/ সারাদেশ / পদ্মায় তীব্র মাছ সংকট, দিশেহারা জেলেরা
পদ্মায় তীব্র মাছ সংকট, দিশেহারা জেলেরা
নতুন বার্তা, ঈশ্বরদী (পাবনা) :
|
আষাঢ়-শ্রাবণ এলেই যৌবনা হয়ে ওঠে পদ্মা। পদ্মার উতাল-পাতাল ঢেউ দুকূলে আছড়ে পড়ে। রাতের জ্যোৎস্নায় থই থই করে নদীর চারপাশ। কিন্তু এবার ভরা বর্ষা মৌসুমেও পদ্মায় পানি নেই। তাই মাছ ধরার ব্যস্ততাও নেই জেলেদের। নৌকা-জাল নিয়ে জেলেরা নদীতে গেলেও মাছের দেখা মিলছে না।
পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট, সাঁড়া ঘাট ও লক্ষ্মীকুন্ডায় জেলেরা দিনরাত নদী চষে বেড়ালেও খুব একটা মাছ জালে তুলতে পারছেন না। মাছ না পেয়ে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। পাকশী গুড়িপাড়া, সাঁড়া ব্লকপাড়া, ৫ নম্বর ঘাট ও লক্ষ্মীকুন্ডার জেলেরা এখন অনেকটাই অলস সময় পার করছেন। সরেজমিন সোমবার (২৫ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টায় পদ্মার সাঁড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে একে একে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা সাঁড়া ঘাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে জেলেরাই হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের হাজিরা উঠছে না। সাঁড়া ঘাট এলাকার জেলে রাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন শ্রাবণ মাস। নদীতে ভরপুর পানি থাকার কথা। এ সময় ভরা নদীতে মনের আনন্দে জেলেরা মাছ ধরেন। কিন্তু এবার তো পানিও নেই, মাছও নেই। দিনরাত নদীতে মাছ ধরে ২০০-৩০০ টাকার বেশি হাজিরা হয় না। মনের দুঃখে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।’ খোকন আলী মণ্ডল নামের আরেকজন বলেন, ‘১০ বছর বয়স থেকে মাছ ধরি। এখন বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। আমরা জাত জেলে। বাপ-দাদারা সবাই পদ্মায় মাছ ধরে জীবন কাটিয়েছে। কখনো এমন মাছের সংকট দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘সারারাত পাঁচজন নৌকায় মাছ ধরেছি। এ মাছ ভোরে ২৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। নৌকা ও জাল বাবদ মহাজনের ১০০০ টাকা রেখে বাকি ১৫০০ টাকা পাঁচজন ৩০০ টাকা করে ভাগ করে নিয়েছি। এরমধ্যে সারারাতে নিজেদের খাওয়া-দাওয়া বাবদ আরও ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। ২৫০ টাকা হাজিরা দিয়েতো সংসার চলে না। কী করবো? এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।’ লক্ষ্মীকুন্ডার জেলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘জেলেদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। পানি না থাকায় মাছ নেই। এমন দুঃসময় আর কখনো আসেনি। ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সারাদিনে আধাকেজি কেজি মাছ ধরা যায় না। আধাকেজি মাছ ২০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয় না।’ সাঁড়া মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, সমিতির সদস্য ১৩২ জন। সদস্য ছাড়াও এ ঘাটে জেলের সংখ্যা প্রায় ৫০০। এখানকার জেলেরা বাচা, চিংড়ি, গাঙগারি, বাঁশপাতা, পিয়ালি, কাচকিসহ হরেক রকম মাছ ধরে। ইলিশ এখানে খুব একটা ধরা পড়ে না। সারারাত পাঁচজন জেলে নৌকায় জাল টেনে পাঁচ কেজি মাছ এখন ধরতে পারেন না। অথচ অন্যান্য সময় সারারাতে ১৫-২০ কেজি মাছ ধরা পড়তো। জেলেদের এমন দুর্দিন আগে দেখা যায়নি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকসেদ আলী জানান, প্রতিদিন ভোরে সাঁড়া ঘাটে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হতো। এখন ৩০ হাজার টাকার মাছও বেচাকেনা হয় না। মাছ পাওয়া যায় না বলে এখানকার জেলেরা অনেকেই নদীতে যান না। এখানে শতাধিক মাছ ধরার নৌকা রয়েছে। এরমধ্যে ২৫-৩০টি নৌকা নদীতে যায়। সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলেদের খুব দুর্দিন যাচ্ছে। তাদের অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ না আসায় তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) শরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই এ সময় পদ্মা নদী পানিতে ভরপুর থাকে। বর্ষা মৌসুমে মাছের প্রজনন হয়। এবার বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় মাছের প্রজনন হয়নি। আশা করছি খুব শিগগির নদীতে পানি বাড়বে। পানি বাড়লেই মাছও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকার জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে ভ্যান, সেলাই মেশিন ও ছাগল বিনামূল্যে বিতরণ করে। গতবছর জেলেদের মাঝে এগুলো বিতরণ করা হলেও এবার বিতরণের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ এলে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে। |