/ সারাদেশ / 'বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিলের পানি কৃষিকাজ ও জীব-বৈচিত্র্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে'
জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে খাল পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার
'বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিলের পানি কৃষিকাজ ও জীব-বৈচিত্র্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে'
নতুন বার্তা, রাজশাহী:
|
রাজশাহী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব নির্মূলের অংশ হিসেবে গাঙপাড়া খালে পরিষ্কার অভিযান শুরু করেছে- বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেই লক্ষ্যে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে বায়া ব্রিজ চত্বর এলাকায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খাল পরিষ্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এসময় বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধন করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে এই খালের মুখে ময়লা–আবর্জনা অপসারণের কাজে অংশ নেন প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। এরপর, খাল পরিষ্কার অভিযান উদ্বোধন শেষে জাতীয় যুব দিবস-২০২৪ উদযাপনের অংশ হিসেবে "দক্ষ যুব গড়বে দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ" এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পবা উপজেলা পরিষদে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সরকার অসীম কুমার এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল। সভার শুরুতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এমএমএন জহুরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক এ.টি.এম গোলাম মাহবুব। এসময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহা. যোবায়ের হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো সোহরাব হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদ হাসান প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বিভাগীয় প্রতিনিধি হাসান শেখ ও উদ্যোক্তা রিপা খাতুন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নির্মূলের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতার সুফল সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ার এটি অধিক খরা প্রবণ এলাকা। এই অঞ্চলের খাল-বিলের পানি কৃষি কাজসহ জীব ও বৈচিত্র্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে দেশে খ্যাত, এই নগরীকে ডেঙ্গু ও দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ বায়া ব্রিজ এলাকার গাঙপাড়া খালে সাড়ে ১১ কি.মি. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুয়ারী খাল ও জিয়া খালের অবৈধ দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে এই অভিযানের আওতায় আনা হবে। এর ফলে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৮০ ভাগ খাল দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে। এই খালগুলো নতুন করে যেন ময়লা ফেলা না হয়, এ জন্য সকল জনগণকে সচেতন হতে হবে। এসময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে প্রবাহিত খালগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকায় পানি বারনই নদীতে নামতে পারে না। এর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে আজ গাঙপাড়া খালের মুখে ময়লা–আবর্জনা অপসারণের অভিযান শুরু করা হয়েছে। এখন সবার সহায়তায় ধান-নদী-খাল এই তিনে রাজশাহীর পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। তিনি আরও বলেন, যুব শক্তিই উন্নয়নের উৎস, তারাই জাতির প্রাণ প্রবাহ, উন্নত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যুব দিবস উপলক্ষে যুবদের অনুপ্রাণিত করতে তাদের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মহানগরীর বিভিন্ন খালে পয়োনিষ্কাশনের জন্য অবৈধ স্যুয়ারেজ সংযোগ যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাঙপাড়া খালসহ নগরীর বিভিন্ন খালের খনন, সংস্কারসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। কাটাখালী পৌরসভার (সাবেক) কাউন্সিলর ও পবা দলিল লেখক সমিতির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান দুলাল বলেন, গাঙপাড়া খালটি হচ্ছে বারনই নদীর ধমনি। এই খালের মাধ্যমে বারনই নদীতে পানি প্রবাহিত হয় কিন্তু এলাকাবাসীর ময়লা ফেলা ও সঠিকভাবে পরিষ্কার না করাসহ দখল দূষণে খালটি মৃতপ্রায়। বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে আজ আমরা পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়েছি। খাল পরিচ্ছন্ন রাখলে আমরাও ভালো থাকবো। এই অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবো। এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বিভাগীয় প্রতিনিধি হাসান শেখ জানান, এই এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন খাল উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে। জনসেবার মানসিকতা নিয়ে এই মহৎ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। এই অগ্রযাত্রা থেকে আমি প্রত্যাশা করবো এটি যেন শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযানেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্থায়ী পরিকল্পনা করে খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করা হয়। বিডি ক্লিন রাজশাহীর জেলা সমন্বয়ক শাহদাত হোসেন বলেন, 'পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে' এই শ্লোগানে আজ আমাদের সংগঠনের শতাধিক কর্মী সরাসরি অংশ নিয়ে খাল পরিচ্ছন্ন করছে। আমি সবাইকে বলতে চাই, একা নয় এক হয়ে গড়ে তুলতে হবে পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত রাজশাহী। বায়া ব্রীজ এলাকায় খাল পরিষ্কার করছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের সদস্য মাহমুদুল হাসান সান। তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই এই কাজ করে অনেক আনন্দ পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি এলাকাবাসীকে খালের মধ্যে ময়লা না ফেলারও অনুরোধ জানান। খাল পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মুখলেছুর রহমানসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যবৃন্দ, সোনালী স্বপ্ন সংস্থা পবা উপজেলার সভাপতি মো. আব্দুল আলীম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের সদস্যসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ। |