/ ভ্রমণ / দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা ও পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বদলে গেছে পর্যটক শিল্প
দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা ও পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বদলে গেছে পর্যটক শিল্প
এস এল টি তুহিন, বরিশাল :
|
পায়রা ও পদ্মা সেতু চালু হবার সাথে সাথে কমে গেছে ঢাকা থেকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলাসহ আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পট কুয়াকাটার দূরত্ব। মাত্র ৫/৬ ঘন্টায় এখন কুয়াকাটা আসতে পারবে ঢাকা থেকে আসা যে-কোনো পর্যটক। আর যদি এরই মধ্যে বরিশাল – ভোলা সংযোগ সেতুটি তৈরি সম্পন্ন হয়ে যায় তাহলেতো কথাই নেই। দ্বীপরানী ভোলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উম্মুক্ত হয়ে যাবে বিশ্ববাসীর কাছে। দেশতো বটেই সারা বিশ্বের দর্শনার্থীরা তখন একটি মাত্র রুটে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে এসে বরিশাল, ভোলার মনপুরা, চর কুকরী-মুকরীসহ উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলোতে যেমন ভ্রমণ করতে পারবেন, ঠিক তেমনি আবার ফিরতি পথে ঘুরে আসতে পারবেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরগুনা ও সুন্দরবন। কেননা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর কুয়াকাটাই এখন সুন্দরবনের প্রথম প্রবেশদ্বার। এছাড়াও নিরাপত্তার বিবেচনায় কুয়াকাটাকে ঘীরে রয়েছে টুরিস্ট পুলিশের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থাপনাতেই সুন্দরবন ও বরগুনার উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে বলে জানালেন টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওন এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। এতদিন কুয়াকাটায় আসতে পর্যটকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু, গত বছরের ২৫ অক্টোবর পায়রা সেতু এবং চলতি বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল ও কুয়াকাটার দূরত্ব অনেক কমে গেছে। তাই কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা এখন দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। এতে করে কুয়াকাটাই শুধু নয়, ভোলা, বরগুনার তালতলী ও পাথরঘাটা, ঝালকাঠির আটঘর কুড়িশানাসহ সুন্দরবনকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। আর এই সম্ভাবনার নিরাপত্তা দিকটি নিশ্চিত করতে কুয়াকাটায় রয়েছে টুরিস্ট পুলিশের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ বলে জানান আবুল কালাম। বরিশাল জেলায় ঘোরাঘুরি আগে একটি প্রবাদ ছিলো – ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল। ধানের ব্যাপক উৎপাদন এখন আর তেমন না থাকলেও নদী ও খালের বিস্তার বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাতেই সমান বলা চলে। কীর্তনখোলা বরিশালের প্রধান নদী। এই নদীকে ঘিরে শহরের ভিতর সাতটি খাল ছাড়াও আশেপাশে রয়েছে আরো ডজনখানেক খালের প্রবাহ। যে কারণে বিভাগীয় শহর বরিশালকে চন্দ্রদ্বীপ বা বাকলাও বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন বাংলার ভেনিস। কীর্তনখোলা নদী তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা পায়ে চলা পথ ও পার্কের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শক নৌ বন্দর সীমানা ধরে ঘুরে আসতে পারবেন কীর্তনখোলা ব্রীজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে অনেকে বরিশাল জেলাকে বর্তমানের সিঙ্গাপুরের সাথেও তুলনা করছেন। আর এসবটাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে। প্রাচীন ঐতিহ্য, পুরাকীর্তিসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রথমেই যদি বরিশালের দিকে তাকাই তাহলে এখানে দশটি উপজেলাকে ঘিরে ১৩টি থানা ও ৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে কোনো না কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেমন