![]() আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে তিন গুণ টাকা আবদার, কমিশনের বাগড়া
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ তৃতীয় ধাপের প্রকল্পে এ ব্যয়প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এ প্রস্তাবনা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ব্যয় কমানোর জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পে নানা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। প্রকল্পের অনুকূলে দেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩ জেলার ৪৬টি উপজেলায় ৮০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে মার্চ ২০১১ থেকে জুন ২০১৫ মেয়াদে মোট ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ মেয়াদে মোট ৫৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। বর্তমান বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় এবং সংখ্যা আনুপাতিক হারে যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো হবে। প্রকল্পে আপ্যায়ন খরচ বাবদ দুই লাখ, অনিয়মিত শ্রমিক মজুরি খাতে ১০ লাখ, ইন্টারনেট-ফ্যাক্স খাতে ৫ লাখ, টেলিফোন বিল খাতে ৭ লাখ টাকাসহ অন্য অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিক হারে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, যে সব খাতের একক পরিমাণ থোক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে প্রকল্পে উল্লেখ করা জরুরি বলে মত দিয়েছে কমিশন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিটি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ছয় কোটি ৮৩ লাখ টাকা খরচ পড়বে। আগের দুই ধাপ বিবেচনায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ বাবদ চার কোটি ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়তি এ ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করেছে কমিশন। প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৬৬১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে জুন ২০২৭ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাড়তি ব্যয় প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) (যুগ্মসচিব) মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘নতুন বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ডিজাইন পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি আগেরগুলো ২০১১ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়েছে। নতুনগুলো ২০২৩ সালের রেট শিডিউল অনুসারে বাস্তবায়িত হবে। এসব কারণে খরচও বাড়বে। নতুনগুলো আধুনিক ও মানসম্মত। এক হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া যাবে। তবে দুর্যোগকালীন দুই হাজার মানুষকে থাকতে পারবে।’ বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় নির্মাণের বাড়তি ব্যয় নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগে কয়েকবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সামনে আবারও পিইসি সভা হবে। সেই সভায় বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি সমাধান হবে। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধান (খাদ্য ও সার মনিটরিং উইং) মোছা. মাজেদা ইয়াসমীন বলেন, ‘বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের বাড়তি ব্যয় নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে ফের পিইসি সভা হবে। সভায় সব পক্ষের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। তখনই আসলে সিদ্ধান্ত হবে ব্যয় কমানো হবে না ঠিক রাখা হবে।’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রকল্পের উদ্দেশ্য উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি হ্রাস ও সামর্থ্য বাড়ানো, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিপদাপন্ন মানুষ ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া, প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পরিবেশের মানোন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে জনহিতকর কাজে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া দুর্যোগকালে ৮০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিটিতে এক হাজার জন করে মোট ৮০ হাজার বিপদাপন্ন মানুষের আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রকল্পভুক্ত ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের আধুনিক সুবিধা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এসব ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দেশে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, কয়েক বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন-২০২২’ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদাপন্ন ১৯২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পঞ্চম। দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ১৭টি জেলায় বসবাস করে। দেশের উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানুষের জীবন এবং সম্পদ রক্ষার্থে বর্তমান সরকার যুগোপযোগী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থা চার হাজার ৬৫৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী, ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দিলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অতিদরিদ্র হওয়ার কারণে আগের অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারছেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা মানুষ এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রধান কার্যাবলি প্রতিটি তিন তলা বিশিষ্ট মোট এক হাজার ৬৯৬ বর্গমিটার আয়তনের অবকাঠামো নির্মিত হবে। প্রকল্পভুক্ত ৮০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে প্রতিটিতে গভীর নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। |