/ জাতীয় / মমতার বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া
মমতার বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
বাংলাদেশের সামপ্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাব করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রস্তাব জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর আর্জি জানাক ভারত সরকার। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব লিখিত ভাবে ভারত সরকারকে পাঠানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী। যদি তার কোনো অসুবিধা থাকে, তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিন। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকার চুপ করে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে তার সরকার তা সহ্য করবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, আমাদের লোকজনকে ফিরিয়ে আনতে চাই। এক বেলা খাবো আর এক বেলা রুটি ভাগ করে খাবো। আমাদের পরিবার, সম্পত্তি এবং প্রিয় মানুষেরা বাংলাদেশে রয়েছেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নিয়ে যে অবস্থান নেবে, আমরা দল ও সরকার হিসেবে তা গ্রহণ করবো। তবে তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি। বাংলাদেশে পরিবর্তনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সনাতনী হিন্দু সন্ন্যাসীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননারও অভিযোগ উঠেছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আগ্রাসী আন্দোলন চলছে। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোও সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। ভারত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা বললেও বাংলাদেশ সরকার ভারতের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগ করেছে। মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ: ফখরুল বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ মন্তব্য করে অবিলম্বে এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাতে লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সকালে কয়েকটি পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখলাম যে, ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের, এটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেতৃবর্গের যে দৃষ্টিভঙ্গি- তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। এই ধরনের কোনো চিন্তা করাও তাদের উচিত হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সমপ্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছে, এদেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এই ধরনের চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াবে। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ক্ষুণ্ন্ন হওয়া বা বিপন্ন হওয়ার যে অলীক কাহিনী ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বারবার বলেছি, এখানে ভারতের সাংবাদিকরা এসেছিলেন তারাও দেখেছেন, পশ্চিম বাংলা ও ভারতের অনেক নামকরা সাংবাদিক এসেছিলেন তারা দেখেছেন- বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। অথচ ভারতবর্ষের মিডিয়া ও তাদের নেতৃবর্গ যেভাবে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যাকে প্রচার করছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি দিচ্ছেন তা কোনোমতেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, অতি সমপ্রতি ইসকনকে (বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) নিয়ে যে এখানে (বাংলাদেশে) নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষ কখনই গ্রহণ করবে না। এটা খুব পরিষ্কার যে, ইসকনের সামপ্রতিক ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক, রহস্যজনক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। |