/ বিশেষ / ১২ দফা দাবীতে শাহবাগে বিডিইআরএম এর সমাবেশ অনুষ্ঠিত
‘দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান চায় বিডিইআরএম’
১২ দফা দাবীতে শাহবাগে বিডিইআরএম এর সমাবেশ অনুষ্ঠিত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
‘দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সকল প্রকার বৈষম্য অবসানের দাবীতে’ সমাবেশ করেছে ‘বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ। অদ্য ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (শনিবার), বেলা ১১.১৫ টায় ঢাকার শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএম এর সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত। বিডিইআরএম সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস এর সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী ও বিডিইআরএম এর প্রধান উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র নেতা দীপায়ন খীসা, দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনি রানী দাস, বিডিইআরএম ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি গগণ লাল, বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক তামান্না সিং বাড়াইক, বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস্ (বিডিএইচআর) এর সভাপতি বি. দয়ানন্দ, মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীর উচ্ছেদের শিকার ভূক্তভোগী পূজা রানী দাস প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন, জন্ম ও পেশাগত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ দলিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা, লিঙ্গ সমতা এবং সমঅধিকার ভোগের দিক দিয়ে এই জনগোষ্ঠী একেবারেই অনগ্রসর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও জাত-পাতভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ বিদ্যমান আছে দেশের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ওপর। সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি-বিধান না থাকায় ভূক্তভোগী ব্যক্তির পক্ষে আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করা কঠিন। স্বাধীনতার ৫৪ বৎসর পরও দলিতদের প্রতি নানাবিধ বৈষম্য বিরাজমান। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এবং আরো অন্যান্য নাগরিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য বিলোপ আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। ‘বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৪’ শিরোনামে আইনটির খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিডিইআরএম ও নাগরিক উদ্যোগ শুরু থেকেই মানবাধিকার কমিশন এবং আইন কমিশনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিগত এক দশকের দাবির প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল ২০২২-এ জাতীয় সংসদে ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ উত্থাপন করা হয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে তৎকালীন সরকার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রæতি প্রদান করলেও অজ্ঞাত কারণবশতঃ বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খিত এই আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ দ্রæত প্রণয়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। দেশের দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি অস্পৃশ্যতার চর্চার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বৈষম্য, স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকা, আবাসন সংকট, উচ্ছেদ আতঙ্ক ইত্যাদি বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। এই সময়ে দেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা সোচ্চার, তখন আমরা দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীও আমাদের প্রতি চলমান বৈষম্যের অবসান চাই। সমাবেশে উত্থাপিত দাবীসমূহ: ১. ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ সংশোধন করে অবিলম্বে পাস করতে হবে। ২. পূণর্বাসন ছাড়া দলিত কলোনী/ পল্লী উচ্ছেদ করা চলবে না। ৩. জনপরিসরে দলিতদের প্রবেশাধিকারে বাঁধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪. দলিত জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য জরুরীভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৫. সকল পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের চাকুরী স্থায়িত্বকরণসহ সুনির্দিষ্ট পে-স্কেল দিতে হবে। ৬. ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় দলিতদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ৭. দলিতদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে বিভিন্ন পর্যায়ে ‘সংরক্ষণ নীতি’ প্রবর্তন করতে হবে। ৮. পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ৯. ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’- সংবিধানের এই ধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০. ভূমিহীন দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাসজমির বন্দোবস্ত করতে হবে। ১১. সকল পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য মহানগর ও পৌরসভায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১২. স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। |