![]() সাতক্ষীরা আশাশুনির কাদাকাটির জলমহাল ইজারা পান না জেলেরা
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
|
![]() এদিকে ওই জলমহালগুলোতে মাছ শিকার বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় জেলে পল্লীর প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের পথ রুদ্ধ হয়েছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেক পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বাপ দাদার পেশা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার একর জমিতে সরকারি ৮৯টি জলমহাল রয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ একরের কাদাকাটি বিল ফিসারিজ নামক জলমহাল রয়েছে। জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লু এবং কাদাকাটি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হাফিজুর উক্ত সমিতির নামে ২০২২ সালে ৬ বছরের জন্য ১৩লাখ ৬২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে সাব লিজ দিয়ে স্বনামে বেনামে অবৈভাবে দখল করে রেখেছে। এছাড়া ইউনিয়নের বাকী ৭টি জলমহালও জিল্লু এবং হাফিজুলের দখলে। সরেজমিনে কাদাকাটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়নের দুই পাশে ধাপুয়া ও হামকুড়া এবং মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা কাদাকাটি বিল ফিসারিজ দিয়ে পানি নিস্কাশন হয়। মোকামখালি এবং গাবতলা স্লুইসগেট ইউনিয়নের একমাত্র পানি নিষ্কাশনের পথ। ক্ষতিকর কারেন্ট জাল ও অবৈধ নেট পাটা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে মাছের বংশ সমূলে ধ্বংস ও পানি চলাচলের রাস্তা রুদ্ধ করছে। এতে বছরের অধিকাংশ সময়ে পানিতে ডুবে থাকছে ইউনিয়নের মানুষ। এছাড়া ইজারা শর্তে জলমহল অন্য কারো কাছে সাব লিজ প্রদান করা বিষয়ে নিষেধ থাকলেও সেটা মানা হচ্ছেনা। স্থানীয় জেলে সুকুমার তরফদার বলেন, গাবতলা নদী আগে অনেক বড় ছিলো এবং জেলেরা ডাক নিয়ে মাছ চাষ করত। অনেক জেলে পরিবার এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। পানি নিষ্কাশনের কোন বাধা হতো না। বর্তমান সমিতির কোন সদস্য মাছ চাষের সাথে নেই। নীতিমালা অনুযায়ী মাছ চাষ হচ্ছে না। নীতিমালা অনুযায়ী কোন সাইনবোর্ডও নেই। অনেক ব্যক্তিই জানেনা তারা এই সমিতির সদস্য। তাদের কাছ থেকে আইডি কার্ড নিয়ে এই সমিতি তৈরী করা হয়েছে। সরকার জলমহল হিসেবে ইজারা দেওয়ায় অধিকাংশ জেলে বাধ্য হয়ে তারা তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছে। মৎস্যজীবী সমিতির অধিকাংশ সদস্যই মৎস্যজীবী বা জেলে নয়। প্রকৃত জেলেরা জলমহল ইজারা পায়না । রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি মহল এটা ইজারা নিয়ে থাকে। নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করা হলে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার কারণে ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বছর তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে ছিল। তাদের দাবি প্রকৃত জেলেদের কাছে জলমহল ইজারা দেওয়ার দাবি করছি। কাদাকাটি এলাকার প্রসাদ মন্ডল নামে কৃষক বলেন, খালের পানি মোকামখালি গেট দিয়ে কাদাকাটি বিলে দেওয়া হচ্ছে। এতে আমাদের ধান ডুবে গেছে । ইউএনও স্যার এখনও ব্যবস্থা না নিলে আমাদের ধান নষ্ট হয়ে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই জেলে বলেন, সাতক্ষীরার জিল্লু সাহেব ও কাদাকাটির হাফিজুল ইসলাম নামমাত্র মূল্যে টাকায় জলমহল ডেকে নেয়। পরে তারা অনেক মানুষের কাছে সাব লিজ দেয়। তারা আর কাউকে ডাকতে দেয় না । জিল্লু সাহেব মৎস্যজীবী লীগের নেতা। তার ব্যাপক ক্ষমতা। হাফিজুল এবং জিল্লুর পাশ কাটিয়ে জলমহল ইজারা নেওয়ার ক্ষমতা