/ সাক্ষাৎকার / আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে লড়ে যাব
আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে লড়ে যাব
আলো চৌধুরী :
|
আসন্ন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদে (স্বতন্ত্র) সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী মোঃ মাহবুবুর রহমান সাজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলো চৌধুরী আলো: শুভ সকাল সাজিদ : শুভ সকাল আলো: দীর্ঘদিন ২৮ বছর পর এসএম হল সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এই নিয়ে অত্র হলের শিক্ষার্থীরা কি ভাবছে? সাজিদ: অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ভাবছে ডাকসুর মাধ্যমে একটু হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আলো: আপনি তো এবারে এসএম হল সংসদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন? সাজিদ : হ্যাঁ, করছি। আলো: তো প্রতিনিধি কেন হতে চান? সাজিদ : আমি দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। তৃতীয় বর্ষেও আমি সিট পাইনি। আমার অনেক বন্ধুরাও পায়নি। ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ, ৩য় বর্ষ এমনকি মাস্টার্সের অনেক শিক্ষার্থীরাও সিট পায়নি। এছাড়া, নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত আমার এই হল। গেস্টরুমের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ আমি সাধারন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং আমার হলে একটি সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আলো: আপনি কোন প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন? সাজিদ : আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। আলো: আমি সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এটা কি সত্যি? সাজিদ : হ্যাঁ, আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি আমি প্রত্যাহার পত্র জমা দিতেও বাধ্য হয়েছিলাম। পরবর্তীতে প্রত্যাহার পত্র ছিড়ে ফেলা হয়। আমি আমার প্রার্থীতা ফিরে পাই আলো: সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? সাজিদ : আমি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মনোনয়ন গ্রহণ করি। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার জন্য আমাকে বিভিন্ন সময় খোঁজ করা হয়। এদিকে ২ মার্চ প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ০১ মার্চ রাত ৮.৪৫ মিনিটের দিকে আমার বর্ষের তিনজন বইমেলায় গিয়ে আমার সাথে এটা সেটা কথা বলে। আমি তাদেরকে দেখেই বুঝে নেই যে তারা আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। আমি তাদেরকে বলি, "তোমরা যেতে পার, আমি পালাবো না। আজ হলেই থাকবো।" ওরা আড়ালে চলে যায় এবং গতিবিধি লক্ষ্য করে। ভিসি চত্বর অতিক্রম করার পর তাদেরকে আবার পিছনে দেখতে পাই। আমি আর আমার বন্ধু ফাহিদ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলাম কি করব। তখন সেই তিনজনের মধ্যে একজন তুহিন ফোন দিয়ে আরও কয়েকটা ছেলেকে আসতে বলে। এদিকে আরিফ ভাই সৈকতকে বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছিলেন। সৈকত আরিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য আমার কাছে মোবাইল দেয়। আমি কথা বলি। আরিফ ভাই বলছিলেন," এসো, মিসাদ আর তোমার মধ্যে আলাপআলোচনা করো।" আমি মেনে নিই। সাড়ে নয়টার দিকে আমি ওরা তিনজন সহ ১১১ নং রুমে আসি। এসেই দেখতে পাই ভিতরে বসে আছেন অনিক ভাই, মোজাহিদ ভাই, আরিফ ভাই এবং আমার প্রতিযোগি প্রার্থী মিশাদ ভাই। প্রথমে আরিফ ভাই কথা শুরু করেন। কেন আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি জানতে চান। আমি বলি, " আমি তৃতীয় বর্ষে পড়ি। অথচ আজও আমি আমার বৈধ সীট পাইনি। আমার বন্ধুরা অনেকেই পায়নি। ১বর্ষ, ২য় বর্ষ সবাই বারান্দায় থাকে। আমি আমার এবং সকলের অধিকার আদায়ের জন্য প্রার্থীতা করব। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে পছন্দ করি। কিন্তু সেটা হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ।" আমি এসব লজিকাল কথাবার্তা বলছিলাম। উনারা উত্তোজিত হয়ে উঠেন। প্রথমেই আমাকে চড় মারেন অনিক ভাই। তারপর তুই শিবির বলে আমার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আমি লক খুলতে চাইনি। আমাকে চড় মেরে লক খুলতে বাধ্য করেন মোজাহিদ ভাই ও অারিফ ভাই। আমার মেসেঞ্জারের চেটলিস্ট, ফেইসবুক গ্রুপ ইত্যাদি চেক করেন। আমি বারবার বলতে থাকি, "আপনারা আমার মোবাইল চেক করতে পারেন। তবে সেটা হল প্রভোস্ট কিংবা হল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে করা হোক।" আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার পরিবার, দাখিল মাদরাসা, আলিম মাদরাসা প্রত্যেকটাই শিবির বিদ্বেষী। আপনারা তথ্য, প্রমাণ নিন। জানুন আমার সম্পর্কে। বারবার মানা সত্ত্বেও আমার মোবাইল চেক করতে থাকেন। তারপর ২/৩ টি মোবাইল দিয়ে আমার ফেইসবুকে ঢুকেন। আমি প্রত্যেকবারই আমার পাসওয়ার্ড দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করি। আমাকে মেরে বাধ্য করা হয়। তখন মিশাদ ভাই উত্তেজিত হয়ে আমার কান মলেন। আমার স্কাউটিংয়ের বিভিন্ন গ্রুপ এবং বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক সংঘের বিভিন্ন গ্রুপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। আমার বাড়ির মোবাইল নং চান। আমি দিতে না চাওয়াতে আমাকে মেরে বাধ্য করা হয়। এভাবে চলে রাত ১.