/ সারাদেশ / লগি-বৈঠা হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা পলাতক হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে: বুলবুল
লগি-বৈঠা হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা পলাতক হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে: বুলবুল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
|
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামীলীগ মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। মৃত লাশের উপরে দাঁড়িয়ে নৃত্য ও উল্লাস করেছিল। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মারা যাওয়া শহীদ সিপনের মুখে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছিল। সেদিন বিশ্ব মানবতা কেঁপে উঠেছিল। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর মানুষ, মানুষরূপী আওয়ামীলীগ হায়েনাদের নরপিশাচ ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডে ঘৃণায় ফেটে পড়েছিল। এই হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।” মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উপর লগি-বৈঠার তান্ডবের প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে জামায়াতে ইসলামী পৌর সদর উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “২০০৬ সালের লগি-বৈঠার এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এদেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়েছিল। আওয়ামীলীগের নৃশংসতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছিল। সে সময় আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের লগি-বৈঠার হত্যাকান্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে জামায়াত ইসলাম মামলা দায়ের করলেও ২০০৮ সালে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন তাদের অপরাধ ক্ষমা করে আওয়ামীলীগকে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল। আর তাই এর দায়ে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের বিচার করতে হবে।” কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বুলবুল বলেন, “জামায়াত ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মধ্য দিয়ে আগামী শত বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল আওয়ামীলীগ। তাই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। আরও ৬ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারের নামে জেলে ও জেলের বাইরে নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামী শক্তি জামায়াত ইসলাম। যারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। যারা দেশের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্তকে বরদাস্ত করে না।” তিনি আরও বলেন, “চলতি বছরের পহেলা আগস্ট জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দলকেই নিষিদ্ধ করেছে দেশের জনগণ। জামায়াত ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আওয়ামীলীগ শাসনামলে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসসহ সারা দেশের সব অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। জামায়াত ইসলাম ও ছাত্র শিবিরের নামে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করা হয়েছিল। দলের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় জামায়াত ইসলামের প্রতিক দাঁড়িপাল্লাকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল, নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। এভাবে একের পর এক চক্রান্ত করেও তারা বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের নাম মুছে ফেলতে পারেনি পারবেওনা।” তিনি আরও বলেন, “চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের ওপর ব্যাপক জুলুম নির্যাতন চালানো হয়। পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের রাজাকারের নাতি-নাতনী বলে গালিগালাজ করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে যেভাবে নিশ্চিহ্ন করতে নানারকম ষড়যন্ত্র ও কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছিল, ঠিক তেমনি ছাত্রদের আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তাদের ওপর গুলি করা হয়। গুলির পরিমাণ যত বৃদ্ধি পেয়েছে ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে শেখ হাসিনার দূর্গে হানা দিয়েছে। ফলে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।” ঢাকা দক্ষিণ মহানগর জামায়াতের আমির বুলবুল বলেন, “আওয়ামীলীগ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। ইসলামি ব্যাংককে ধ্বংস করেছে, জণগণের আমানতকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া গড়ে তোলা হয়েছে। আওয়ামীলীগ অপশক্তি একের পর এক ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ যখন দিগিবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল, ঠিক সেই সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবাবিল ছাত্র-যুবকরা ঐক্যবদ্ধভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজপথে নেমে আসে। এক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উদিত হয় নতুন সূর্য, আসে বাংলাদেশর নতুন স্বাধীনতা।” পৌর জামায়াতের আমীর হাফেজ গোলাম রাব্বানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাময়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আবুজার গিফারী এবং জেলা নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকর, সহকারী সেক্রেটারি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ওমর ফারুক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর জাময়াতের নায়েবে আমির এ্যাডভোকেট শফিক এনায়েত উল্লাহ, পৌর সেক্রেটারী মোক্তার হোসেন, সদর উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কবীর, সদর উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক দূরুল হুদা, পৌর শাখার সহকারী সেক্রেটারি তোহরুল ইসলাম সোহেল, সদর উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি আবদুর রহমানসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। |