/ সারাদেশ / তিনি যুক্তরাজ্যে, অথচ তাকেসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা ছিনতাই মামলা
তিনি যুক্তরাজ্যে, অথচ তাকেসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা ছিনতাই মামলা
সিলেট ব্যুারো:
|
যুক্তরাজ্য থেকে তিনি দেশে এসেছিলেন ৫ ফেব্রুয়ারি। আর ফিরে গেলেন ২৪ মে। অথচ তাকে প্রধান আসামী করে তিনজনের বিরুদ্ধে গত ৩০ অক্টােবর আদালতে দায়ের করা হয় দ্রুত বিচার আইনে ছিনতাই মামলা। আদালতের আদেশে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। হাস্যকর এবং অবাকের বিষয় হলাে, যাকে এ মামলার প্রধান স্বাক্ষী করা হয়েছে তিনি এ মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর যিনি এ মামলা করেছেন তিনিও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মােহাম্মদ জিলু হক। খােঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই জিলু হকের কাছে পাওনা টাকার বিপরীতে গত জুন মাসে চেক ডিজওনার মামলা করার পর ব্যক্তি আক্রােশে তিনি তিনজনের বিরুদ্ধে উল্লেখিত মিথ্যে মামলা দায়ের করেন। গত ৩০ অক্টােবর অতিরিক্ত চীফ মেট্টােপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত-৬ এ নগরীর চৌকিদেখির বাসিন্দা মােহাম্মদ জিলু হক অভিযােগ করেন, ২৮ অক্টােবর সকালে তিনি কাজিরবাজার থেকে আসার পথে চৌকিদেখি-আম্বরখানা মুখে একই এলাকার হুমায়ূন কবির, লায়েক আহমদ ও মাে. ইমন আহমদসহ কয়েকজন তার উপর হামলার পর গাড়ি ভাংচুর করে চাকুর ভয় দেখিয়ে ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে ফােন করা হলে স্বাক্ষীরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। তিনি আরাে অভিযােগ করেন, থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় আদালতের শরনাপন্ন হন। পরে ১০ নভেম্বর আদালতের বিচারক আবদুল মােমেন মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এয়ারপাের্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরবর্তি সময়ে পুলিশ আসামীদের বাড়ি গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালানাের পর শুরু হয় হৈ চৈ। যেখানে এক নম্বর আসামী দেশেই নেই, সেখানে কিভাবে এ ধরণের একটি দ্রুত বিচার আইনের মিথ্যে মামলা দায়ের করা হলাে-তা নিয়ে এলাকায় ক্ষােভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এ প্রতিবেদকের নজরে আসলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই মিথ্যে মামলার আসল রহস্য। এমনকি মামলার প্রধান স্বাক্ষী কুমকুম আলমগীরও স্বীকার করেন, তিনি এ ছিনতাই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে জায়গা বিক্রির টাকা লেনদেন সম্পর্কে একটি ঝামেলার কথা জানেন। জানা যায়, উল্লেখিত মামলার এক নম্বর আসামী হুমায়ূন কবির গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে আসার পর এ মামলার বাদি মােহাম্মদ জিলু হকের কাছে গত ১৭ এপ্রিল একটি বাসা বিক্রি করেন। এসময় জিলু হক সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারায় হুমায়ূন কবিরকে ২১ এপ্রিলের সাত লাখ ২০ হাজার টাকার ইসলামি ব্যাংকের একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তি সময়ে টাকা প্রদানের তাগাদা দেয়া হলে জিলু হক টালবাহানা শুরু করেন। এ নিয়ে যাকে প্রধান স্বাক্ষী করা হয়েছে সেই কুমকুম আলমগীরের দাড়িয়াপাড়ার বাসায় কয়েক দফা বৈঠকও হয়। কিন্তু পাওয়া টাকা পরিশােধ করেন নি জিলু হক। এতে করে একপর্যায়ে মামলার সিদ্ধান্ত নেন হুমায়ূন কবির। কিন্তু ততােক্ষণে জরুরী কাজে যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ার সময় হলে মামলাটি পরিচালনার জন্য তার পরিচিত লায়েক আহমদকে আমমােক্তার নিয়ােগ করেন। পরে গত ২৪ মে হুমায়ূন কবির যুক্তরাজ্যে চলে যান। আর তার আমমােক্তার মাে. লায়েক আহমদ ২৬ জুন অতিরিক্ত চীফ মেট্টােপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জিলু হকের বিরুদ্ধে এনআই এক্ট-এর ১৩৮ ধারায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার সূত্রপাতে সরকার পতনের পর আক্রাশে জিলু হক তাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যে মামলা দায়ের করেন। যােগাযােগ করা হলে উক্ত মামলার প্রধান স্বাক্ষী কুমকুম আলমগীর বলেন, 'জিলু হকের দায়ের করা ছিনতাই মামলা সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে জায়গা এবং হুমায়ূনের টাকা পাওনা সম্পর্কে আমি অবগত। আমার বাসাতেই জিলু ও হুমায়ূন এ নিয়ে কয়েকবার বৈঠক করেছেন।' তিনি আরাে বলেন, 'জিলু আমাকে বলেছিল টাকা-পয়সা নিয়ে কি মামলা করবে। কিন্তু ছিনতাই মামলায় আমাকে স্বাক্ষী করবে তা আমি জানতাম না।' হুমায়ূন কবির যুক্তরাজ্যে থেকেও কিভাবে ছিনতাই করলেন-জানতে মামলাটির বাদি জিলু হকের সাথে কথা বলতে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। দৃষ্টি আকর্শন করা হলে এয়ারপাের্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, মামলাটির প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় হুমায়ূন আহমেদ বাদী জিলু হকের কাছে বাসা বিক্রি বাবদ টাকা পাবেন। এ নিয়ে তার পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। আর এই মামলার পরই জিলু হক তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। তিনি আরো বলেন, তদন্তে এও জানা গেছে যে ঘটনার সময় মামলার প্রধান আসামি দেশে ছিলেন না। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ধরণের মিথ্যে মামলা সম্পর্কে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হুমায়ুন কবীর বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। |