০০ টা পর্যন্ত। তখন এই রুমে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এই রুমে তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রও ছিলেন। তার নাম সম্ভবত মিলু। রাত ১.০০ টার দিকে আমি দেখতে পাই ওরা এগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি প্রত্যাহার করার কথা বলি। তারপর আমাকে ১১৭ নং রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে মিশাদ ভাই, মিলুসহ কয়েকজনের প্রহরায় আমাকে সেখানে আটকে রাখা হয়। পরদিন সকাল ৭.০০ টার দিকে আমাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় ১৭৪ নং রুমের পাশে এক খুপড়িতে। সেখানে আমাকে প্রত্যাহার পত্র লিখতে বাধ্য করা হয়। আমি লিখি এবং সাক্ষর করি। সকাল ১০.০০ টায় আমাকে কড়া প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হয় হল অফিসে। আমি প্রত্যাহারপত্র জমা দিই। ১০.০০ টার কিছু পরেই হল প্রভোস্ট মাহবুবুল আলম জোয়ারদার স্যার অফিসে আসেন। আমি উনার কক্ষে যাই। আমার সাথে গতরাতে যা হয়েছিল সব বলি। প্রভোস্ট স্যার ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে মনোনীত জিএস জুলিয়াস সিজার ভাইকে ডাকেন। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। জুলিয়াস সিজার ভাই ঘটনা শুনেছেন এবং তদন্ত করবেন বলে জানান। তারপর প্রভোস্ট স্যার আমার লিখিত প্রত্যাহারপত্র নিজহাতে ছিড়ে ফেলেন। আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় জুলিয়াস সিজার ভাইকে । এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া আসে। আমি কথা বলি। আলো: আমি আপনার ইশতেহার দেখেছি।আপনি গেস্টরুম কালচার বন্ধ করার কথা বলেছেন।নির্বাচিত হলে আপনার পক্ষে কি এটা বন্ধ করা সম্ভব? সাজিদ: যুগে যুগে বিভিন্ন জঘন্য প্রথা গড়ে উঠেছিল। যেমন বর্ণবাদ প্রথা, দাসপ্রথা, সতীদাহ প্রথা ইত্যাদি। এগুলোর বিরুদ্ধে সচেতন মানব সমাজ প্রতিবাদ করেছিল। আমি চাই সবাইকে সচেতন করতে। সবাই সচেতন হলে, আশাকরি যেভাবে উপরোল্লেখিত প্রথাগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেভাবে গেস্টরুম প্রথাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আলো: ছাত্রলীগ প্যানেল ব্যতীত অন্য সকল বিরোধী প্যানেল হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেছেন।এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? সাজিদ : আমি আমার একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র হওয়ার কথা (যেটি ATN বাংলায় প্রচারও হয়েছিল)। আলো : এবারের ডাকসু নির্বাচনে দুনীর্তি হবে বলে বিরোধী প্যানেলগুলো অভিযোগ করছে।এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন? সাজিদ: হলগুলো যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবাধীন। তাই দুর্নীতি হওয়াটা অসম্ভব বা অবাস্তব নয়। কিন্তু এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কলঙ্কিত মানে দেশ ও জাতি কলঙ্কিত। আমি আশাকরি দেশ ও জাতিকে কলঙ্কিত করা হবেনা। এবিষয়ে নির্বাচনকালীন ভোটের দিন নির্বাচনের সাথে জড়িত সকলের দায় থাকবে। আলো: নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে কি আপনি মনে করেন? সাজিদ: আমি বিশ্বাস করি,Truth shall prevail আলো: নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী? সাজিদ: আশাকরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা তাদের সচেতনতার পরিচয় দিয়ে ব্যালট নং -১ এ ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন। আলো: নির্বাচনে জয়ী হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আপনি কী করবেন? সাজিদ: আমি সাহসিকতার সাথে অধিকারহারা এবং নিপীড়িত সকল শিক্ষার্থীদের কথা সবমহলে তুলে ধরব। আলো: কিন্তু নির্বাচনে যদি আশানুরুপ ফল না আসে তাহলে পরবর্তীতে আপনার ভূমিকা কি হবে? সাজিদ: আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে লড়ে যাব। একদিন সত্যের জয় হবেই আলো: সকল ভোটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন? সাজিদ: সকল ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দীর্ঘ ২৮ বছর পর আপনারা যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছেন। সুতরাং সচেতনতার পরিচয় দিবেন। আলো: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাজিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। |