/ সারাদেশ / বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গা শিবিরে কী হচ্ছে?
বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গা শিবিরে কী হচ্ছে?
নতুন বার্তা, বান্দরবান:
|
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা যেন থামছেই না। তমব্রু সীমান্তের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে বুধবার একজন নিহত হবার পর বৃহস্পতিবার সকালেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার তমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগার পর কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে নতুন করে যাতে আর কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য তমব্রু সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও ঠিক কতজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকেছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন দাবি করছে সংখ্যাটি বেশি নয়। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তমব্রু সীমান্তের এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি আসলে বৈধ বা অনুমোদিত কোনো রোহিঙ্গা শিবির নয়। মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি এমন ছয়শর বেশি রোহিঙ্গা পরিবার সেখানে আন্তর্জাতিক শুন্যরেখায় অনেক দিন ধরেই অবস্থান করছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভোরে প্রায় এক ঘণ্টা গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন তারা। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে বুধবারের ঘটনার পর সেখানে নতুন করে আর কিছু ঘটেনি। উপজেলা প্রশাসন যা বলছে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেছেন শুন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই বুধবার সংঘর্ষ ও বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। “যতটুকু তথ্য পেয়েছি তাতে রোহিঙ্গাদের দু গ্রুপ—আরসা এবং আরএসওর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বুধবার। এটি তারা করেছে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অংশ হিসেবে। ওই সংঘর্ষেই একজন নিহত হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক শুন্যরেখায় হওয়ায় আমাদের সরাসরি কিছু করার নেই। তবে কয়েকজন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিলো যাদের কয়েকজনকে ধরা হয়েছে ও বাকীদের ধরার চেষ্টা চলছে,” বলছিলেন তিনি। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছিলেন যে কয়েকজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে এবং তাদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে সক্রিয় তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তমব্রু সীমান্ত ছাড়াও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও এসব সংগঠনের তৎপরতার তথ্য বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। এই সীমান্তের শুণ্যরেখায় রোহিঙ্গারা বসবাস করছে মূলত ২০১৭ সাল থেকেই। তবে গত বছর থেকেই এটি বার বার আলোচনায় আসছে নানা ঘটনার কারণে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওই সীমান্তের মিয়ানমার অংশে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে বেশ কিছুদিনের সংঘর্ষের সময় বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মর্টার শেল পড়েছিলো। পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করে জানিয়েছিলো যে ঘটনাটি ভুলে হয়েছে অর্থাৎ ভুলক্রমে মর্টার শেলটি বাংলাদেশ অংশে পড়েছে। বুধবার যা ঘটেছিলো উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তুমব্রু সীমান্তের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গোলাগুলি শুরু হয় এবং এটি চলে দুপুর প্রায় বারটা পর্যন্ত। এসময় সেখানকার অন্তত পাঁচশ ঘরে আগুন দেয়া হয় বলে জানা যাচ্ছে। ফলে এসব ঘরবাড়িতে থাকা রোহিঙ্গারা সেখানকার একটি স্কুলসহ আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এরপরই আরসা ও আরএসওর মধ্যে এ সংঘর্ষ চলছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে খবর পাওয়া যায়, যা পড়ে প্রশাসনও নিশ্চিত করে। পরে রাতে আর কোনো ঘটনা না ঘটলেও বৃহস্পতিবার ভোরে আবারো ক্যাম্পের ভেতরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। তমব্রুর উত্তেজনা নতুন নয় মিয়ানমারে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সংঘর্ষের কারণে গত বছরের অগাস্ট সেপ্টেম্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ঘুমধুম ও তমব্রু এলাকায়। অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের এলাকায় গোলা পড়ার কারণে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করেছিলো বাংলাদেশ। আর সব ধরণের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছিলো বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঠিক কোন পরিস্থিতির কারণে তমব্রু সীমান্তে এসব ঘটছে সেটি জানা কঠিন কারণ সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে কড়া সেন্সরশিপ থাকায় সেদেশের কোন তথ্য সাধারণত পাওয়া যায় না। আবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা কিছু রোহিঙ্গা গোষ্ঠীও আবার নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে কিংবা প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজনকে হত্যা করছে এমন উদাহরণও আছে। |