বরিশাল সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে – লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, আরজ আলী মাতুব্বরের পাঠাগার, চাঁদপুরা ইউনিয়নের গজনীর দিঘি, শহরের ভিতরে বিবির পুকুর, ব্রজমোহন কলেজ, জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি, অক্সফোর্ড মিশন গীর্জা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান(বেলস পার্ক), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শ্বেতপদ্ম পুকুর, মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী, এবাদুল্লাহ মসজিদ, অশ্বনি কুমার টাউন হল। এগুলো ছাড়াও বরিশাল জেলায় আছে দুর্গাসাগর দিঘী, গুঠিয়া মসজিদ, সাতলার শাপলা গ্রাম, শের-ই-বাংলা জাদুঘর, শংকর মঠ, জমিদার বাড়ি (মাধবপাশা), গৌরনদীতে মাহিলারা মঠ, সংগ্রাম কেল্লা, শরিফলের দুর্গ, লন্টা বাবুর দিঘী (লাকুটিয়া), কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল কাব্যে উল্লেখিত মনসা মন্দির, আদম আলী হাজীর গলি ইত্যাদি। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের প্রত্যেকটা জেলাতেই অসংখ্য দর্শনীয় চিত্তাকর্ষক স্থান রয়েছে। এসব পর্যটন স্থান ভ্রমণ করতে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি এবং বিদেশি পর্যটক ভিড় জমান। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোলার মনপুরা, চরকুকরি মুকরি, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও বরগুনা জেলার ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ, তালতলীর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ একাডেমি, সোনাকাটা বা সোনারচর, লালদিয়ার বন। সমুদ্র সৈকত ও সুন্দরবনের নিকটবর্তী হরিণঘাটা – পাথরঘাটা উপজেলা অন্যতম দর্শনীয় স্থান বরগুনার। ভোলা জেলার দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপজেলা ভোলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিও বলা হয় এই জেলাটিকে। ভোলার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিখ্যাত মনপুরা দ্বীপ, তারুয়া সমূদ্র সৈকত, শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র, চর কুকরী-মুকরী, শিশু পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার – চরফ্যাশন, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী, ঢালচর, তুলাতলী ইকোপার্ক, বোরহানউদ্দিন ইত্যাদি। ভোলার তারুয়া দ্বীপ হতে পারে তৃতীয় সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভোলার চরফ্যাশনের তারুয়া দ্বীপ হতে পারে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে এই তারুয়া দ্বীপে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো তারুয়া দ্বীপও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা। এ দু’টি সমুদ্র সৈকতের চেয়ে তারুয়া দ্বীপের আকর্ষণ যে কিছুই কম নয়, তা এখানে না আসলে বোঝা সম্ভব নয়। এখানে রয়েছে একই সঙ্গে সাগর ও বনের লুটোপুটি সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা এই দ্বীপটি এরই মধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। এই দ্বীপের সৌন্দর্যের কথা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসছে। তাই সব মহল থেকে নয়নাভিরাম তারুয়া দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে এটি আরও বেশি আকর্ষণ করবে পর্যটকদের। দ্বীপটি ঘুরে জানা গেছে, চারিদিকে জলরাশি পরিবেষ্টিত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে প্রায় ৪০ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠে তারুয়া দ্বীপ। এরপরেই সেখানে বন বিভাগ নানা ধরনের গাছপালা রোপণ করে। ধীরে ধীরে তারুয়া দ্বীপটি সবুজের দ্বীপে পরিণত হয়। বাহারি প্রজাতির গাছপালা, তরুলতা, সি-বিচ, বালু, বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন সব মিলিয়ে এক মায়াবী হাতছানী। