![]() দেড় দশক পর বিএনপির ‘ভয়হীন’ ঈদ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() দলটির নেতারা বলছেন, এবারের ঈদে কার্বন-ডাই অক্সাইডমুক্ত অক্সিজেনযুক্ত বাতাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। বিগত সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে তাদের তটস্থ থাকতে হতো। এবার চমৎকার পরিবেশে নেতারা ঈদে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবারের ঈদ নেতা-কর্মীদের জন্য স্বস্তির। কেমন ছিল গত সাড়ে ১৫ বছর গত দেড় দশক ধরে বিএনপিসহ মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করে তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ছয় মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। কোটা বাতিলের দাবিতে ওই আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে দাঁড়ায়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এ দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের যাত্রায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে কোনো জাতীয় বা ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারেনি। ওয়ার্ড বা ইউনিট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের নামে ছিল হাজার হাজার মামলা। গ্রেফতার আতংকে অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা নিজ বাড়িতে রাত কাটাতে পারেনি। নানানভাবে তাদের হয়রানি করেছে কখনো পুলিশ কখনো ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এখন অধিকাংশ রাজনৈতিক মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীরা অনেকটা মুক্ত। ঈদ কেন্দ্র করে অনেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রায় এক দশক পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন খালেদা জিয়া ঈদের দিন বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, এবার সেটা হচ্ছে না। ২০১৫ সালের পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ উদযাপন করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর সেখানে বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ‘ভয়’ জয় করে ‘স্বস্তির ঈদ’ এবারের ঈদ নিয়ে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক কথা বলেছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। সবার বক্তব্যে উঠে এসেছে এবার নির্ভয়ে স্বস্তির সঙ্গে ঈদ উদযাপনের বিষয়টি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় দশক পর স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়েছে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে ঈদ নিঃসন্দেহে স্বস্তির। পাশাপাশি গত দেড় দশকে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য এবারের ঈদ আরও বিষাদের।’ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, ‘এবারের ঈদ একটু স্বস্তির। গত ঈদসহ গত দেড় দশকে বিভিন্ন ঈদে আমি নিজে কারাগারে ছিলাম। সেই তুলনায় এবারের ঈদ আমাদের জন্য বেশি স্বস্তির। বহু বছর পর আমরা স্বস্তি নিয়ে ঈদ উদযাপন করবো।’ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন বলেন, ‘ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নতুন পরিবেশে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করবেন নেতা-কর্মীরা।’ জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘গত দেড় দশকে আমরা হামলা-মামলায় বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত ছিলাম। এখন ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে শান্তিতে ঈদ উদযাপন করবো।’ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, ‘গত ১৭ বছর ঘরের ভেতর থেকেও আতংক লাগতো। এখন সেই আতংক নেই যে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে পুলিশ হয়রানি করবে, গ্রেফতার করবে বা আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করবে। সেই তুলনায় পরিবেশ এবার অনেক ভালো। তবে সরকারের দুর্বলতার কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়।’ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ৬ নম্বর সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ঈদের সময় ১০ মামলার আসামি হয়ে ফেরারি ছিলাম। ঈদ কেমন কেটেছে সেটি বলে বোঝাতে পারবো না। এবার সুন্দরভাবে এলাকায় থেকে রোজা পালনের পর ঈদ করতে যাচ্ছি।’ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক স্বস্তি নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবার ঈদ উদযাপন করবেন। আগে বাড়িতে থেকে ঈদ করতে পারলেও স্বস্তি ছিল না।’ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর পর এবার বিএনপি এবং দেশের মানুষ নির্ভয়ে নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। ফ্যসিস্ট হাসিনা সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন ও গ্রেফতার আতংকে নিজ বাড়িতে ঈদ পালন করতে পারেননি বিগত দেড় দশক।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘১৭ বছর পর বাংলাদেশের মানুষ ঈদ উৎসব করবে। বিগত সময় মানুষ বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। এবারের ঈদ উৎসব অত্যন্ত স্মরণীয়।’ দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এবার ঈদ বিএনপি নেতা-কর্মীদের জন্য নির্ভয়ের। তবে প্রভাবশালীদের প্রভাবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘কার্বন-ডাই অক্সাইডমুক্ত অক্সিজেনযুক্ত বাতাসে নেতাকর্মীরা এবার ঈদ উদযাপন করবেন। আবার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছে তারা কিন্তু ফেরত আসেনি। সুতরাং, সেই পরিবারের জন্য বিষয়টা বিষাদের।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সদ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আশা-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এবার হয়তো পুলিশের নির্যাতন নেই, আওয়ামী লীগের নির্যাতন নেই, কিন্তু মানুষ এখনো স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারেনি।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। কোনো দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হলে ভিন্নমতের মানুষেরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। মামলা-হামলা আর নির্যাতনে আমরা উৎসব অনুষ্ঠানও করতে পারিনি। গণতন্ত্রকামীদের জন্য এবারের ঈদটি ভিন্ন আমাজের।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘অবশ্যই বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবার ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করবেন। গত ১০ বছর বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঈদ করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের ভয়ে। এবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঈদ করতে পারবে না জনরোষের ভয়ে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর নুরুল আমিন বেপারী বলেন, ‘এবারের ঈদে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় বিচরণ করতে পারবে। গত দেড় দশকে এটা তারা করতে পারেনি।’ |