/ বিশেষ / পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ চান ৮৯.৫ শতাংশ মানুষ
পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ চান ৮৯.৫ শতাংশ মানুষ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ চান ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক এক জনমত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কমিশন মঙ্গলবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭.৯ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৪.৯ শতাংশ। ভুয়া বা গায়েবি মামলার ভয়ভীতির মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চান ৮১.৯ শতাংশ মানুষ। মৃত ব্যক্তি, অনিবাসী বা নিরপরাধ ব্যক্তির নামে অভিযোগ দায়েরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চান ৭৪.৫ শতাংশ। তবে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা সংস্কার করে থানার ওসির কাছে প্রাক-যাচাইয়ের আইনগত ক্ষমতা প্রদান সমর্থন করেছেন ৬৯.২ শতাংশ মানুষ। জরিপে ২৪ হাজার ৪৪২ জন অংশ নেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৭ ভাগ। উত্তরদাতার মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৩ হাজার ১৯১ জন বা ৯৫ শতাংশ। নারী ছিলেন ১ হাজার ২৫১ জন বা ৫ শতাংশ। পুলিশ সংস্কার কমিশনের ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক অনলাইন জনমত জরিপের ফল সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট ২৪ হাজার ৪৪২ জন মতামত দিয়েছেন। জরিপে সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ চান- জানতে চাওয়া হলে সর্বাধিক মতামত পড়েছে দুটি ক্ষেত্রে। প্রথম অবস্থানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও দ্বিতীয় অবস্থানে আইনের প্রতি অনুগত-নিরপেক্ষ পুলিশ। এ ছাড়া তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ। ভুয়া মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার-ভুয়া বা গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান শতকরা ৯৫ ভাগ উত্তরদাতা। ভুয়া বা গায়েবি মামলার ভয়ভীতির মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চান ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি, অনিবাসী বা নিরপরাধ ব্যক্তির নামে অভিযোগ দায়েরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চান ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা সংস্কার করে থানার ওসির কাছে প্রাক-যাচাইয়ের আইনগত ক্ষমতা প্রদান সমর্থন করেছেন ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। বিক্ষোভ-বিরোধী মত দমনে বল প্রয়োগ-বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ (প্রায়) উত্তরদাতা শান্তি চান। অন্যদিকে ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্ম-মূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে সমর্থন করেছেন ৬৮ দশমিক ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার-ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৫৪ ধারায় পুলিশকে প্রদত্ত বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের ক্ষমতাকে একটি সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। তবে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা তা মনে করেন না বলে মত দিয়েছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ-ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন-সংস্কার চান ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা নারী আসামিকে যথেষ্ট শালিনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষে মত দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘেরাটোপ ব্যবস্থা সংবলিত আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থাকার পক্ষে, দ্বিতীয় সর্বাধিক ৮০ দশমিক ২ শতাংশ মতামত এসেছে। বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি-তল্লাশির সময় পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা সার্চ ওয়ারেন্ট তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারে একটি কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে সর্বাধিক ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরও দুটি বিষয়ে তারা ব্যবস্থা চান, যেমন অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ পোশাক পরিধানের ওপর জোর দিয়েছেন ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা এবং রাতেরবেলায় গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি অপরিহার্য চান ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ-পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা একটি স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কোনো সংগঠন নেই। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর ১৮ নম্বর ধারায় পুলিশ তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তদন্তে কমিশনকে নিবৃত রাখা হয়েছে। জরিপে বাকি ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা সমান দুভাগে বিভক্ত হয়েছেন। এক অংশ মনে করেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্থায়ী তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। অপর অংশ মানবাধিকার কমিশনকেই আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার্পণের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। পুলিশ কমিশন বা পুলিশ ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা-পুলিশকে জবাবদিহি ও বিভিন্ন প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের পক্ষে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। অন্যদিকে, সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় পুলিশের জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশন বা পুলিশ ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা কোনটি যুগোপযোগী ও জনস্বার্থে অধিক ফলপ্রসূ ও কাম্য তা বিবেচনার পূর্বে পুলিশ কমিশন গঠন, ক্ষমতা ও এখতিয়ার কী হবে এবং কীভাবে বাস্তবায়নযোগ্য তা বিবেচনা ও ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে অনুরূপ কমিশন গঠনের অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই-বাচাই করে এ কমিশন হতে একটি মতামত প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ৮ই আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে গত ৩১শে অক্টোবর থেকে ‘কেমন পুলিশ চাই’ নিয়ে একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। |