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছে। তবে সেখানে এখনো গড়ে ওঠেনি মানুষের বসতি।এখানে হরিণ ও ভাল্লুকসহ নানা প্রাণী ও দৃষ্টি নন্দন মাটি রয়েছে। সবুজ বৃক্ষের ঝঙ্কার আর পাখিদের কলরবে মুখরিত তারুয়া দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্বের দাবি রাখে। এখানে বেড়াতে আসা স্কুল শিক্ষিকা সাহিদা আক্তার সুমনা বলেন, ‘ভোলাতে এমন সুন্দর জায়গা রয়েছে তা আমরা আগে জানতামই না। এখানে এসে বুঝতে পারলাম তারুয়া দ্বীপটি কক্সবাজারের চেয়ে অনেক সুন্দর’। তারুয়া সমুদ্র সৈকত পাখিদের যেন এক অভয়ারন্য। পাখির কলতানে মুখরিত থাকে প্রায় সবসময় । তবে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পাখির আনাগোনা কিছুটা বেশি থাকে। ভোলা ব-দ্বীপের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও পর্যটন কেন্দ্র তারুয়া বিচে সবসময়ই পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এছড়াও দেখা মিলবে লাল কাকড়ার। হাজার হাজার লাল কাকড়া সাদা বালিতে দৌড়ানের অপুরূপ দৃশ্যের। পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালী জেলাটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে। সমুদ্র সৈকতই এ জেলার প্রধান ঐতিহ্য বহনকারী বেলাভূমি। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার পর্যটন স্পট এটি। একমাত্র কুয়াকাটা এসেই বিভিন্ন ঋতুতে সাগরের বিভিন্ন রূপ উপভোগ করা সম্ভব। পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, ফাতরার চর, বৌদ্ধ মন্দির, কজালার চর, সোনার চর, কানাই বলাই দিঘী, রাখাইন পল্লী, হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পায়রা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মজিদবাড়িয়া মসজিদ, সীমা বৌদ্ধ বিহার, এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার, পানি যাদুঘর, কালাইয়া প্রাচীন বন্দর ইত্যাদি। কুয়াকাটা বাংলাদেশের এটাই একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই ভাল দেখা যায়, সব চাইতে ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাঁক থেকে আর সূর্যাস্ত দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে। এছাড়া আরও যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে কুয়াকাটায় সেগুলোর একটি হলো- ফাতরার বন।সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকে ম্যানগ্রোভ বন শুরু হয়েছে, যার নাম ফাতার বন। সংরক্ষিত বনভুমি ফাতরার বন ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, ফাতরা, গরান, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং বানর, শূকরসহ অসংখ্য জীবজন্তু ও পাখি। সমুদ্রসৈকত থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে এক ঘণ্টার যাত্রাপথে ফাতরার বনে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার কেউ চাইলে সুন্দরবন এবং বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত, লালদিয়া বন, ইকোপার্ক, রাখাইন পল্লী, বিবিচিনি মসজিদ ও হরিন ঘাটা ইত্যাদি স্থানেও ঘন্টা সময়ের মধ্যেই ঘুরে আসতে পারে। আর এর পুরো কৃতিত্ব পায়রা ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। যার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও ভ্রমণপিয়াসী মানুষেরা আজন্ম কৃতজ্ঞ থাকবে বাংলাদেশের বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিলুপ্তির এখন ঝালকাঠির সুজাবাদ নদীর বেষ্টনীতে বাধা পরা ঝালকাঠি জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুজাবাদ কেল্লাটি নদী ভাঙনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সুজানগরের বাসিন্দারা। তবে এখনো আছে ঘোষাল রাজবাড়ী, পুরাতন পৌরসভা ভবন, মাদাবর মসজিদ, সুরিচোরা জামে মসজিদ। নেছারাবাদ মাদ্রাসা, গাবখান সেতু, কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি, শের-ই বাংলা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ, বিনয়কাঠি ইত্যাদি। পিরোজপুরের দর্শনীয় স্থান পিরোজপুর জেলায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ইন্দের হাট ছাড়াও এশিয়ার সর্ববৃহৎ আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ার বাগান। যদিও এই পেয়ার বাগানের অর্ধেকটা ঝালকাঠি জেলায় আর বাকী অর্ধেক পরেছে পিরোজপুর জেলায়। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, দামোদর, সন্ধ্যা নদীর স্নেহ ছোঁয়ায় সাজানো প্রাকৃতিক লীলাভূমি পিরোজপুর। বাংলার ভাসমান বাজার হিসাবে খ্যাত কুড়িয়ানার ভাসমান পেয়ারা বাজারটিও এই জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এছাড়া রয়েছে রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি, মঠবাড়িয়ার সাপলেজা কুঠিরবাড়ি, পিরোজপুরের প্রাচীন মসজিদ, মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, শেরে বাংলা পাবলিক লাইব্রেরী, মাঝের চর মঠবাড়ীয়া, পাড়ের হাট জমিদার বাড়ী, আটঘরের আমড়া বাগান, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক, সারেংকাঠী পিকনিক স্পট, কবি আহসান হাবিব এর বাড়ী, ডিসি পার্ক ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। বরগুনার দর্শনীয় স্থানে যুক্ত হয়েছে ইকোপার্ক বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো; টেংরাগিরি, সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত, লালদিয়া বন, ফাতরার বন ও ইকোপার্ক, রাখাইন পল্লী, বিবিচিনি মসজিদ ও হরিন ঘাটা ইত্যাদি।স্থানীয় নাম ‘ফাতরার বন’। বন বিভাগের খাতায় এর নাম ‘টেংরাগিরি বনাঞ্চল’। সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় এই বন এখন প্রকৃতির বিপদে আছে। পরিবর্তিত পরিবেশে অসংখ্য গাছ মরে যাচ্ছে। উপকূল জুড়ে অপেক্ষমাণ মৃতপ্রায় অসংখ্য গাছ। বন বিভাগ বলছে, শ্বাসমূলে বালু জমে যাওয়া ও প্রবল ঢেউয়ে গোড়ার মাটি-বালু সরে যাওয়া প্রধানত এই বনের লাখ লাখ গাছের মৃত্যুর জন্য দায়ী। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সোনাকাটা ইউনিয়নে সুন্দরবনের একাংশের বিশাল বনভূমি নিয়ে গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক। প্রায় ৪০৪৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে পূর্ব পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার ও উত্তর দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত টেংরাগিরি বনের বিস্তৃতি। বনের পূর্ব দিকে রয়েছে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন আর হরিণবাড়িয়া, উত্তরে রাখাইন এবং দক্ষিণে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগর। বনের ভিতরের ইট বিছানো পথ ধরে হাটতে হাটতে দূর সাগরের মাছ ধরা ট্রলারের শব্দ কানে পৌছতে না পৌছতেই, এক সময় বনের গাছ পালার মাঝ দিয়ে দেখা যাবে ধু ধু সাগরের জলরাশি ও দুই কিলোমিটার দীর্ঘ নিরিবিলি সোনাকাটা বীচ। ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণাকৃত এই বনাঞ্চলটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ফাতরার বন/পাথরঘাটার বন/হরিণঘাটার বন ইত্যাদি নামে পরিচিত হলেও ১৯৬৭ সালে বনাঞ্চলটিকে টেংরাগিরি বন হিসেবে নামকরণ করা হয়। সুন্দরবনের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, যা দিনে দুইবার জোয়ার ভাটায় প্লাবিত হয়। লবনাক্ত ও মিষ্টি মাটির অপূর্ব মিশ্রণের কারণে এই বনে রয়েছে বিলুপ্তি প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ, পশু পাখি ও সরীসৃপ প্রাণী। টেংরাগিরির সবুজ ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, লাল কাঁকড়াদের অবাধ বিচরণ, পাখির কলকাকলি ও শেষ বিকেলের দিগন্ত রেখায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য যেকোনো পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো। আর সে জন্যেই যান্ত্রিক কোলাহল এড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাগরের বিশালতার মাঝে হারিয়ে যেতে অনেকে ভ্রমণ পিপাসুরা দূর দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে। |