![]() ছোট গল্প
লাশ
মো. তুহিন হোসাইন:
|
![]() জব্বারের চায়ের দোকান বাজারে অতি খ্যাত। সমকালীন রাজনীতি নিয়ে গ্রামের নিরক্ষর লোক রোজ সন্ধ্যায় তুমুল ঝড় তোলে এখানে।তাদের কথায় যুক্তি নেই, আছে শুধুই অত্যুক্তি। জব্বার কাপ গুলো গরম পানিতে ধুয়ে প্রতিটি কাপে লোক বিশেষ চিনির পরিমাণ ঠিক করছে। চামচ আর কাপের টুংটাং শব্দ কোলাহলের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে। বাঁশের চাড়াটে আসনের এক কোনায় বসে রাজ্জাক মিয়া ঝিম ধরা চোখে বলে উঠলো, পূব পাড়ার রেজাউলির ছেলেকে নাকি পিটিয়ে কারা মারে ফেলেছে ? ছেলেটা নাকি দেশের সব থেকে বড় ইস্কুলে পড়তো? মোসলেম খেঁকিয়ে উঠলো ক্ষমতা আলাদের বিপক্ষে বললি পারে মরা তো লাগবেই। জোর যার মুল্লুক তার। আমার কত টাকার জমি শরিফুল সেদিন জোর করে দখল করে নিলো! মকবুল চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে আয়েশের একটা শব্দ করলো, আ...য়... চা টা ভালো বানিয়েছিস রে জব্বার। হ্যারে মোসলেম তোর এইসব কথা কতি কয় কিডা? উল্টো পাল্টা কথা কোয়ার জন্যই তো মরা লাগে। যখন যে ক্ষমতায় তার পক্ষে কথা কতি হয়, বিপক্ষে বললি তোরও লাশ পড়ে যাতি পারে। খলিল এলাকার মেম্বার বয়স তার ষাটের উপরে। ইদানিং তার কোমরের ব্যথাটা বেড়েছে। সে অনেক কষ্টে খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। মুখের মধ্যে জর্দা মেশানো আস্ত একটা পান ভরে বললো, ছাত্তারের ছেলের কি কোন কাজকাম নেই? ওই ছেমড়া তোর ওত ফোন টিপা ক্যান? চাচা আমি একটু ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। ওই বালডা ছাড়া তুরা আর কি ছিঁড়তি পারিস.! দেশের এই অবস্থা আর তোরা আছিস ওই ছাতার মাথা নিয়ে। চাচা আমি নিয়নের জানাযার সময় ওর লাশের সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছি। অনেক গুলো লাইক পড়েছে টপাটপ। স্যাড রিয়াক্ট ও দিয়েছে মেলা মানুষ। খলিল মেম্বারের কোমরের ব্যথাটা বেড়ে উঠেছে। সে আর বসে থাকতে পারলো না। চড়াটের আসন থেকে উঠে টর্চ লাইট হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে হুস করে এক গাল ধোঁয়া ছেড়ে শামসুল বেপারী বললো, পিঁয়েজের দাম ইবার ভালোই পালাম। এমন প্রতিবেশী না হলি পারে হয়। নবীজি বলেছে প্রতিবেশী গোর খোঁজ খবর নিতি। আমাগোর কি সেই ঈমান আছে, নবীজির কথা মান্য করবো। জব্বার ব্যস্ত হয়ে বললো ইশার আজান দেচ্ছে ভাইজান এখন দোকান বন্ধ করুম। চলেন নামাজ পড়ে আসি। শামসুল বিব্রতভঙ্গীতে বললো আজ কাপড় নাপাক। কাল কাপড় ছাপ করে পরশু দিন থিকা পড়বো ইনশাআল্লাহ। গল্পটা একনাগাড়ে এই পর্যন্ত লিখে স্বস্তির একটা নিশ্বাস নিলো উজ্জ্বল। ফেসবুকের পোস্ট অপশনে ক্লিক করে ল্যাপটপ বন্ধ করলো। ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ উজ্জ্বলের রুমের দক্ষিণ পাশ থেকে ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে। জায়গাটা অনেক কাল ধরেই ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। আসাদ হলের ৩০৭ নাম্বার রুম এটি। শীত উজ্জ্বলের খুব প্রিয় একটা ঋতু। সন্ধ্যা হতে না হতেই চারিদিকে নিস্তব্ধতা ঘনিয়ে আসে। খুব মৃদু শব্দও তখন কানে লাগে। ঘড়ির টিক টিক শব্দ বিরক্তিকর লাগছে উজ্জ্বলের কাছে। ঘড়ির ব্যাটারি খুলে ঘড়িটি টেবিলের ওপর রাখলো সে। দরজার বাইরে অনেক গুলো পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে। দরজায় জোরালো ঝাঁকুনিতে চমকে উঠলো উজ্জ্বল। |