![]() বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা যেভাবে বেড়েছে
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() নারীর প্রতি সহিংসতার এই উদ্বেগজনক চিত্রের কথা অধিকার কর্মীরা যখন তুলে ধরছেন তখন বাংলাদেশেও শুক্রবার পালিত হয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণে আন্তর্জাতিক দিবস। বাংলাদেশে পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার মামলা কমেনি। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা যেমন বাড়ছে তেমনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইনে এই হয়রানির মাত্রা বেড়েছে। ঢাকার একজন উচ্চ শিক্ষিত চাকরী নারী রাহেলা আক্তার(ছদ্মনাম) ছয় বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ে করার কিছুদিন পরে তার সামনে ভিন্ন এক বাস্তবতা এসে হাজির হয়। যৌতুকের জন্য শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর হাতেই তিনি প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন তিনি। এই নারী চান না যে তার নাম প্রকাশিত হোক। “নানাভাবে আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো। যেহেতু আমি চাকরি করতাম। মাঝে মাঝে আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে দিতো,” বলছিলেন রাহেলা আক্তার। রাহেলা আক্তারের মতো সহিংসতার শিকার হওয়ার এ রকম আরো অজস্র উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে। শুধু পারিবারিক সহিংসতা নয়, ধর্ষণ এবং আরো নানা ধরনের সহিংসতা হচ্ছে নারীর প্রতি। পুলিশের পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, ২০২১এ নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এই সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলা হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের মতো। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অনলাইন প্লাটফর্মেও নারীর প্রতি যৌন হয়রানি এবং যেগুলো শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রূপ নেয়, সেগুলো বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বহু বছর ধরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনি বলছেন, অনেক মামলার রায় হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয় না। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতাও থামছে না। “যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আসে তাদের অনেকেই ক্ষমতাবান। তারা কোনভাবেই এসব রায় বাস্তবায়নের দিকে যেতে দেয় না। অনেক সময় নথিও গায়েব হয়ে যায়,” বলেন নীনা গোস্বামী। মামলাগুলোর পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে সেটি নিয়ে সঠিক মনিটরিংও নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য গত তিন দশকে বাংলাদেশে নানাবিধ আইন হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই সহিংসতা বন্ধের জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ যেমন দরকার তেমনি সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজনীয়। সরকার বলছে, নারী নির্যাতন মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল এবং বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলছেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় তাদের কর্মকর্তারা নির্যাতিত নারীদের পাশে থেকে সহায়তা করছে। “নির্যাতিত নারীদের শুধু আইনগত সহায়তা দিয়ে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি না। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। যাতে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে,” বলেন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রণালয় বলছে, কোন নারী সহিংসতার শিকার হলে সে যাতে দ্রুত আইনগত সহায়তা নিতে পারে সেজন্য জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন যেমন রয়েছে তেমনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও হট-লাইন আছে। যেখানে নির্যাতিত নারীরা সহায়তা চাইতে পারেন। |