নেই কোন জেলের। সাব লিজের মাধ্যমে নেট-পাটা দিয়ে জলাবদ্ধ সৃষ্টি করে। আগে দেখতাম শুধুমাত্র জেলে সম্প্রদায় মৎস্যজীবী। যাদের একমাত্র জীবিকা ছিল মাছ ধরা ও মাছ বিক্রি করা । কিন্তু এখন মুসলমানরা জেলে হয়েছে । তারা মাছও ধরে না। মাছ চাষও করেনা। নদী খাল দখল ও ইজারা দেওয়ার কারণে প্রকৃত জেলেদের মাছ ধরায় জায়গা নেই। সেজন্য তারা বাধ্য হয়ে অন্যান্ন পেশায় চলে গেছে। অল্প কিছু জেলে পরিবার খুব কষ্টে তাদের বাপ দাদার পেশা টিকিয়ে রাখলেও সরকারি জেলে কার্ডও তাদের কপালে জোটে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, প্রকৃত জেলেরা জলমহলটি বরাদ্ধ পাচ্ছে না। একটি সিন্ডিকেট জেলার যতগুলো জলমহল আছে সেগুলো সচিবলায়ে লবিং করে বরাদ্ধ নিয়ে নিচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের মূল হুতা জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। জেলার অধিকাংশ জলমহল তার দখলে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও এখন বহাল তবিয়তে আছে এই জিল্লুর রহমান। এখনও প্রতিনিয়িত তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা যায়। ছাত্র-জনতার এত ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন হওয়ার পরও স্বেরাচারী সরকারের দোষরা এসব জায়গা দখল করে আছে বিষয়টি অত্যান্ত দু:খজনক। তিনি আরও বলেন, কাদাকাটিতে মৎস্যজীবী সমিতির কোন কার্যক্রম নেই। হাফিজুল এই সমিতি দখল করে রেখেছেন। প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে কম টাকা নিজের নামে জলমহাল ইজারা নিয়ে পরে বেশি টাকায় সাব লিজ দিয়ে থাকে। জাল যার জলা তার এই বিষয়টি বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, নদী এবং খালে নেট-পাটা দেওয়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এতে ইউনিয়ন ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে মাত্র ১৩ লাখ টাকা পরে তারা বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা সাব লিজ দিয়ে সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঝিকরা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিলাল একজন প্রকৃত জেলে । তিনি ডাকে অংশ নিলেও তাকে কৌশলে বাদ দেয় হাফিজুল এবং জিল্লু গং । কাদাকাটি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হাফিজুল বলেন, আমি ৪৫০ বিঘা জলমহাল ইজারা নিয়েছি। এর মধ্যে ৮০ বিঘা জমিতে আমি মাছ চাষ করি। বাকি জলমহাল আমার চাচাতো ভাই এবং কার্ডধারি ৩০/৩৫ জন জেলে মাছ চাষ করে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের কাদাকাটি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাইন বোর্ড খুঁজে পাচ্ছিনা। কে বা কারা সমিতির সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলেছে। সরকারি জলমহালের বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি সাতক্ষীরার জিল্লু ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, আমি মৎস্যজীবী লীগ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলা কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে আছি। প্রান্তিক মৎস্যজীবীদের সার্বিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসন করা আমাদের কাজ। আমরা কোন দলবল বুঝিনা যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের সাথে যোগাযোগ করে কাজ করতে হয়। তবে যে মৎস্যজীবী যে এলাকার লোক, সে তার এলাকার জলমহল ইজারার প্রাপ্য। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় বলেন, প্রকৃত জেলেরা জলমহাল ইজারা পায়না এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি জানিয়েছেন খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখবো। |