী হিসেবে মন্তব্য করেন। একই স্ট্যাটাসে তিনি রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর পুনর্বাসন নিয়েও অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন। নাসীরের দেয়া ওই স্ট্যাটাসের যখন কড়া সমালোচনা হচ্ছে তখন তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। এরপর ওইদিন রাতে এনসিপি তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নেতাকর্মীদের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে কড়া নির্দেশনা দেয়। দলটি মনে করছে, অযাচিত বক্তব্য দিলে জনগণের মধ্যে এনসিপি নিয়ে প্রত্যাশা আছে সেটিও ভাটা পড়বে। তাই নেতাকর্মীদের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। |