![]() ঈদের ছুটিতে ‘গুজব’ থেকে সাবধান
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() গুজব ছড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন ফেসবুক। কোনো নিউজ চ্যানেল বা সাইটের ফটোকার্ড নকল করেও প্রচুর সংখ্যক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি যাচাই করে দেখা যায়, সম্প্রতি ছড়ানো প্রায় সবই রাজনৈতিক ইস্যুভিত্তিক গুজব বা অপতথ্য। পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীসহ স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও এসব গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক অপতথ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে জনপ্রিয় গণমাধ্যমের নামে ‘ফটোকার্ড’ বানানো হচ্ছে। গত ২৩ মার্চ রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে- ‘সোমবার সকাল থেকে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে।’ এরপর যে যেভাবে খুশি নিজেদের মতো বিশ্লেষণ করে ছড়িয়ে দেয় ফেসবুকে। এটি যে অপতথ্য বা অপপ্রচার বা গুজব, তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। যদিও বিষয়টি নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ২৮ মার্চ ছড়িয়ে পড়ে, কুমিল্লা জেলার হাসানপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার তথ্য। কুমিল্লার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়। পরে পুলিশ জানায়, প্রকৃতপক্ষে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত ভিডিওটি গত বছরের ১৭ মার্চ কুমিল্লার হাসানপুরে ঘটে যাওয়া বিজয় এক্সপ্রেস টেন দুর্ঘটনার। এর আগে গত ২২ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, গত দুদিনে ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। যেটি পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তর নিশ্চিত করে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমন অসংখ্য গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায় প্রতিদিন। সাধারণ মানুষ এগুলো সত্য ভেবে দিচ্ছেন শেয়ার, করছেন মন্তব্য। বেশকিছু গুজবের পোস্ট ভাইরাল হতেও দেখা যায়। এসব গুজব যারা ছড়ায় তারা বেশিরভাগ জেনে-বুঝেই ছড়ায়। আবার কিছু সংখ্যক মানুষ শেয়ার করেন না জেনেই। গত ২৩ মার্চ মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আটক হয়েছেন। এছাড়া ছড়িয়ে দেওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শত শত সদস্য দলবেঁধে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। যেটি দিয়ে কেউ কেউ ছড়িয়ে দেন যে, ঢাকার রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নেমে পড়েছে। যদিও ওই রাতেই জাগো নিউজ নিশ্চিত হয়, ফুয়াদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ আটক করেনি। আর ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ওই রাতের দাবি করা হলেও, ফ্যাক্ট চেকাররা বলছেন, ওই ভিডিওটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজশাহীতে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানের। এছাড়াও কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন, জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠিত হচ্ছে’ বলেও অপপ্রচার চালানো হয়। একটি সূত্র বলছে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। নিজেদের কর্মীদের চাঙা রাখতে এবং জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে নানা ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ওই রাজনৈতিক গ্রুপটি দেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়- এমন গুজবও ছড়াচ্ছে, যা ভয়ংকর। গুজব ছড়ানো অন্য একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের উসকানিমূলক তথ্য বা ভিডিও ছড়াচ্ছে। এরা মূলত ভিউ ব্যবসায়ী। এই দুই গ্রুপের ছড়ানো গুজব তৃতীয় পক্ষ না বুঝেই ছড়িয়ে দিচ্ছে বা শেয়ার করছে। পুলিশের সাইবার ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইবার স্পেস ব্যবহার করে সব সময়ই নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক ইস্যুভিত্তিক গুজব বেড়েছে। এ ধরনের গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো সব সময়ই সাইবার স্পেসে নজর রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে তা বাড়ানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সতর্কবার্তা ঈদুল ফিতর সামনে রেখে গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের ‘মহোৎসবের’ জন্য জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ‘পলাতক অপশক্তিকে’ দায়ী করে সামগ্রিক ঐক্য দিয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। গত কিছুদিন ধরে নানামুখী গুজব ছড়ানোর প্রসঙ্গ ধরে ইউনূস তার ভাষণে বলেন, আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব সব প্রক্রিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এক ছবির সঙ্গে অন্য ছবি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ঘটনা একটা ছবি আরেকটা এরকম ফটোকার্ড বানিয়ে, অন্য দেশের ঘটনাকে এ দেশের ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলছে। যতই নির্বাচন কাছে আসবে এর রূপ আরও ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। পুলিশ সদর সূত্রে জানা যায়, গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সজাগ রয়েছে পুলিশের প্রত্যেক ইউনিটের সাইবার ইউনিট। বিশেষ করে ঈদের মধ্যে দেশে যে কোনো প্রান্তে গুজব প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটর করছে পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো। এছাড়া ৯৯৯-এ যোগাযোগ করেও জনগণ পুলিশকে যে কোনো তথ্য দিতে পারে। ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ‘ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিট রয়েছে। সেখানে দক্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন, নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে প্রযুক্তির সঙ্গে তারা কাজ করে চলেছেন।’ ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার (ডিসি) বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো সাইবার স্পেসে দেখা গেছে। তবে পুলিশের সাইবার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করে আসছেন। পাশাপাশি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এই গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘ঈদে যে কোনো গুজব প্রতিরোধে আমাদের সাইবার টিম নজরদারি বাড়িয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে অপরাধীদের যে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত ডিবি।’ |