/ জাতীয় / সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে
টিআইবির সংবাদ সম্মেলন
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগত অনুমোদন হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে জনস্বার্থের প্রতিফলন নেই। বরং মানুষের মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে।চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হবে। এক কথায় বলা যায়, এটি জগাখিচুড়ি অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ নিয়ে সংস্থাটির পর্যালোচনা ও সুপারিশ জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম এবং টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন-সাইবার, ইন্টারনেট, ডিজিটাল সব মিলিয়ে জগাখিচুড়ি করেছে। সাইবার সুরক্ষার নাম হলেও আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের এক ধরনের পুনরাবৃত্তি এটি। বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল অধিকারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পুরো অধ্যাদেশে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং মতপ্রকাশকে খর্ব করার প্রক্রিয়া দেখা যায়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জানান, এই অধ্যাদেশে বিগত সরকারের বয়ানের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আগের দুটি আইনেও বলা হয়েছিল, তা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাবে না। এবারও সেই একই কথা শোনা গেল; কিন্তু অনুমোদিত অধ্যাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। এভাবে আইন হয়ে গেলে তা সংবাদমাধ্যমসহ সব মানুষের তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ও সংগঠনের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে পড়বে। সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারাগুলো ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেন। এই বিশ্লেষক জানান, অধ্যাদেশে সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ও পুলিশকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ আমলের সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে অনেক শব্দের ব্যাখ্যা নেই, ভাষা দুর্বোধ্য। এতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। ধারা ৮, ২৫, ২৬, ৩৫ আগের মতো নিবর্তনমূলক। এ ধরনের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও দেশের বিদ্যমান দক্ষতা বিবেচনায় না নিয়ে, এমনকি অংশীজনদের কেন সম্পৃক্ত করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এছাড়া নামটি সাইবার সুরক্ষা না রেখে কম্পিউটার বা সাইবার অপরাধ অধ্যাদেশ রাখার প্রস্তাব করেছেন। টিআইবি জানায়, অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় আগের বিতর্কিত দুটি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে। বাকস্বাধীনতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। এখানে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং মতপ্রকাশকে খর্ব করার প্রক্রিয়া দেখা যায়। যেভাবে অধ্যাদেশটি প্রণীত হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি আছে। মোটেই সময় দেওয়া হয়নি আলোচনার জন্য। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা করিনি। টিআইবি আরও জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৭ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ১ ডিসেম্বর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া প্রকাশ করে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২৪ ডিসেম্বর দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনা লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উস্থাপিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার ছিল, সাইবার আইন বাতিল হবে, যা তারা করেছেন। সবার অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আইন হবে, সে কথাও ছিল। কিন্তু সেখান থেকে কেন সরে এলো, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তার ধারণা, এ ক্ষেত্রেও আমলানির্ভরতা ছিল। তিনি জানান, অধ্যাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাখ্যা থাকতে হবে। পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক মানুষের সমঅধিকার ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিষয় থাকতে হবে। সার্বিকভাবে ঢেলে সাজানোর আগে অধ্যাদেশটি গ্রহণযোগ্য নয়। এতে জনস্বার্থের প্রতিফলন নেই। বরং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে। তিনি আরও জানান, এ আইনের দরকার আছে; এ সংক্রান্ত একাধিক আইনও হতে পারে। কিন্তু আইনটি (অধ্যাদেশ) তড়িঘড়ি করে করা হলো কেন? বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে অনুমোদন হওয়ায় তারা খুব হতবাক হয়েছেন। এ বিশ্লেষণ সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকার যেন এটিকে বিবেচনায় নিয়ে সবার অভিমত নিয়ে আইন করে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগত অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়া সরকারের কোনো ওয়েবসাইটে থাকবে না কেন? যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে হচ্ছে, তাদের দায়িত্ব ছিল এটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। এটা নিয়ে লুকোছাপা করার কিছু নেই, উন্মুক্ত করা উচিত। দেশের আইন মানুষের জন্য। এটা নিয়ে লুকোচুরি কেন হবে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুঃখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফেতখারুজ্জামান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় আইসিটি বিভাগ থেকে গতকাল সকাল ৯টায় একটি বৈঠকের তিনি ডাক পেয়েছেন। এটা লোক দেখানো বিষয়; যদি সেখানে আমাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে সত্যিকার অর্থেই আগ্রহী হতো, তাহলে আগের দিন সন্ধ্যায় ইমেইল করে পরদিন সকাল ৯টায় যেতে বলত না। এটা পেশাগত আচরণ হতে পারে না। এরপরও তিনি সাধুবাদ জানান। ভবিষ্যতে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলে তিনি যাবেন বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের। |